তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন!

মাথা উকুনেরা কামড়ে নাকাল হতে হয় অনেককে। ছবি: সংগৃহীত
মাথা উকুনেরা কামড়ে নাকাল হতে হয় অনেককে। ছবি: সংগৃহীত

শেষমেশ যুদ্ধ ঘোষণা না দিয়ে কিন্তু উপায় রইবে না। 

দ্রিমিদ্রিমি দামামা বাজিয়ে, দুন্দুভিতে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আওয়াজ তুলে যুদ্ধ ঘোষণা করতেই হবে। নইলে যে রক্ষা নেই, কেউ দেবে না বিন্দু আশা, না দেবে ভরসা! তারা যে অতীব মারাত্মক।

ঘোষিত হবেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ!
না, পানির জন্য নয়, খনির জন্য নয়, অর্ধেক রাজত্ব বা রাজকন্যা জন্য?
না, তাও নয়।

তবে কী? কিসের জন্য!
কী আর...উকুন।
জি, উকুন। ঠিক পড়েছেন উকুনই।

শকুনি মামারাও বহু আগেই গুটিবসন্তের সঙ্গে দুনিয়া থেকে বিতাড়িত হয়েছেন।

রয়ে গেছে উকুনি মামাগণ। যুগে যুগে অতিকায় হস্তী লোপ পেয়েছে তো কী হয়েছে, তেলাপোকা সাহেবরা তো বহাল তবিয়তেই তাদের দিন গুজরান করছেন। শকুনি মামা কার কী ক্ষতি করেছেন, তা আমার জানা নেই। কিন্তু উকুনি মামাদের চক্রান্তে একটা পুরো প্রজন্ম যে মেধাহীন হওয়ার পথে ধাবমান, সহজেই তা অনুমেয়। উকুন সাহেবদের (কেউ আবার উকিল সাহেব পড়বেন না) পাঁয়তারা দেখে অন্তত তা-ই মনে হওয়াটা স্বাভাবিক।

ইতিহাস বিকৃতির কালে তাদের সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, মানবসভ্যতার শুরুর দিকে এসব অতিক্ষুদ্র, হায়াহীন, মায়াহীন দ্রুত বংশবিস্তারক্ষম উকুনের বিচরণ ছিল যত আদিম বর্বর ও বন্য প্রাণীর লোমশ শরীরে। সেখান থেকে এক লাফে বহু প্রজাতিকে পদোন্নতিবঞ্চিত করে নিজেদের পদোন্নতি ঘটিয়ে জাঁকিয়ে বসে বন্য মানুষের মাথায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সেই বন্য বর্বর মানুষ লোকালয়ে ঢোকার সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে কিছু আস্ত উর্বরা কপোত-কপোতী উকুনি দম্পতি ভদ্র সমাজব্যবস্থায় প্রবেশ ঘটিয়ে ফেলে। যেখানে বন্য বর্বর সেসব ভণ্ড লেবাসধারী মনুষ্যকেই সমাজে চিহ্নিতকরণ, বহিষ্কারকরণ, অপুরুষীকরণ করার সুযোগ নেই, সেখানে উকুনরা তো কোনো ছারপোকা। কাজেই উকুনের সপরিবার উপস্থিতি কবুল করেই মানবজাতিকে বেঁচে থাকতে হয়েছে, আজও হচ্ছে এবং দূরের ভবিষ্যতেও হবে।

এ তো আমাদের জাতীয় সমস্যা, আমাদের সন্তানদের, পরবর্তী প্রজন্মের মাথা থেকে উকুনিরা যেভাবে কংস মামার মতো সব বুদ্ধি শুষে নিচ্ছে, এভাবে তারা পেটপুরে রক্ত খাওয়া অব্যাহত রাখলে আর বেশি দেরি নেই, যেদিন আমরা একটি মগজশূন্য শুধু মোটা মাথাসর্বস্বই বুদ্ধির ঢেঁকি একটি জাতিতে পরিণত হব। তাই এর সমাধান শুধু ঘরে নয়, ঘরের বাইরে নয়, জাতীয়ভাবেই এই উকুনকে শত্রু ঘোষণা করা হোক। তাদের রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই নয়তো বুদ্ধিহীন হওয়ার পরে সে সুযোগ আর কোনো দিনই আসবে না। সময় এসেছে উকুনের সব পাঁয়তারা ধ্বংস করতে যুদ্ধ ঘোষণা করি, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

উকুনপুরাণ
ও বাবু, শুনলেম তুমি নাকি হয়েছ কাবু!
ছেড়েই দিয়েছ কি খাওয়া সাগু?
না হয় যদি খাওয়াপরা সাফসুতরা ঠিকমতো
তোমার লাভটা কী গো, করে এত ঠাটবাট
একদা হবেই বোকা পাঁঠা, আজ হওনা যতই ঘাগু!

বললেটা কী! এমা! মাথায় বাস করে উকুন!
এর থেকে তো ঢের ভালো বুনো শকুন!
হবে তুমি বুদ্ধির ঢেঁকি; চাইছ কি টিচার শুধু বকুন
মাথায় উকুন, দেখো বন্ধুরা শুনলে হবে হেসেই খুন।

যার মাথায় এ যুগেও উকুনেরা করছে বসবাস;
মনের সুখে মাথায় করে ছানাপোনার চাষ,
ওরেব্বাস! মাপ নেই তার আধা ছটাক
সে মাথাটির হবে যে হবেই সাড়ে সর্বনাশ!

উকুনের সঙ্গে মেটাও চটজলদি, যা আছে হিসাব-নিকাশ
মাথার ঘিলু খেয়েই তারা নইলে হবে একেক আস্ত রাজহাঁস
আহা! তুমি বুদ্ধু, হবে মেধাহীন ফাঁপা বাঁশ ঠাস ঠাস।

(উৎসর্গ: যারা মাথায় উকুন নিয়েও জীবন যাপন করছেন তাঁদের।)

*মেহেদী হাসান তামিম: লেখক, গল্পকার