ঢাকা থেকে লালমনিরহাট যাচ্ছে পলিথিন প্যাকের বিস্কুট, মেয়াদ ৯ মাস

ঢাকা থেকে কাভার্ড ভ্যানে পলিথিনের বস্তায় ভরে আনা হয় বিস্কুট। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা থেকে কাভার্ড ভ্যানে পলিথিনের বস্তায় ভরে আনা হয় বিস্কুট। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা থেকে কাভার্ড ভ্যানে আসা পলিথিনের বস্তায় রেখে খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বিস্কুট। আর সেই বিস্কুটের মেয়াদ ট্যাগে লেখা আছে ৯ মাস। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) ভুয়া সিলমোহর ব্যবহার করা এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে লালমনিরহাট বাজারে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব বিস্কুটের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হবে। সমস্যা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা বাজারে কাভার্ড ভ্যান থেকে এসব বিস্কুট বস্তা গোডাউনে নিতে দেখা যায়।

স্থানীয় লোকজন জানান, ঢাকার দেবিদাস ঘাট এলাকার মীম ফুডের জাহান স্পেশাল বিস্কুট ও টোস্ট ১০ কেজি ওজনের পলিথিনের বস্তায় করে দেশের বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করা হয়। প্রতিটি বস্তার মুখ সুতলি দিয়ে বেঁধে ওপরে কম্পিউটার কম্পোজ করা বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে মেয়াদ দেওয়া হচ্ছে ৯ মাস। উৎপাদনের দিন থেকে ৯ মাস খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত উল্লেখ করা হলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, এত দিন এসব খোলা বিস্কুট বিষক্রিয়ায় পরিণত হবে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

কয়েক বছর ধরেই এসব বিস্কুট লালমনিরহাটে বাজারজাত করছেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। এদের প্রধান বলে পরিচিত আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের আবদুল হামিজের ছেলে পেয়ারুল ইসলাম। তিনি জেলার সব বাজারে এসব বিস্কুট সরবরাহ করেন। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সব মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে মানহীন এসব বিস্কুট বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ আছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, রাতে কাভার্ড ভ্যানে করে ঢাকা থেকে এসব বিস্কুট আনা হয়। এরপর গুদামে মজুত রেখে চাহিদামতো এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করা হচ্ছে।

খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বিস্কুট। ছবি: সংগৃহীত
খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বিস্কুট। ছবি: সংগৃহীত

ওই বিস্কুটের পরিবেশক পেয়ারুল ইসলাম জানান, ১০ কেজি ওজনের এসব বস্তা পাইকারি ৫৫০ টাকায় কিনে খোলা বাজারে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে একটি কাভার্ডভ্যানে প্রায় চার শ বস্তা বিস্কুট আসে। তার কাছ থেকে কিনে অনেকেই বাজারে খুচরা বিক্রি করছেন। এ ব্যবসার জন্য একটি সনদ দেওয়ার কথা বলে উপজেলার একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন পেয়ারুল ইসলাম। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত কোনো সনদ পাননি বলেও জানান।

উপজেলার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ঠিকমতো কাজ করেন না। কারও বিরুদ্ধে খাদ্য ভেজালসহ নানা অভিযোগ থাকলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন না। তিনি সক্রিয় হলে এলাকার এসব অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ফরিদ উদ্দিন বলেন, বেকারির বিস্কুট ভালো প্যাক করে রাখলে সর্বোচ্চ ৬ মাস গুণগতমান সঠিক থাকে। এরপর বিষক্রিয়ায় পরিণত হয়। ঢাকার এসব খোলা বিস্কুটের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, এসব বিস্কুটের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হবে। এরপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।