কানাডায় ছোট্ট ভ্রমণ

কানাডার বোল্ড ক্যাসল। ছবি: ঊর্মি লোহানী
কানাডার বোল্ড ক্যাসল। ছবি: ঊর্মি লোহানী

কানাডার একটা ভিসা ছিল আমার, যেটা ব্যবহার না করলে পরবর্তী সময়ে ভিসা না পাওয়ার আশঙ্কা থেকেই কানাডা ভ্রমণের সিদ্ধান্ত। এপ্রিলে কম দামে পাওয়ার জন্য মের শেষের টিকিট কেটে ফেললাম। ৩১ মে বাংলাদেশ বিমানে লন্ডন পর্যন্ত গিয়ে এয়ার কানাডায় টরন্টো।

কানাডায় পৌঁছায় স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটায়।

সময়ের একটু আগেই পৌঁছে গেলাম কানাডার অন্যতম বড় শহর টরন্টোতে। মিসিসাগায় বসবাসরত চাচার বাসায় উঠব ঠিক করা ছিল। ওনার আসতে একটু দেরি হলো, ততক্ষণ বসে থাকতে থাকতে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, বিমানবন্দরের যাত্রীদের জাতিগত পরিচয়। ভাষা শুনে কারও কারওটা বুঝতে পারলাম, কারও কারওটা না। তবে এটা বুঝলাম, অনেক দেশের মানুষই আছে এই বিমানবন্দরে।

এই প্রথম উত্তর আমেরিকার কোনো দেশে এলাম।

মাত্র ১৩ দিনে কী দেখা যাবে, কী করা যাবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব দিয়েছিলাম এক বন্ধুকে। তার সঙ্গে প্রথমে গেলাম টরন্টো শহরের রয়েল অন্টারিও মিউজিয়ামে। সেখানে প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত গ্রিক, রোমান, ইউরোপীয়, এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস, সংস্কৃতি, চিত্রকর্ম ইত্যাদির একটা ধারণা পাওয়া যায়। আরও আছে ডাইনোসরের বিভিন্ন প্রজাতি, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ও আরও অনেক কিছু।

ওখান থেকে বেরিয়ে গেলাম রেপ্লিস অ্যাকোরিয়াম অব কানাডায়। পানির নিচের নানা প্রজাতির প্রাণীর সমাহার ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকোরিয়ামে। ভীষণ ভালো লাগল। দেখলাম সিএন টাওয়ার। পুরোনো টরন্টো শহরের ডাউনটাউনে অবস্থিত ৫৫৩ মিটার উঁচু সিএন টাওয়ার বিখ্যাত এর উচ্চতা, কাচের মেঝে আর ৩৬০টি রেস্তোরাঁর জন্য। এর পাশেই রজার্স সেন্টার (আগে নাম ছিল স্কাইডোম), যেখানে বেসবল, ফুটবল, বাস্কেটবল খেলা হয়। অন্য পাশে মেন্ট্রো কনভেনশন সেন্টার, একটা বড় সেন্টার, যেখানে সংগীতানুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ইত্যাদি হয়।

আমরা যেদিন ডাউনটাউনে বেড়াতে গিয়েছিলাম, সেদিন ছিল টরন্টো রাপটার্স আর গোল্ডেন ওয়ারিওরস ইউএসএর মধ্যে ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের ফাইনাল খেলার দ্বিতীয় খেলা, যেটা হয়েছিল টরন্টোতে, সিএন টাওয়ারের কাছে স্কশিয়া ব্যাংক এরেনায়। টরন্টো রাপটার্স প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে, যা নিয়ে টরন্টোবাসীর উত্তেজনা ছিল আলাদা। যে কারণে সকাল থেকেই মানুষ জড়ো হচ্ছিল স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকায়। আমরা জনজটে এবং পরবর্তী সময়ে যানজটে পড়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি এলাকা ছাড়লাম। তবে বন্ধুটি তার গন্তব্যে যেতে ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল গাড়ির রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।

৪ জুন কানাডায় পবিত্র ঈদ ছিল। সেদিন ঈদের আমেজে বাসায় বাসায় দাওয়াত খেয়ে আর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালাম। ৫ তারিখ থেকে তিন দিনের একটি প্যাকেজ ট্যুরে বেরোলাম একটি চীনা ট্যুরিজম কোম্পানি ‘তাইপেন’-এর সঙ্গে। ৫৪ সিটের বাসের যাত্রীদের মধ্যে একটি বড় অংশ ভারতীয়, তারপর চীনা, বাকিরা মেক্সিকান, ফিলিপিনো, ইরানি, পর্তুগাল আর অন্য আরও দেশের। বুধবার সকাল সাড়ে সাতটায় রওনা দিয়ে কিংসটন শহরের কিংসটন ডাউনটাউনে থামল বাস। এক পাশে সিটি হল, অন্য পাশে অন্টারিও লেক। কেউ কেউ নাশতা খেল, সবাই ছবি তুলল। কিছুক্ষণ থেকে বাস রওনা দিল অটোয়ার উদ্দেশে।

কানাডার রাজধানী অটোয়া অন্টারিওর দক্ষিণ-পূর্বের শহর। অটোয়া নদীর তীরে অবস্থিত পার্লামেন্ট হিল স্থাপত্যশৈলীর কারণে ভ্রমণকারীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। ফেডারেল সরকারের আইনপ্রণেতাদের কর্মস্থল পার্লামেন্ট হিল দেখতে বছরে প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষ আসে।

পার্লামেন্ট হিল থেকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কানাডিয়ান মিউজিয়াম হিস্টোরি আর কানাডিয়ান মিউজিয়ামে। ইতিহাসে আগ্রহ থাকায় ওই জাদুঘরটা ভালো করে দেখেছি, যেখানে কানাডীয় আদিবাসীদের ইতিহাস, তাদের জীবন, সমাজে তাদের অবদান, ফরাসিদের আগমন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। কানাডার যাবতীয় যুদ্ধ আর বিশ্বযুদ্ধগুলো সম্পর্কে জানা যায় যুদ্ধ জাদুঘরে।

এসব কিছু দেখে আবার যাত্রা, এবার মন্ট্রিয়লের উদ্দেশে। শহরে পৌঁছে সোজা যাওয়া হলো রাতের খাবারের জন্য রেস্তোরাঁয়। আমার কাছে বন্ধুর বেঁধে দেওয়া খাবার ছিল, সেটা হোটেলে পৌঁছে খেলাম।

রাতের নায়াগ্রা। ছবি: ঊর্মি লোহানী
রাতের নায়াগ্রা। ছবি: ঊর্মি লোহানী

পরদিন সকাল সাড়ে ছয়টায় বেরিয়ে পৌঁছালাম সেন্ট জোসেফ ওরাটরিতে। এটা কানাডার সবচেয়ে বড় গির্জা আর এর গম্বুজটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গম্বুজগুলোর একটি। ওখান থেকে গেলাম নটর ডেম গির্জায়। শহরের কেন্দ্রে কিছুক্ষণ কাটিয়ে রওনা হলাম অলিম্পিক স্টেডিয়ামের দিকে। ১৯৭৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের মূল স্টেডিয়াম ছিল এটি। উদ্বোধনী আর সমাপনী অনুষ্ঠান বাদে এখানে অ্যাথলেটিকস, ফুটবল ইত্যাদি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কানাডার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়াম। এর ছাদটা খোলা-বন্ধ করা যায়। এই স্টেডিয়ামটি তৈরির শুরুতে যে বাজেট ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ হওয়ার কারণে সরকার তামাকে কর ধার্য করে এবং ৩০ বছর পর পুরো টাকা ওঠাতে সক্ষম হয়।

এই অলিম্পিকের ব্যাপারে আমার একটা আগ্রহের বিষয় ছিল। এই অলিম্পিকে রোমানিয়ার ১৪ বছর বয়সী নাদিয়া কোমেনিচি প্রথমবারের মতো জিমনেস্টিকসের সাতটি ইভেন্টে ১০ পয়েন্টের মানদণ্ডের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ১০ পয়েন্টই অর্জন করেছিলেন। (ওই সময়কার স্কোরবোর্ডে ১০ স্কোরটি সঠিকভাবে দেখানো সম্ভব হতো না, দেখানো হতো ১.০)। এ বিষয়টা তখন হইচই ফেলে দিয়েছিল। আমার এখনো মনে আছে।

অলিম্পিক স্টেডিয়ামের কাছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। সেখানে আছে প্রজাপতি চত্বর, গ্রিন হাউস, চীনা আর জাপানি বাগান। বাগানগুলোতে ঘুরে মনটা ভরে গেল। প্রজাপতি দেখা হলো না, পুরোপুরি গরম পড়েনি বলে এখনো বন্ধ প্রজাপতি চত্বর। ওখান থেকে বেরিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা হলাম কুইবেক প্রদেশের রাজধানী কুইবেক সিটির উদ্দেশে। ফরাসি ভাষার শহর কুইবেক সিটিতে পৌঁছে আমরা প্রথমেই গেলাম কুইবেক টাওয়ারে। সেখান থেকে পুরো শহরটা দেখা যায়। টাওয়ার থেকে আমরা এলাম পুরোনো শহরে।

কুইবেক শহরের বৈশিষ্ট্য এটি উত্তর আমেরিকার একমাত্র শহর, যা তার সুরক্ষাদেয়ালসহ পুরোনো শহরকে এখনো সংরক্ষণ করছে। শহরের পুরোনো অংশে পাথুরে স্থাপনা, সরু পথঘাট এমনভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, যা ঔপনিবেশিক শহরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। কুইবেকের এই অংশ ১৯৮৫ সালে ইউনেসকোর হেরিটেজ সাইট ঘোষিত হয়েছে এর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য। শহরের অলিগলিতে হাঁটলাম, দোকানে ঘুরলাম, উপহার কিনলাম। বেশ কটি দোকান, ফুটপাতের দোকানও দেখলাম, যেখানে চিত্রশিল্পী নিজেই নিজের ছবি নিয়ে বসে আছেন বিক্রি করার জন্য। কারও কারও স্টুডিও ওই দোকানেই।
সেন্ট লরেন্স নদীর পাশের পার্কে রয়েছে প্রশস্ত হাঁটাপথ, বসার জন্য বেঞ্চ, অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ছোট মঞ্চ ও তাকে ঘিরে বসার জন্য গ্যালারি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ গান গাচ্ছেন অর্থ উপার্জনের জন্য।

পার্কটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ঢাকায় এ রকম একটি পার্কের অভাব বোধ করি, যেখানে নিরিবিলিতে বসে প্রকৃতিকে অনুভব করা যাবে। কুইবেক পুরোনো শহরটাই আমার ভালো লেগেছে।

পাশের একটি রেস্তোরাঁয় আমরা রাতের খাবার খেলাম, যেটাকে বলা হয়েছিল ‘ফ্রেঞ্চ ডিনার’। আমি নিরামিষ খাব বলায় আমাকে দেওয়া হলো সবজি পিজা, যার অর্ধেকটা আমি খেতে পারলাম। এই ডিনারটির জন্য ৫০ ডলার দিতে হয়েছিল। মনে হলো পয়সাটা জলে গেল। ভেবেছিলাম ফ্রেঞ্চ ডিনারে ফরাসি খাবারের স্বাদ পাব, তা আর হলো না। খাওয়া শেষে গেলাম হোটেলে।

পরদিন সকালে চললাম Thousand Islands-এর উদ্দেশে। সেন্ট লরেন্স নদীর ওপর ১ হাজার ৮৬৪টি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে একটি এলাকা, যা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে দুই পাশে রেখেছে এবং কানাডার দিকে অন্টারিও প্রদেশে ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিউইয়র্ক রাজ্যে পড়েছে। একটি সেতু এই দুই দেশকে একত্র করেছে, যার নাম থাউজেন্ট আইল্যান্ডস ব্রিজ।

একটি বড় নৌকায় করে আমরা আইল্যান্ড দেখতে বের হলাম। একেকটা দ্বীপ একেকজনের মালিকানায়, একেকটা বাড়ির নকশা একেক রকম সুন্দর। দ্বীপ হিসেবে পরিগণিত হওয়ার জন্য দ্বীপটিকে আয়তনে এক স্কয়ার ফুটের হতে হয়, যা সব সময় পানির ওপরে থাকতে হবে এবং এই জমিতে দুটি জীবিত গাছ থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় দ্বীপটির আয়তন ৪০ স্কয়ার মাইলের ওপরে।

যুক্তরাজ্যের অংশে আলেক্সান্দ্রিয়া বে-তে একটি দ্বীপ আছে, যেখানে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ওয়ালডর্ফ এসটোরিয়া হোটেলের মালিক ধনকুবের জর্জ সি বোল্ডের বিশাল দুর্গ। বোল্ডের স্ত্রী লুইস মারা যাওয়ায় এই দুর্গটির নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ১৯০৪ সালে। কারণ, বোল্ড তাঁর প্রিয়তম স্ত্রীকে ছাড়া এই দুর্গ কল্পনা করতে পারতেন না। পরবর্তী সময়ে থাউজেন্ট আইল্যান্ডস ব্রিজ কর্তৃপক্ষ দ্বীপটি অধিগ্রহণ করে নির্মাণকাজ শেষ করে এবং জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও এটি ভাড়া দেওয়া হয়।

দ্বীপপুঞ্জ দেখে টরন্টো ফেরার পথে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ‘দি বিগ আপেল’ নামের একটি বেকারি স্টোর ও রেস্তোরাঁয়, যেখানে শুধু আপেল থেকে তৈরি খাবার পাওয়া যায়।

কানাডায় এসে নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখব না তা তো হয় না। আর রাতের নায়াগ্রার সৌন্দর্য না দেখলে চলবে না। তাই রাতেই নায়াগ্রা দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। প্যাকেজ ট্যুর থেকে ফিরে রাতের খাবার সেরে চলে গিয়েছিলাম নায়াগ্রায়।
তিনটি জলপ্রপাত মিলে গঠিত নায়াগ্রা জলপ্রপাত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও কানাডার অন্টারিওর সীমান্তের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে। নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জল ১৬০ ফুট ওপর থেকে পড়ে এবং দিনে প্রতি মিনিটে ছয় মিলিয়ন কিউবেক ফুট জল প্রবাহিত হয়। নায়াগ্রার এই বিপুল জলরাশি থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। রাতের জলপ্রপাতে রঙিন আলো দিয়ে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলা হয়। শুক্রবার রাতে আতশবাজি পোড়ানো হয়।

এ ছাড়া আরও ঘুরলাম উডবাইন বিচে, যা টরন্টোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সৈকত; এডওয়ার্ডস গার্ডেন, আগা খান জাদুঘর, টুগুড পন্ড, বাংলা টাউন। বাগান/পার্কে ঘুরতে ঘুরতে অভাব বোধ করেছি ঢাকায় এ রকম একটা জায়গার, যেখানে মন খারাপ হলে/একা একা থাকতে চাইলে বসে থাকা যাবে কোনো রকম উপদ্রব ছাড়া।

চেয়েছিলাম অন্টারিও লেকের পাড়ে বসে থাকব কিছুক্ষণ, চেয়েছিলাম টরন্টোর একটি গ্রাম দেখব, হয়নি। তবে শহরের বাইরে যেতে যেতে দেখেছি অনেক মাঠ, যেগুলো শীতকাল শেষে আবাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

থিয়েটারে নাটক দেখার ইচ্ছাটাও পূরণ হয়নি টিকিট না পাওয়ার কারণে। তবে মুভি থিয়েটারে ‘আলাদিন’ দেখেছি।

মিসিসাগায় যেখানে ছিলাম, সেই এলাকাটিতে ১৫ বছর আগেও ধু-ধু মাঠ ছিল। টরন্টোর আশপাশে এ রকম অনেক জায়গাই আছে, যেখানে বসতি তৈরি হয়েছে সম্প্রতি অথবা এখন তৈরি হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই এই পরিবর্ধন। আর এই বর্ধিত জনসংখ্যার একটা বড় অংশই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী। মনে হলো, চীনা মানুষ বেশি, ভারতীয় আর আরব দেশীয়ও কম না। ২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১২ দশমিক ৫ শতাংশ চীনা অভিবাসী রয়েছে টরন্টো প্রদেশে। কানাডা সরকার আরও দক্ষ অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তাদের দেশে।

ওখানে একটি বিষয় ভালো লাগল, কোনো ঠিকানা খোঁজার জন্য আপনাকে কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না আর উল্টাপাল্টা দিকনির্দেশনাও শুনতে হবে না, আপনার গাড়ির জিপিএস পদ্ধতি আপনাকে জায়গামতো পৌঁছে দেবে (অন্য উন্নত দেশেও আছে নিশ্চয়ই)। রাস্তার মাথার ওপরে থাকা ডিসপ্লে বোর্ডগুলো আপনাকে জানিয়ে দেবে কোন রাস্তায় কী রকম জট আছে, যা আপনাকে আপনার সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করবে।

আমরা অন্য দেশে (উন্নত দেশ হলে তো কথাই নেই) গিয়ে ভালো কিছু দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাই। কানাডায় আমারও ভালো লেগেছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে এও মনে হয়েছে, আমাদের দেশেও তো এ রকম মুগ্ধ হওয়ার মতো ব্যবস্থা করা যায়, যদি আমরা একটু সচেতন হই। কানাডা বা এ রকম আরও অনেক দেশে অনেক ভালো বিষয়ই আছে, যেটা শুধু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে। আমরা বাইরের দেশে গিয়ে নিয়ম ঠিকই মানছি, নিজের দেশে কী জানি কী হয়। নিয়ম মানতে আমাদের যত অনীহা। যানবাহন চলাচল, পথচারী পারাপার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সংরক্ষণ অল্প সময়ে যতটুকু দেখেছি, আমার মনে হয়েছে, এ বিষয়গুলো ঠিক রাখার জন্য উন্নত মনের প্রয়োজন।