ফেসবুক গ্রুপ 'ময়মনসিংহ হেল্পলাইনে' দেবশংকর খুঁজে পেলেন পেন-ফ্রেন্ডকে

ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’–এর সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’–এর সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার দেবশংকর চ্যাটার্জি কয়েকটা সাদা–কালো ও কিছু পুরোনো চিঠির ছবি দেন ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ ‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’–এ। তিনি সেখানে লেখেন, ‘৪৫ বছর আগে ময়মনসিংহে তাঁর একজন পত্রমিতালি (পেন–ফ্রেন্ড) ছিলেন, অনেক দিন পত্র আদান–প্রদানে বেশ ভালোই সখ্য তৈরি হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। একটা সময় ঠিকানা পরিবর্তনের ফলে তাঁদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’

পোস্ট দেওয়ার পরই সেই পত্রমিতালির খোঁজ পেয়ে যান দেবশংকর চ্যাটার্জি। এ রকম বহু ঘটনার সাক্ষী ২ লাখ ৯১ হাজার সদস্যের এ গ্রুপটি। স্থানীয় ব্যক্তিরা এই গ্রুপের নাম দিয়েছেন ‘ময়মনসিংহের সার্চ ইঞ্জিন’।

দেবশংকর চ্যাটার্জি ৪৫ বছর পর সেই পত্রবন্ধুর সন্ধান পেয়েছেন ময়মনসিংহ হেল্পলাইনের মাধ্যমে। পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৪৫ বছর আগের পত্রমিতালির খোঁজ পেলেন তিনি।

ময়মনসিংহের এ গ্রুপটি বৃহত্তর ময়মনসিংহকে সবার মাঝে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে তথ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি মাঠপর্যায়েও কাজ করে যাচ্ছে।

‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’–এর তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে শহরের একটি প্রতিবন্ধী একাডেমিতে ৩০ জন প্রতিবন্ধী এবং তাদের অভিভাবকদের নিয়ে কেক কাটেন এবং বাচ্চাদের মাঝে বিভিন্ন খেলনা ও পুতুল উপহার দেন। ছবি: লেখক
‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’–এর তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে শহরের একটি প্রতিবন্ধী একাডেমিতে ৩০ জন প্রতিবন্ধী এবং তাদের অভিভাবকদের নিয়ে কেক কাটেন এবং বাচ্চাদের মাঝে বিভিন্ন খেলনা ও পুতুল উপহার দেন। ছবি: লেখক

কারও রক্তের প্রয়োজন, কারও জাতীয় পরিচয়পত্র, সার্টিফিকেট বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাগজ হারিয়ে গেছে, কেউ জানতে চান বাস বা ট্রেনের সময়সূচি, কারও দরকার কোনো চিকিৎসকের ঠিকানা বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা অথবা কমিউনিটি সেন্টারের ঠিকানা। কোনো চিন্তা নেই, ‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’ নামের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিলেই পাওয়া যাচ্ছে সমাধান। ময়মনসিংহের কেউ হারিয়ে গেছে কিংবা অপরিচিত কাউকে খুঁজে পেয়েছেন? চিন্তার কোনো কারণ নেই, একটা ছবি আর তথ্য দিয়ে পোস্ট করুন হেল্পলাইনে, বাকি কাজ করে দেবেন হেল্পলাইনের সদস্যরা। গ্রুপে দৈনিক প্রায় এক হাজার পোস্ট আসে, প্রথমে অ্যাডমিন মডারেটররা সেগুলো পড়ে দেখেন, যদি গ্রুপের নীতিমালা অনুযায়ী হয়, তাহলে সেগুলো অনুমোদন দেন। গ্রুপে সব ধরনের সহযোগিতামূলক পোস্ট অনুমোদন করলেও আর্থিক সহযোগিতা ও আইনবিরোধী কোনো পোস্ট অনুমোদন দেয় না।

শুধু তথ্য প্রদানেই থেমে নেই জনপ্রিয় এ গ্রুপটি, ময়মনসিংহের বিভিন্ন সমস্যা পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর করা হয়।

‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’ গ্রুপটি বৃহত্তর ময়মনসিংহকে সবার মাঝে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে তথ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি মাঠপর্যায়েও কাজ করে যাচ্ছে। ছবি: লেখক
‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’ গ্রুপটি বৃহত্তর ময়মনসিংহকে সবার মাঝে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে তথ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি মাঠপর্যায়েও কাজ করে যাচ্ছে। ছবি: লেখক

অনলাইনে সেবাদানের পাশাপাশি বর্তমানে গ্রুপটির পরিচালক এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা মাঠপর্যায়েও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের দিকনির্দেশনা এবং তাঁদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তার পাশাপাশি নানা কাজে জড়িত।

গতকাল শনিবার ছিল গ্রুপটির তৃতীয় বর্ষপূর্তি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রুপটির অ্যাডমিন-মডারেটর এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা শহরের একটি প্রতিবন্ধী একাডেমিতে ৩০ জন প্রতিবন্ধী এবং তাদের অভিভাবকদের নিয়ে কেক কাটেন এবং বাচ্চাদের মধ্যে বিভিন্ন খেলনা এবং পুতুল তুলে দেন।

*লেখক: সিনিয়র অ্যাডমিন, ময়মনসিংহ হেল্পলাইন