পোশাক খাতে নারীদের উপযোগী কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান

‘তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের সমতা ও অধিকার রক্ষায় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের গুরুত্ব ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
‘তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের সমতা ও অধিকার রক্ষায় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের গুরুত্ব ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

গত দুই দশকে বিপুলসংখ্যক নারী কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও দেশে এখনো নারীদের উপযোগী কর্মপরিবেশ তৈরি হয়নি। গেল চার বছরে তৈরি পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অন্তত ১০ শতাংশ কমে গেছে। কর্মজীবী নারীদের মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার ৯০ শতাংশ, যৌন নির্যাতনের শিকার ১৭ শতাংশ এবং কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে নিপীড়নের শিকার ৭৭ শতাংশ নারী।

গত রোববার দুপুরে রাজধানীর এশিয়া হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট মিলনায়তনে ‘তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের সমতা ও অধিকার রক্ষায় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের গুরুত্ব ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওশ ইনিশিয়েটিভ ফর ওয়ার্কার্স অ্যান্ড কমিউনিটি প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ শামসুন্নাহার ভূঁইয়া।

সভায় প্রধান নিবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী কর্মীদের প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ কারণে তাঁদের মনোযোগে কমতি দেখা দেয়। এটি উৎপাদনশীলতা হ্রাসের একটি বড় কারণ। যৌন হয়রানি কর্মক্ষেত্রে আরেকটি ভয়াবহ রকম সমস্যা। তাঁরা যে কেবল কর্মক্ষেত্রেই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন এমন নয়, বাইরে কাজ করার জন্য তাঁদের পাবলিক প্লেসেও যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, কর্মজীবী নারীদের মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার ৯০ শতাংশ, যৌন নির্যাতনের শিকার ১৭ শতাংশ এবং কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে নিপীড়নের শিকার ৭৭ শতাংশ নারী। তবে যৌন নির্যাতনের শিকার ৬৭ শতাংশ নারীই তাঁদের নিপীড়ন নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অভিযোগ পেশ করেন না। এর কারণ হলো আস্থার অভাব।

গোলটেবিলে বলা হয়, গত দুই দশকে বিপুলসংখ্যক নারী কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও দেশে এখনো নারীদের উপযোগী কর্মপরিবেশ তৈরি হয়নি। গেল চার বছরে তৈরি পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অন্তত ১০ শতাংশ কমে গেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
গোলটেবিলে বলা হয়, গত দুই দশকে বিপুলসংখ্যক নারী কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও দেশে এখনো নারীদের উপযোগী কর্মপরিবেশ তৈরি হয়নি। গেল চার বছরে তৈরি পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অন্তত ১০ শতাংশ কমে গেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, যদিও কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু তৈরি পোশাকশিল্প খাতে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত। তিনি পোশাক খাতের নীতিনির্ধারকদের শ্রম আইন ও শিল্পসংক্রান্ত আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্যানেল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী ড. মনজুর কাদির আহমেদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়ামত আলী, পলমল গ্রুপের জিএম ড. বজলুর রশিদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নার্গিস জাহান, ভারটিক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক সালাতুন্নেছা কেয়া। বক্তরা বলেন, তৈরি পোশাকশিল্প বাংলাদেশের নারীদের জন্য একটি বৃহৎ কর্মক্ষেত্র। তাই এ শিল্পের নারীদের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ। তাঁরা ঢাকা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় পোশাক খাতের কর্মীদের জন্য আলাদা আবাসনব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওশ ইনিশিয়েটিভ ফর ওয়ার্কার্স অ্যান্ড কমিউনিটি প্রকল্পের চেয়ারপারসন ও নারীপক্ষের সদস্য তামান্না হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. মাসুদ পারভেজ।