বইমেলার পাদদেশের কত ইতিহাস

বইমেলায় সমগ্র জাতির রুচি, মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়
বইমেলায় সমগ্র জাতির রুচি, মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়

২০২০ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সরকারিভাবে। কারণ, ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত মহান পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সরকারি-বেসরকারি, ব্যক্তি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিশ্বে মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপন চলছে।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন এবং গবেষণা। চারদিকে নব উদ্যমে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য ও অসাম্প্রদায়িকতার চেতনার বহু বিষয় নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা চলছে। প্রকাশিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ। তরুণ প্রজন্ম একদিকে যেমন জানতে পারছে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশকে, ঠিক একইভাবে তারা উজ্জীবিতও হচ্ছে নানাভাবে। বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের কাছে উঠে আসছে ইতিহাসের দুষ্প্রাপ্য তথ্য।

প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা একাডেমির আয়োজনে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হয়েছে। এ মেলা হচ্ছে বাংলা একাডেমি মাঠ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এবারের বইমেলা বিগত বছরের চেয়ে যেমন ভিন্ন, ঠিক তেমনি নান্দনিক। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে মেলায় বহুভাবে ভিন্নতা রয়েছে। সাজানো–গোছানো হয়েছে বিশেষভাবে। বেড়েছে পরিসর। বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রকাশক বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিশেষ বিশেষ গ্রন্থ প্রকাশ করে আসছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এবারের নান্দনিক বইমেলা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও স্থপতি এনামুল কবির নির্ঝরকে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রথম আলো
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রথম আলো

কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বরাবরই আমার একজন প্রিয় মানুষ। তাঁর লেখা ভালো লাগে। তিনি ব্যক্তি হিসেবে যতটা প্রিয়, এর চেয়ে বেশি প্রিয় তাঁর লেখা। আমি লেখক আনিসুল হকের ভক্ত। ভালো লাগে এ কারণে যে তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন এবং লেখেন। লেখার মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে। সহজ, সরল ও অত্যন্ত সাবলীলভাবে তিনি আমাদের জন্য লেখেন।

রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ
রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ

১০ ফেব্রুয়ারি আনিসুল হক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ‘স্বপ্নের মতো সুন্দর’ বইমেলা শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। লেখাটি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি, উৎসাহ পেয়েছি। তিনি লিখেছেন, ‘সন্ধ্যার সময় স্বাধীনতাস্তম্ভের পাদদেশে সরোবরটির পাশে বাঁধানো পারে গিয়ে বসে থাকুন, লেকের ধারে হাঁটুন, পানিতে পড়েছে স্বাধীনতাস্তম্ভের প্রতিবিম্ব, যা জানাচ্ছে এখানে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করেছিল, এখানে বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু খেতাব দেওয়া হয়েছিল, এখানে ৭ মার্চ কিংবা ১০ জানুয়ারির ভাষণ হয়েছিল; আর দুই পাশে দেখতে পাবেন প্রকাশকদের সুন্দর করে সাজানো প্যাভিলিয়ন কিংবা স্টল। হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে চিত্ত। বইমেলা এত সুন্দরও হয়। অনেক খোলা জায়গা, বসার ব্যবস্থা, খাবার এবং নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

আমি তাঁর লেখার সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলছি, সত্যিই আমাদের বইমেলা কত সুন্দর। ভাষার মাসে প্রাণের বইমেলা। বিশ্বের মাঝে আমাদের বইমেলায় মনে হয় একমাত্র বইমেলা, যা মাসব্যাপী হয়ে থাকে প্রতিবছর। আমাদের যেমন আছে ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ নিয়ে ইতিহাস। ঠিক তেমনিভাবে রয়েছে বইমেলার ইতিহাস।

স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেদীপ্যমান সোহরাওয়াদী উদ্যানের শিখা চিরন্তন। ছবি: মনিরুল আলম
স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেদীপ্যমান সোহরাওয়াদী উদ্যানের শিখা চিরন্তন। ছবি: মনিরুল আলম

বাংলা একাডেমির আয়োজনে বইমেলা অনুষ্ঠিত হলেও মেলার মূল অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রতিদিন নতুন নতুন বইয়ের সমারোহে মুখরিত হচ্ছে লেখক, পাঠক ও প্রকাশক। ইতিহাসের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাদদেশ এখন যেন বইমেলার পাদদেশে রূপ নিয়েছে।

১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে আমাদের এই মানচিত্রের পূর্ব বাংলাকে এই পাদদেশেই প্রথমবারের মতো নামকরণ করেছিলেন ‘বাংলাদেশ’। সেই থেকে আমাদের বাংলাদেশ।

সোহরাওয়াদী উদ্যানের এই স্থান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়েছিল। আজ ওই স্মারকটি দাঁড়িয়ে আছে এই অবস্থায়। ছবি: মনিরুল আলম
সোহরাওয়াদী উদ্যানের এই স্থান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়েছিল। আজ ওই স্মারকটি দাঁড়িয়ে আছে এই অবস্থায়। ছবি: মনিরুল আলম

এই পাদদেশেই ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তি পেলে এক নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। সেই থেকে তিনি আমাদের ‘বঙ্গবন্ধু’।

স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেদীপ্যমান সোহরাওয়াদী উদ্যানের শিখা চিরন্তন। ছবি: মনিরুল আলম স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেদীপ্যমান সোহরাওয়াদী উদ্যানের শিখা চিরন্তন। ছবি: মনিরুল আলম রাত পোহালেই ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর সে সময়কার রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি সেনারা। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক কোন জায়গায় আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল তা অনেকেরই অজানা। উদ্যানে গিয়েও জায়গাটি খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ সেই নির্দিষ্ট স্থানটির কোনো চিহ্ন বা স্মারক নেই। অথচ ওই জায়গাটি চিহ্নিত করতে চার বছর আগে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। পাশাপাশি ওই অংশটিকে ‘স্বাধীনতা উদ্যান বা লিবার্টি স্কয়ার’ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। সোহরাওয়াদী উদ্যানের এই স্থান থেকেই  মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়েছিল। আজ ওই স্মারকটি দাঁড়িয়ে আছে এই অবস্থায়। ছবি: মনিরুল আলম সোহরাওয়াদী উদ্যানের এই স্থান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়েছিল। আজ ওই স্মারকটি দাঁড়িয়ে আছে এই অবস্থায়। ছবি: মনিরুল আলম রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালের ২৫ জুন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। ওই বছরের ৮ জুলাই আদালত রায় দেন এবং ২০১০ সালের জুলাই মাসে লিখিত রায় প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ১৯৯৫ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় স্তম্ভ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেটি পড়ে আছে এই অবস্থায় ছবি: মনিরুল আলম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ১৯৯৫ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় স্তম্ভ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেটি পড়ে আছে এই অবস্থায় ছবি: মনিরুল আলম
স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেদীপ্যমান সোহরাওয়াদী উদ্যানের শিখা চিরন্তন। ছবি: মনিরুল আলম স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেদীপ্যমান সোহরাওয়াদী উদ্যানের শিখা চিরন্তন। ছবি: মনিরুল আলম রাত পোহালেই ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর সে সময়কার রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি সেনারা। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক কোন জায়গায় আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল তা অনেকেরই অজানা। উদ্যানে গিয়েও জায়গাটি খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ সেই নির্দিষ্ট স্থানটির কোনো চিহ্ন বা স্মারক নেই। অথচ ওই জায়গাটি চিহ্নিত করতে চার বছর আগে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। পাশাপাশি ওই অংশটিকে ‘স্বাধীনতা উদ্যান বা লিবার্টি স্কয়ার’ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। সোহরাওয়াদী উদ্যানের এই স্থান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়েছিল। আজ ওই স্মারকটি দাঁড়িয়ে আছে এই অবস্থায়। ছবি: মনিরুল আলম সোহরাওয়াদী উদ্যানের এই স্থান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়েছিল। আজ ওই স্মারকটি দাঁড়িয়ে আছে এই অবস্থায়। ছবি: মনিরুল আলম রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালের ২৫ জুন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। ওই বছরের ৮ জুলাই আদালত রায় দেন এবং ২০১০ সালের জুলাই মাসে লিখিত রায় প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ১৯৯৫ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় স্তম্ভ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেটি পড়ে আছে এই অবস্থায় ছবি: মনিরুল আলম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ১৯৯৫ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় স্তম্ভ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেটি পড়ে আছে এই অবস্থায় ছবি: মনিরুল আলম

১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাদদেশই এক মহাসমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশে জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যরা প্রকাশ্যভাবে জনসভায় শপথ গ্রহণ করেন যে কোনো অবস্থাতেই এমনকি পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের চাপের মুখেও তাঁরা বাংলার মানুষের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।

এই স্মারক স্তম্ভটিতে কী লেখা হয়েছিল তা এখন আর উদ্ধার করা সম্ভব না। শিশু পার্কের দেয়াল ঘেসে এভাবে অনাদরে, অবহেলায় পড়ে আছে। ছবি: মনিরুল আলম
এই স্মারক স্তম্ভটিতে কী লেখা হয়েছিল তা এখন আর উদ্ধার করা সম্ভব না। শিশু পার্কের দেয়াল ঘেসে এভাবে অনাদরে, অবহেলায় পড়ে আছে। ছবি: মনিরুল আলম

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ তৎকালীন ডাকসু ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির জনক’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন এক জনসভায় এই পাদদেশে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর তাঁর জ্বালাময়ী বিশ্বময় ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন এই সোহরাওয়ার্দীর পাদদেশে। এখন যা বিশ্বের সেরা ভাষণের একটি। যে ভাষণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করেছিল স্বাধীনতার জন্য। সেই ভাষণ এখনো বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্পদ।

এই পাদদেশেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল মিত্রবাহিনীর কাছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু ভাষণও দিয়েছিলেন এখানে।

স্বাধীনতা স্তম্ভ জলাধারে আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪) ছিন্নমূল মানুষেরা গোসল করছেন। ছবি: মনিরুল আলম
স্বাধীনতা স্তম্ভ জলাধারে আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪) ছিন্নমূল মানুষেরা গোসল করছেন। ছবি: মনিরুল আলম

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাদদেশে অনুষ্ঠিত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বক্তব্য দিয়েছিলেন। এই পাদদেশের একপাশেই রয়েছে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিম উদ্দীনের সমাধি।

পুরোনো ছবি। ছবি: হাসান রাজা
পুরোনো ছবি। ছবি: হাসান রাজা

প্রতিদিন বইমেলার ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে বসছেন নতুন নতুন লেখক। সেখানে লেখক মুখোমুখি হচ্ছেন পাঠকের। ১৪ ফেব্রুয়ারি লেখকমঞ্চে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গবেষক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের বইমেলার পাদদেশের ইতিহাস স্মরণ করে বলেন, ‘আমি যেখানে বসে কথা বলছি, এই জায়গায় রয়েছে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নানান ইতিহাস।’ ১৬ তারিখে লেখকমঞ্চে সঞ্চালক গবেষক মামুন সিদ্দিকী কথার ফাঁকে কয়েকবার বললেন, ‘আমরা যেখানে কথা বলছি, এই জায়গাটিতেই রয়েছে আমাদের শিকড়, সংগ্রাম ও মুক্তি অর্জনের ইতিহাস।’

বর্তমান ছবি। ছবি: হাসান রাজা
বর্তমান ছবি। ছবি: হাসান রাজা

প্রতিদিন শত শত মানুষের পদচারণে মুখরিত হচ্ছে আমাদের বইমেলার পাদদেশ। বইমেলার নতুন বইয়ের সুগন্ধ যেমন আমাদের ডাকে ঠিক, তেমনি ইতিহাস–ঐতিহ্যের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইতিহাস আমাদের উজ্জীবিত করে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাদদেশের স্বাধীনতাস্তম্ভের লেকের পাশ দিয়ে হাঁটলে জানান দেয় আমাদের ভাষা, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাসের কথা, যা এখন অপরূপ সৌন্দর্যে রূপ নিয়েছে বইমেলার পাদদেশ হিসেবে। সময়–সুযোগ পেলে আপনিও চলে আসুন পরিবার–পরিজন নিয়ে। নিয়ে আসুন শিশুদের। জানুন, বলুন, নতুন বই কিনুন। বইমেলার পাদদেশে হাঁটুন আর চিত্তকে জাগ্রত করুন।

*লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক। [email protected]