তথ্য নিয়ে কবে ঘুম ভাঙবে বাংলাদেশের মানুষের

আপনার-আমার সবার তথ্য হ্যাক করে অন্য কাজে লাগানো হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
আপনার-আমার সবার তথ্য হ্যাক করে অন্য কাজে লাগানো হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ঘুম! ঘুম একটি শান্তির জায়গা। কেউ চায় না শান্তিটা নষ্ট করতে। তেমনি বাঙালি হিসেবে আমরাও চাই না আমাদের ঘুম ভাঙাতে। ঘুম সবার প্রিয়। কিন্তু কিছু ঘুমের কারণে শান্তির থেকে ক্ষতির মাত্রা বেশি।

কথা হচ্ছে ২০৩০ সাল বা পরবর্তী যুদ্ধ নিয়ে। তখন উন্নত আধুনিক প্রযুক্তির সামরিক যান কে রেখে বেছে নেবে আমার–আপনার তথ্য। আর সেই তথ্য দিয়েই শুরু হবে যুদ্ধ।

ধরুন, আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালাচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন একটি ব্যানার। যেখানে লেখা আছে, বৃদ্ধা হলে আপনাকে কেমন দেখাবে বা আপনার প্রিয় নায়িকা কে বা আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে বা আপনার ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে কিছু উক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর আপনি আনন্দের সঙ্গে ক্লিক করলেন সেই লিংকে। ক্লিক করার পর আপনার কাছে পলিসি এবং প্রাইভেসি নিয়ে অনেক বড় একটা লেখা দেখলেন। কিন্তু আমরা বাঙালিদের পড়ার ধৈর্য নেই। সব ওকে বাটনে ক্লিক দিয়ে পরের ধাপে গেলেন। তারপর অ্যানালাইসিস অপশনে ক্লিক করলেন। করার পর আপনার ছবিসহ কিছু তথ্য দেখলেন এবং মনের খুশিতে শেয়ার দিলেন।

এই প্রক্রিয়া কেন, কীভাবে, কী জন্য ফেসবুকে এসেছে, আপনি জানেন কি? জানেন না। জানলে এই ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠতেন না।

আপনি পারমিশন দিয়ে যে তথ্য অ্যানালাইসিস করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, আসলে এটা একটা ফাঁদ ছিল। এই পোস্টের বা অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে আপনার অনেক তথ্য তারা হাতিয়ে নিয়েছে।

২০১৬-১৭ সালে আমি কিছু ফেসবুকে ফানি অ্যাপ বানিয়েছিলাম। সেখানে দেখছিলাম, এসব অ্যাপ ব্যবহার করে ই–মেইল, ফোন, অ্যাড্রেস, নাম, ফেসবুক প্রোফাইল আইডি, ছবি, অ্যালবাম, প্রিয় জায়গা, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অনেক তথ্য ফেসবুক থেকে হাতিয়ে নেওয়া যেত।

আবার ইনকাম করুন একটি ক্লিক করে। এ রকম হাজারো আছে অনলাইনে। টাকার লোভে সবাই ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেন। রেজিস্ট্রেশন করার পর দেখা যায় ইনকামের কোনো জায়গা নেই এবং এটি ভুয়া ছিল। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনি নাম, ই–মেইল, ফোন নম্বর, অ্যাড্রেস, লোকেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ অনেক তথ্য দিয়ে দিয়েছেন, যা দিয়েছেন সব তথ্য তাদের হাতে চলে গেছে।

বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত
বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

তথ্য বেচাকেনা এখন সব সময় হয়। এর প্রমাণ হচ্ছে এখনকার মেসেজে বিজ্ঞাপন, ই–মেইলে বিজ্ঞাপন, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন, ইউটিউবে বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই আপনি খুঁজেছেন বা খোঁজেননি। আপনি মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে যান এই ভেবে যে আপনার নম্বর কই পেল তারা। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেননি যে আপনি নম্বরটি অনেক আগেই তাদের দিয়ে রেখেছেন।

সম্প্রতি একটা কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, আমেরিকার জনগণের তথ্য রাশিয়ার কাছে আছে। রাশিয়া সেই তথ্য ব্যবহার করেছে আমেরিকার গেল নির্বাচনে। এখানে রাশিয়া অস্ত্র হিসেবে সাধারণ জনগণের তথ্য ব্যবহার করেছে।

ওপরের দুটি বিষয় সব সময় দেখা যায়। কিন্তু সাবধান! কারণ, আপনি যে তথ্য দিয়েছেন, একই তথ্য দিয়ে আপনি বিভিন্ন ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা ওয়ালেট চালু করেছেন। একবার যদি এসব তথ্য–উপাত্ত পর্যালোচনা করে আপনার পাসওয়ার্ড জেনে যায়, তাহলে নিজের সর্বনাশ নিজেই করেছেন।

এখন আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে আপনার তথ্যের কোনো দাম নেই। কিছুদিন পরেই বুঝবেন তথ্য দিয়ে কী ভুল করেছেন।

একজন অপরিচিত ব্যক্তি যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করে আপনার নাম, জন্মতারিখ, ই–মেইল, প্রিয় খেলা, ভোটার আইডি নম্বর, প্রিয় জায়গা, কোনো বিষয়ে ইন্টারেস্ট, প্রিয় শখ ইত্যাদি। যখন এসব প্রশ্ন শুনবেন, তখনই আপনি সন্দেহ করবেন এবং কোনো তথ্যই প্রদান করবেন না।

কিন্তু ফান করেই হোক বা নিজের ইচ্ছায় অনলাইনের মাধ্যমে তথ্য দিয়ে রাখছেন অনেকে। তাই নিজের তথ্য সুরক্ষা করার দায়িত্ব নিজের। কারণ, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রধান হাতিয়ার তথ্য। ফান বা কোনো রেজিস্ট্রেশন করার আগে ভাবুন। সুতরাং নিজের তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠুন। নইলে অপেক্ষা করছে বিপদ।