স্বাদ আর ঘ্রাণের এলাচি চা

নিজ দোকানে রাহেলা বেগম। ২০ বছর আগে ঢাকায় আসেন তিনি। ছবি: তাইয়্যেবুর রহমান
নিজ দোকানে রাহেলা বেগম। ২০ বছর আগে ঢাকায় আসেন তিনি। ছবি: তাইয়্যেবুর রহমান

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের সামনের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতেই নাকে এল দুধ ও এলাচের মিষ্টি ঘ্রাণ। ঘ্রাণের উৎস কোথায়। আশপাশে তাকাতেই দেখা গেল ছোট ছোট জটলা। লোকজনের হাতে চায়ের কাপ। সামনে এগোতেই দুধ-এলাচের মিষ্টি ঘ্রাণে এলাকা মুখরিত। ঘ্রাণ আসছে কেন্দ্রীয় কলেজের ২ নম্বর গেটের সঙ্গে লাগোয়া ফুটপাতের ওপরের দোকান থেকে। অল্প এগোতেই দেখা গেল সেখানে লেখা ‘সজল এলাচি চা’। দোকানে বসে আছেন মধ্যবয়সী নারী। সামনে কড়াইয়ে এলাচমিশ্রিত গরুর দুধ এবং কেটলিতে লিকার জাল দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর তাজমহল রোডে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ২ নম্বর গেটের সঙ্গে ফুটপাতের ওপর চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চাইতেই এক কাপ চা এগিয়ে দিলেন। চায়ের কাপটি হাতে নিতেই দুধ এলাচের মিশ্রণে মিষ্টি ঘ্রাণে মন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। চায়ের স্বাদ অসাধারণ, যা আট-দশটি দোকানের চায়ের মতো নয়। এই চায়ের স্বাদ জিবে লেগে থাকবে অনেক দিন। এটি সহজে ভোলার নয়।

কথা হচ্ছিল চা বিক্রেতা ওই নারীর সঙ্গে। তাঁর নাম রাহেলা বেগম। মাঝেমধ্যে তাঁর স্বামী মো. শহিদুল ইসলামও দোকানে বসেন। রাহেলা বেগম জানান, প্রায় ১৯ বছর ধরে এখানে চা বিক্রি করছেন তিনি। অনেকেই নিয়মিত তাঁর দোকানে চা পান করেন। এমনকি অনেক দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন চায়ের স্বাদ নিতে আসেন। পাশেই বেশ আয়েশ করে চা পান করছিলেন একজন রিকশাচালক। তিনি বলেন, ‘এমন স্বাদের দুধ-চা মোহাম্মদপুরের আর কোথাও পাওয়া যায় না। এ জন্য এইহানে প্রতিদিন একবার হয়লেও চা খাইতে আহি (আসি)। এই চা খাইলে শরীলডা চাঙ্গা নাগে (লাগে)।’ পাশেই দাঁড়ানো এক দম্পতি বলে ওঠেন, ‘আমরা প্রতিদিন রাহেলা খালার চায়ের স্বাদ নিতে আদাবর থেকে চলে আসি।’ এ ছাড়া শংকর, জিগাতলা, শ্যামলী, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজন কাজ শেষে ফেরার পথে রাহেলা বেগমের চা পান করেন। অনেকে বাসায়ও নেন বলে জানালেন তিনি।

রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই চায়ের স্বাদ নিতে আসে।
রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই চায়ের স্বাদ নিতে আসে।

ফুটপাতে বসেন বলে মাঝেমধ্যে পুলিশ তুলে দেয়। অন্য কাজ পারেন না বলে আবার তিনি বসেন এই ফুটপাতেই। বেলা দুইটা থেকে শুরু হয় চা বেচা। রাত ১১টা পর্যন্ত একটানা চলে চা বেচা। তবে চা বানানোর প্রক্রিয়াটি জানাতে কিছুটা অনীহা রাহেলা বেগমের। দিনে কয়েক শ কাপ চা বিক্রি করেন তিনি।

মাগুরা সদর উপজেলার নতুন বাজার থেকে ২০০০ সালে ঢাকায় আসেন রাহেলা বেগম ও শহিদুল ইসলাম। নানা কাজের পর এই চায়ের দোকান দেন। এক ছেলে মো. সজল মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। বাবা-মায়ের ইচ্ছা, ছেলে সজল লেখাপড়া করে একদিন চিকিৎসক হবে। চিকিৎসক ছেলে অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে—এ আশা রাহেলা বেগমের। কথা বলতে বলতেই কাপের চা কখন শেষ হয়ে গেছে, বুঝতেই পারিনি। কারণ চায়ের স্বাদটা যেন জিবে আষ্টেপৃষ্ঠে রয়েছে।

* তাইয়্যেবুর রহমান, শিক্ষার্থী কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা)