রেলওয়ে সমাচার

রাতে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। ১২ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাবিব রহমান
রাতে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। ১২ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাবিব রহমান

চাকরির সুবাদে ইদানীং ট্রেনেই যাতায়াত করছি। ঢাকার কমলাপুর থেকে যাই বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। বাংলাদেশের ট্রেন সমাচার আর কী বলব? এ তো সবারই জানা। তারপরও কিছু বলতে বা লিখতে উসখুস করছে মন!

গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার কমলাপুরে নোয়াখালী এক্সপ্রেসে উঠে বসলাম। গন্তব্য কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন। মাত্র তিন বগির একটি ট্রেন। আমার অফিস সন্ধ্যা সাতটায় ছুটি হয়। নয়াপল্টন থেকে ২০ মিনিটের হাঁটার পথ। অফিস থেকে বের হতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পার হয়ে যায়। মোটামুটি ৪০ মিনিটের মধ্যে, অর্থাৎ ৭টা ৪০ মিনিটে আমি রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে যাই। সেদিন পৌনে আটটায় ট্রেনে উঠলাম। ১০ মিনিটের মধ্যে ট্রেনটি পূর্ণ হয়ে গেল। তিল ধারণের জায়গা নেই। অনেক যাত্রী জানালা দিয়েই উঠলেন, অনেকেই ব্যর্থ হলেন। পাশে বসা যাত্রী জানালেন, দেশের সবচেয়ে লোকাল ট্রেন এটি। লোকাল হলেও আমার কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ে বসে থাকাও দায়। রাত ৮টা ২০ নাগাদ ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর থেকে ছেড়ে দিল। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মাথায় তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাল। এ সময় অপেক্ষমাণ বিপুলসংখ্যক যাত্রী ওই প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে ওঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন। জানালার পাশে বসে এসব দৃশ্য দেখে নানা ভাবনা মনে এল। কিছু প্রশ্নও মনে জাগল।


১.
এসব যাত্রী প্রচণ্ড হতাশ হয়ে এখন নিশ্চয়ই বাস ধরার জন্য চেষ্টা চালাবেন। আবার সেই চিরচেনা জ্যাম আর ভিড় একমাত্র অবলম্বন হবে তাঁদের। এই যাত্রীরা কি আর কোনো দিন এই ট্রেনের জন্য আসবেন? আবার ভাবি, ট্রেনভ্রমণ অনেক আরামদায়ক, তাঁরা হয়তো আবার আসবেন।

২.
তাহলে বাংলাদেশ রেলওয়ে কেন লোকসান করে? এ জন্যই হয়তো। যাত্রী হারালে লোকসান তো হবেই। কিন্তু যাত্রী তো দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যাত্রীসেবার মান বাড়ানো গেলে রেল হয়তো লোকসান করত না।

৩.
ট্রেনে আরও চার–পাঁচটি বগি থাকলে এমন কী অসুবিধা হতো? ইঞ্জিনের তেল কি খুব বেশি খরচ হতো? বাংলাদেশ রেলওয়ে কি এতই বোকা? শুধু তিন–চারটি বগি দিয়ে একটি ট্রেন পরিচালনা করা কতটুকু যৌক্তিক?

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের ভিড়। ১২ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাবিব রহমান
তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের ভিড়। ১২ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাবিব রহমান

আমার ভাবনাগুলো আমাকে জড়তায় আচ্ছন্ন করতেই পাশে বসা যাত্রী বলে উঠলেন, ‘বাসের লোকজন ট্রেনের লোকজনকে ঘুষ দেয়, যাতে যাত্রীরা ট্রেনবিমুখ হয়।’ কে জানে, হয়তো এমন নাও হতে পারে। হায়রে! আমরা কবে মানুষ হব?

আমি আমার গন্তব্য বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে নেমে যাই। নোয়াখালী এক্সপ্রেস হয়তো সঠিক সময়েই নোয়াখালী পৌঁছাবে, যাত্রীরা যাবে ভিন্ন পথে। এভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রী হারাবে আর লোকসান গুনতেই থাকবে!