রাবিতে প্রদর্শনী, কথার ছন্দে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির আয়োজনে একক প্রদর্শনীতে মুগ্ধ দর্শকেরা। ছবি: সংগৃহীত
সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির আয়োজনে একক প্রদর্শনীতে মুগ্ধ দর্শকেরা। ছবি: সংগৃহীত

‘কলকাতার কাকলি কান্তের কনিষ্ঠ কন্যা কলেজের করিডোরে কাঁদিতে কাঁদিতে কাকার কাছে কহিল, “কাকা, কাক কেন কা কা করে? কাকা কহিল, কাকের কাজ কা কা করা।”’ লাইনটার সঙ্গে অনেকেই মোটামুটি পরিচিত। একটা ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে, যার প্রতিটা শব্দের শুরু ‘ক’ দিয়ে।

ওপরের কথাগুলো বলতেও ভালো লাগে, শুনতেও ভালো লাগে। এমনই সব কথা, উক্তি আর নানা বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। একজন দক্ষ কথাশিল্পী খুব সহজেই তার দর্শকদের সুনিপুণ কথার মাধ্যমে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে রাখতে পারেন। তেমনি একজন কথার জাদুকর সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত তার একক প্রদর্শনীতে এসে মুগ্ধ হয়েছেন সবাই।

গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মাঠে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও একুশে ফেব্রুয়ারি ২০২০ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশসহ বিশ্বের শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিষয়ক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ওই দিন সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনীটি চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু কর্নার, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান স্বাধীনতা দিবস, ভাষা, শিক্ষা, সাহিত্য, রবীন্দ্র-নজরুল, চিঠির ভবন, বাংলা ব্যাকরণ, সংস্কৃতি, বিবিধ ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির একক সংগ্রহ, কবিতা, ছড়া ইত্যাদি দেয়ালে টাঙিয়ে প্রদর্শন করা হয়। একই বর্ণ, কখনো শব্দ দিয়ে শুরু করে পুরো ছড়া-কবিতা, গল্প, সম্পূর্ণ সাবলীল ছন্দ, দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে। এমন কথার জাদুতে অবাক হয়েছেন দেখতে আসা দর্শনার্থীরা।

প্রদর্শনী দেখতে আসা ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সারোয়ার বললেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। বাংলা ভাষা যে এতটা সমৃদ্ধ, তা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। এ ছাড়া দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি স্যারের এসব কবিতা, ছড়া পড়ে তার সৃজনশীলতায় খুব মুগ্ধই হয়েছি।’

বড়দের পাশাপাশি ছিল ছোট দর্শনার্থীদের ভিড়। উচ্ছ্বসিত দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া দর্শনার্থী শাহিদ বলেন, ‘অনেক কিছু দেখেছি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ছোট বয়সে কেমন ছিলেন, তা জানতে পেরেছি। আমার খুব ভালো লেগেছে।’

শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি গবেষণাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি জীবনের দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা ও গবেষণার কাজে ব্যয় করেছেন। তিনি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে নীরবে–নিভৃতে সাহিত্যচর্চাকে ব্রত হিসেবে তিনি ধারণ করেছেন। পেনশনের টাকা দিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিষয়ক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিষয়ক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

প্রদর্শনীতে অবস্থানের সময় দেখতে পাওয়া গেল তাকে। এমন আয়োজনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি বললেন, ‘আমি মূলত একজন শিক্ষক। শিক্ষকতার সময় বিভিন্ন শব্দ নিয়ে গবেষণা করতে করতে দেখি একই বর্ণ দিয়ে শুরু অক্ষর জোড়া লাগিয়ে একটি বাক্য তৈরি করা যায়। আমি একের পর এক এমন বাক্য দিয়ে ছড়া, কবিতা, চিঠি, গল্প ও উপন্যাসও লিখে ফেললাম। মানুষের কাছে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য পৌঁছে দিতেই এ আয়োজন।’

নিজের প্রণয়োপন্যাস ‘প্রয়ংবরা’ দেখিয়ে দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি বললেন, এই বইয়ে সব শব্দ ‘প’ বর্ণ দিয়ে শুরু করেছি। এমনকি বইয়ের নামেও তা পড়তে পারছেন। বই খুলে দেখা গেল সত্যিই তা–ই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বইয়ের প্রত্যেক শব্দ ‘প’ বর্ণ দিয়ে শুরু। ঠিক প্রদর্শনীতে দেখানো তার অন্যান্য লেখাগুলোর মতোই।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি বললেন, ‘সম্প্রতি একটি কাব্যগ্রন্থ নিয়ে কাজ করছি। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের “মেঘনাদবধ কাব্য”–এ অনুসরণ করে এই কাব্য। “মেঘনাদবধ কাব্য” রামায়ণ অনুসরণে, আর আমার কাব্য হবে মহাভারত অনুসরণে। যদিও লেখা শেষ হয়েছে। তবে আরেকটু সময় লাগবে।’ এ জন্য প্রকাশকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সৃজনশীল এই সাহিত্যিক। ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তা না লিখতে বারণ করলেন তিনি।