'ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে গেরিলা যুদ্ধ বেশি হয়েছে'

ডা. মাহফুজুর রহমান
ডা. মাহফুজুর রহমান

দেশের জন্য লড়েছেন মাহফুজুর রহমান। নেতৃত্ব দিয়েছেন গেরিলা যুদ্ধে। যুদ্ধের পরবর্তী দশকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত হলো বেশ কিছু বই। কিন্তু সেগুলোতে চট্টগ্রামের লড়াইয়ের চিত্র তেমনভাবে না পেয়ে হতাশ হলেন। তবে হাল ছাড়লেন না। শুরু করলেন অন্য রকম এক যুদ্ধ।
১৯৮০ সালে ১০ জন সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মাহফুজুর রহমান লেগে গেলেন তথ্য সংগ্রহের যুদ্ধে। ১০ বছর ধরে চলল এ কাজ। ফলাফল ৭৮৫ পৃষ্ঠার বৃহৎ বই বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম।
১৯৯৩ সালে এ বই প্রকাশিত হওয়ার পর ইতিমধ্যে কয়েটিক সংস্করণ শেষ হয়েছে। বইটিতে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্যন্ত চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে বইটি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হচ্ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বুঝতে এ বই কীভাবে সহায়তা করবে? এমন প্রশ্ন করি তাঁকে। তিনি বলেন, একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক। অনেকেই একাত্তরে ঢাকায় ঘটে যাওয়া গেরিলা যুদ্ধ সম্পর্কে জানে। তবে তখন ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে চট্টগ্রামে, এ তথ্য অনেকের জানা নেই। এখানে কমপক্ষে ১৪-১৫টি গেরিলা দল কাজ একসঙ্গে কাজ করেছে।
কী প্রক্রিয়ায় এ বই রচিত হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে সময় ফহিম উদ্দিন, আবু সাইদ সরর্দার, মো. করিম, আবুল কাশেম, সাখাওয়াত হোসেন মজনু, রাখাল চন্দ্র বণিক, ইনামুল হক দানু, নুরুল আলম, সিরাজুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, অরুণ কান্তি দাশ, জাবিউল হোসেন, রাইসুল হক বাহার, ইমতিয়াজ উদ্দিন পাশাসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেন। সেসব তথ্যের যথার্থতা আবার যাঁচাই করতাম আমরা কয়েকজন। এভাবে ১০ বছর কাজ চলল।
সাক্ষাৎকার ছাড়াও সে সময়ের পত্রিকার সংবাদ, ছবি, ঢাকার জাতীয় গণগ্রন্থাগার ও আর্কাইভের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে বইটিতে।’
বইটি পড়ে সে সময়ের চট্টগ্রামকে িক বোঝা সম্ভব?
মাহফুজ বলেন, ‘এটা কোনো সাহিত্যকীর্তি নয়। একটা সময়ের ধারাবিবরণী মাত্র। বইটি পড়ে পাঠক অন্তত একটা সময়কে ধরতে পারবেন, বুঝতে পারবেন।’
১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে বিএলএফের একটি গেরিলা দলের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাহফুজ। তাঁর দলে ছিলেন চারজন গেরিলা। প্রত্যেকের ওপর নির্দেশ ছিল, প্রতিদিন কোনো না কোনো অভিযান চালাতেই হবে। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর—এই পাঁচ মাস মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিদিন চট্টগ্রামের নানা স্থানে সফল অভিযান চালিয়েছেন। গেরিলারা নানা লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যেতেন। তাঁদের কৌশল ছিল ‘হিট অ্যান্ড রান’।
সে সময় এক দিনে ১০০টি অভিযানও একসঙ্গে চালানো হয়েছে। নৌ কমান্ডোদের দিয়ে জাহাজ ধ্বংস করার অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপটও’ সফল হয়েছে সে সময়।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সেই উত্তাল সময়ের ইতিহাস রচনা করে চলেছেন মাহফুজ। মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার ধারণ করে তুলে দিচ্ছেন ইউটিউবে। এ পর্যন্ত www.mjgobeshona.org এই ঠিকানায় হাজার খানেক ভিডিও আপলোড করেছেন। তাঁর কথা, আজ থেকে ২০ বছর পর অনেক মুক্তিযোদ্ধাই বেঁচে থাকবেন না। তখন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এসব সাক্ষাৎকার সবার কাজে লাগবে।