উচ্ছৃঙ্খলতা আর মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল শ্যামলী শিশুপার্ক

শ্যামলী শিশুপার্ক। ছবি: লেখক
শ্যামলী শিশুপার্ক। ছবি: লেখক

ইট-পাথরের এই নগরীতে কর্মব্যস্ত মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস নিতে আর মুক্ত আকাশের নিচে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য ছুটে যান ‘ঢাকার ফুসফুস’ খ্যাত সবুজ অরণ্যে ঘেরা পার্কগুলোতে। কখনো পরিবার, কখনো বন্ধুবান্ধব কিংবা কখনো প্রিয়জনকে নিয়ে কোলাহল ছেড়ে একটু শীতল বাতাস নিতে ছুটে যানে আশপাশের পার্কে। কিন্তু এই পার্কগুলো শহরের মানুষদের কাছে এখন অস্বস্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে! অযত্নে অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ পার্কের অবস্থা নাজেহাল।

ঢাকার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত শ্যামলী শিশুপার্কটির অবস্থান খিলজি রোডের পিসি কালচার হাউজিং এর পাশে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ২০১৫ সালে পার্কটি সংস্কার করার পর আশপাশের এলাকার মানুষ বেশ উৎসাহ নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে আসত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে। জরাজীর্ণ এই পার্কটি সংস্কারের পর খুবই আমেজপূর্ণ ছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো কমতি ছিল না। মাঝে মাঝে পথশিশুদের নিয়ে লেখাপড়া শেখাত একদল তরুণ-তরুণী। আবার কোনো কোনো বাবা-মা বাচ্চাদের নিয়ে খেলতো। কিন্তু বর্তমানে পার্কটির অবস্থা খুবই নাজেহাল। ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে নির্দ্বিধায় নোংরা করা হচ্ছে পার্কের পরিবেশ। যত্রতত্র ময়লার স্তূপ, হকার ও পথ শিশুদের ভিড়, অসামাজিক কার্যকলাপ আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ অপরাধীদের নিয়মিত আড্ডাখানা হয়ে উঠেছে পার্কটি। পার্কের অধিকাংশ বৈদ্যুতিক বাতি নষ্ট। সচলগুলো থাকে নেভানো।

সন্ধ্যার একটু পরেই পার্কের ভেতরে নিয়মিত গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। পার্কের অভ্যন্তরে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশে সিগারেট বিক্রি হয়। আগে আশপাশের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় এই পার্কে সময় কাটাতে আসত; বেশ সময় নিয়ে আড্ডা দিত। কিন্তু এখন চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে।

সব মিলিয়ে পার্কটি দিনদিন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেখানে কোনো রুচিমান মানুষের ঢোকার মতো অবস্থা থাকবে না। আশপাশের মানুষ যে একটু হাঁটাহাঁটি করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে সে সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রকোপ বায়ুদূষণের ফলে ঢাকার জনজীবন হুমকির মুখে। ঢাকার শহরের পার্কগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করলে একসময় অস্তিত্ব সংকটে পরবে ঢাকাবাসী। এই পার্কটি সবার জন্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।