বাস্তবমুখী শিক্ষা দিতে স্কুলমাঠে সবজি চাষ

স্বরূপকাঠির বলদিয়া সেন্ট্রাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সবজিবাগানে। ছবি: লেখক
স্বরূপকাঠির বলদিয়া সেন্ট্রাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সবজিবাগানে। ছবি: লেখক

স্কুলে পৌঁছাতে শিক্ষার্থীদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় প্রতিদিন। প্রায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। শিক্ষার্থীরা খানাখন্দে ভরা মাটির রাস্তা ও ভাঙাচোরা একাধিক চর বা ব্রিজ পার হয়ে আসে স্কুলে। শুধু এসব প্রতিকূলতাই নয়, স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই ইভ টিজিংয়ের শিকারও হতে হয় শিক্ষার্থীদের। এর ওপর আছে খাঁড়ার ঘা, স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই কন্যাকে পাত্রস্থ করার ইচ্ছা মা-বাবাসহ সমাজের। এ রকম শত প্রতিকূলতার মধ্যেও স্কুলে এসে প্রাণ ফিরে পায় শিক্ষার্থীরা। ফিরে পায় রাস্তায় নোংরা মানুষগুলোর আচরণ ভোলার উপকরণ।

সব বাজে আচরণ ও কষ্ট শিক্ষার্থীরা ভুলে যায় নিজেদের সবজিবাগান ও গাছগুলো দেখে। তারা বলে, তাদের প্রাণের স্পন্দন বিদ্যাপীঠে পৌঁছালেই জীবনের সব প্রতিকূলতা ভুলে যায়। কথাগুলো পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির বলদিয়া সেন্ট্রাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

গত বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙাচোরা টিনের বেড়া ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা পাঁচটি ক্লাসরুম এবং একটি শিক্ষকদের রুম। উপজেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেই রয়েছে জলাশয়। স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত জলাশয়ের প্রায় ২০ শতাংশ বালু দিয়ে ভরাট করে চলছে সবজি চাষ। যেখানে মাচায় ঝুলছে লাউ ও শিমগাছ। বালুর মধ্যে লাগানো হয়েছে আলু। তার পার্শ্বে রয়েছে টমেটো, শালগম রয়েছে মাঠের চারপাশে। আবার মাঠের পূর্ব পাশে সরিষা ফুল, যা চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য বুঝিয়ে বলা সম্ভব না।

স্কুলের চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহবুবা আক্তার, তানজিলা, জেসমিন, হালিমা ও ইয়াসমিন জানায়, স্কুলের দপ্তরি ইসরাফিলের ঐকান্তিক চেষ্টায় এমন সুন্দর সবজিবাগান করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মাটি গুঁড়া করা, গাছ লাগানো ও আগাছা পরিচর্যা করলেও গাছের প্রাণ পানি দেওয়ার কাজটি তিনিই প্রতিদিন সকাল-বিকেল করে থাকেন। এমনকি চোরের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য তিনিই রাতে পাহারা দেন।

শিক্ষার্থী মাহবুবা আক্তার বলে, এখান থেকে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকেরা কোনো ধরনের অর্থ বিনিময় ছাড়াই প্রয়োজনমতো সবজি বাড়িতে নিয়ে যান, যা পরিবারের অর্থনৈতিক কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

কথা হয় প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ বাহাদুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসেই কৃষিশিক্ষা নামে একটি বিষয় রয়েছে। শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠ বাদে পরিত্যক্ত বাকি জায়গায় কৃষিকাজ করে বাস্তব শিক্ষায় অভ্যস্ত হচ্ছে। যে কারণে ক্লাসে এ বিষয়ের ওপর চাপও কম থাকে। শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ভালো ফল করছে।

স্কুলের দপ্তরি ইসরাফিল বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে ক্লাস শুরুর আগে প্রায় দিনই আনন্দের সঙ্গে কাজ করে। কাজ করা ও ফসল তোলার সময় ওদের বাঁধভাঙা আনন্দ দেখে আমার চোখে পানি চলে আসে। প্রতিটি স্কুলেই উচিত পরিত্যক্ত জায়গায় সবজি চাষ করা। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, স্কুলের মাঠে সবজি চাষ দিয়েই কাঁর ঘরের ১২ মাসের সবজির চাহিদা মেটে। এ ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে এ সবজি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে অর্থের বিনিময়েও দিতে পারে। ওই অর্থ দিয়েই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ কেনার ব্যবস্থাও করে দিতে পারে স্কুল কর্তৃপক্ষ।