বর্ষায় বাইক্কাবিল

বর্ষায় বাইক্কাবিল অসাধারণ রূপ ধারণ করে। ছবি: মো. ফখরুল ইসলাম
বর্ষায় বাইক্কাবিল অসাধারণ রূপ ধারণ করে। ছবি: মো. ফখরুল ইসলাম

বাংলাদেশ এমনিতেই অনেক সুন্দর। আর বর্ষায় তা হয়ে ওঠে আরও অপরূপ। বর্ষায় এর মাঠঘাট, হাওর-বাঁওড়, বন-জঙ্গল, নদীনালা সবই হয়ে ওঠে চোখজুড়ানো, মনকাড়া। এই ভূখণ্ডে বর্ষা মানেই গভীর সবুজ, বুকভরে শুদ্ধ নিশ্বাস, আর্দ্র বাতাস আর এক রাশ সজীবতা। সকাল, দুপুর, বিকেলে কিংবা মাঝরাতে অঝোর ধারায় ঝরে পড়া বৃষ্টি আমাদের অনেককেই নিমেষেই করে তোলে উতলা, আবেগতাড়িত। কেউ কেউ আবার বৃষ্টির পরশ নেওয়ার জন্য নেমে পড়েন অঝোর ধারায়, দাবড়িয়ে বেড়ান দামাল কিশোর-কিশোরীদের মতো। যাঁরা আরও একটু এগিয়ে তাঁরা এই বর্ষার রূপে অধীর হওয়ার জন্য দল বেঁধে অথবা কখনো একাই বেরিয়ে পড়েন দূরে কোথাও যেতে। এমনই দূরের এক জায়গা শ্রীমঙ্গলের ‘বাইক্কাবিল’।

বাইক্কাবিলের নৈসর্গিক রূপ দেখে পুলকিত হবেন যে কেউ। ছবি: মো. ফখরুল ইসলাম
বাইক্কাবিলের নৈসর্গিক রূপ দেখে পুলকিত হবেন যে কেউ। ছবি: মো. ফখরুল ইসলাম

চলতি বর্ষায় বাইক্কাবিল অসাধারণ রূপ ধারণ করেছে। নানান বনজ উদ্ভিদ আর প্রাণীর সমাহারে মাতোয়ারা বাইক্কাবিল। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে ছোট-বড় পাখপাখালির অবিরাম গুঞ্জন আর বিলের পানির কুলকুল ধ্বনি, যা নিমেষেই মনে, শরীরে এনে দেবে অনাবিল প্রশান্তি। শুধু তা-ই নয়, বাড়তি পাওনা হিসেবে এখানেই রয়েছে ‘রাতারগুল’। অগণিত হিজল-করছগাছ হাঁটু-কোমরপানিতে ডুবে নিথর দাঁড়িয়ে আছে। নির্মল স্বচ্ছ জলে রোদ-ছায়ার এক ব্যঞ্জনাময় জল-আলপনা এঁকে চলেছে সুয্যি মামা। যে কেউ বিস্ময়ে পুলকিত হবেন এমন নৈসর্গিক রূপ দেখে। বিলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৩/৪ তলা উচ্চতার একটি অবজারভেশন টাওয়ার, যেখান থেকে পুরো বিলের সৌন্দর্য প্রাণ ভরে উপভোগ করা যায়।

নানান বনজ উদ্ভিদ আর প্রাণীর সমাহারে মাতোয়ারা বাইক্কাবিল। ছবি: মো. ফখরুল ইসলাম
নানান বনজ উদ্ভিদ আর প্রাণীর সমাহারে মাতোয়ারা বাইক্কাবিল। ছবি: মো. ফখরুল ইসলাম

দৈনন্দিন ব্যস্ততা থাকবেই। এর মধ্য থেকেই একটু সময় করে ঘুরে আসুন রূপের রানি ‘বাইক্কাবিল’-এ । ঢাকা থেকে যাওয়া খুব সহজ। রাতের সিলেটগামী ট্রেন অথবা নাইট কোচে করে যাওয়া যাবে। মাইক্রোবাস শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে নেমে একটা সিএনজিচালিত অটো নিয়ে সোজা বাইক্কাবিলে যাওয়া যায়। ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নিতে পারে, তবে ফেরার সময়ের জন্য চালককে বলে রাখলে তিনি এসে আবার নিয়ে যাবেন। বাইক্কাবিল এলাকায় কোনো খাবারের দোকান নেই, তাই ট্রেনে বা বাস থেকে নেমেই সকালের নাশতা স্থানীয় রেস্তোরাঁয় সেরে নেওয়ায়ই ভালো। আর দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হবে না। সন্ধ্যার আগে স্টেশনে রাতের ট্রেন বা বাস ধরা যাবে। তবে যাঁরা এক দিনের বেশি শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করবেন, তাঁরা বাইক্কাবিল দেখার পর চা-বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং কমলগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন মাধবপুর লেক দেখে আসতে পারেন। শ্রীমঙ্গলের সেভেন লেয়ার চা ও কাঁচা মরিচের ঝাল চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না যেন। রাতে থাকার জন্য বেশ কিছু কটেজ ও রিসোর্ট রয়েছে সেখানে।