করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ জরুরি

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

একটি উড়ন্ত পাখিকে আপনি যখন খাঁচায় বন্দী করে রাখবেন, তখন তা শারীরিক ও মানসিক—উভয় দিক থেকেই অনেক ক্ষতিগ্রস্ত থাকবে। এই বদ্ধ খাঁচায় যদি প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়, তখন সে পাখি উপায়ান্তর না দেখে অনেকটা মৃত্যুর পথযাত্রীই হবে বলা যায়। কেননা বদ্ধ খাঁচায় মুক্তির আশা করা নির্ঘাত বোকামি।

আজ আমাদের সঙ্গে পাখিটির তুলনা করুন। আমরা যেন পাখিটিরই প্রতিচ্ছবি। আজ ঘরমুখী হয়েও আমাদের দিনগুলো কাটছে সংশয় ও আতঙ্কে। কোন সময় যেন মৃত্যু আমাদের দরজায় হানা দেয়!

হাজারো চেষ্টার পরও মানুষ যেন আজ ভাইরাসের কাছে অসহায়। সবার মুখে মুখে আজ এক নাম করোনা, করোনা; যা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি যদি বাংলাদেশের কথা বলি, তবে আক্রান্ত হওয়ার আগে যে বিষয় আসে, সেটি হচ্ছে আমাদের প্রস্তুতি কেমন? মোকাবিলার সমর্থ কি আছে আমাদের? দেশে দিন দিন এর সংখ্যা যেন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। মানুষ আজ বাঁচার জন্য ঘরমুখী হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানে না চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়। দেশ যখন করোনার ভয়ে আক্রান্ত, ঠিক তখনই দেশে এক নতুনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। সেটি হলো ডেঙ্গু। এর আগে ২০১৯ সালেই আমরা এর ভয়াবহতা লক্ষ করেছি। করোনা ও ডেঙ্গুর মধ্যে যে লক্ষণের মিল খুঁজে পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে জ্বর। এখন প্রশ্ন হলো কোনো রোগী যদি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে যায়, তবে তার করোনা নাকি ডেঙ্গু হয়েছে, তা হয়তো আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা অনেকটা কষ্টকর হবে। যাইহোক, বিষয়টা আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়া যাক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, এই বছরের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে ২১ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০০। ২০১৯ সালে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছিল ৭৩ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার তা প্রায় তিনগুণ বেশি। যদি আগাম পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে তা হয়তো অতীতকে পেছনে ফেলে দেবে। সেই সঙ্গে বাড়বে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহারও। আমরা হয়তো করোনার জন্য চীনকে দায়ী করছি, কিন্তু এই চীনই কিন্তু এখন অনেকটা নিরাপদ অবস্থানে আছে।

কিন্তু বাংলাদেশে যদি ডেঙ্গু মহামারি হয়, তবে তা সামলানোর পুরোপুরি ব্যবস্থা কি আছে বাংলাদেশের? নাকি অকালে ঝরতে যাচ্ছে কিছু তাজা প্রাণ? চিন্তা করে দেখুন, ঘরে বসেও কিন্তু আমরা নিরাপদে নেই। দেশের এই প্রতিকূল অবস্থায় আপনার আর আমার সচেতনতা একটু হলেও কাজে আসতে পারে। দেশ ও দেশের প্রশাসনকে দোষ দেওয়ার আগে সচেতন হতে হবে আমাদের। ড্রেনগুলোতে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে জমে থাকা পানিতে ব্লিচিং পাউডার দিতে হবে, যাতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে। সুস্থ ও সুন্দর একটি দেশ আপনার ও আমার সবারই কাম্য।

*লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]