সিলেটের 'মানবতার ঘর' স্থাপন হোক দেশে

খাদ্যসামগ্রী ও পোশাক রাখা থাকবে মানবতার ঘরে। প্রয়োজন অনুযায়ী দরিদ্র মানুষ এখান থেকে পণ্য ও খাদ্য নিতে পারবেন। ছবি: লেখক।
খাদ্যসামগ্রী ও পোশাক রাখা থাকবে মানবতার ঘরে। প্রয়োজন অনুযায়ী দরিদ্র মানুষ এখান থেকে পণ্য ও খাদ্য নিতে পারবেন। ছবি: লেখক।

‘মানবতার ঘর’ কথাটি শুনেই মনটা ভরে যায়। আর ভরে যাওয়ারই কথা। কারণ এটা অসহায় অবহেলিত মানুষের উপকারের ঘর। তবে এ ঘর সে ঘর নয়। এ ঘর বসবাসের বা থাকার ঘর নয়। এ ঘর দরিদ্র মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘর। যেখানে রয়েছে খাবার এবং প্রয়োজনীয় পণ্য।

হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য ও বস্ত্রের জোগানে সিলেট নগরীতে শুরু হলো এমন ‘মানবতার ঘর’। সম্ভবত বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ প্রথম।

খাদ্য ও বস্ত্র নিয়ে কারও বাসায় নয়, রাখা থাকবে একটি ছোট্ট ঘরে। এখানে রাখা খাদ্য ও কাপড় নিজ দায়িত্বে নিয়ে যেতে পারবেন যেকোনো হতদরিদ্র মানুষ। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি (গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা) সিলেট বিভাগীয় শাখা।

এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। করোনা ভাইরাসের মহামারির জন্য সারা দেশে ছুটি চলছে। এতে নিম্ন আয়ের অনেকে বিপাকে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এই উদ্যোগকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে সারা দেশে এমন ‘মানবতার ঘর’ স্থাপন করা হলে নিম্ন আয়ের অসহায় অবহেলিত মানুষেরা কিছুটা হলেও বেঁচে থাকার অবলম্বন পাবেন।

গত মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। সিলেটের প্রথম মুসলমান হজরত গাজী বুরহান উদ্দিনের স্মৃতিবিজড়িত ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজি হালু মাঝি জামে মসজিদের সামনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি (গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা) সিলেট বিভাগীয় শাখার। ছবি: লেখক
এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি (গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা) সিলেট বিভাগীয় শাখার। ছবি: লেখক

মসজিদের পাশে স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা একটি ঘরে খাদ্যসামগ্রী রাখা রয়েছে একপাশে। অন্য পাশে রাখা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ।

সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখানে রাখা থাকবে একেকটি খাদ্যের প্যাকেটে ২ কেজি চাল, আধা কেজি ডাল, আধা কেজি পেঁয়াজ, আধা লিটার তেল, এক কেজি লবণ ও ২ কেজি আলু। খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি রাখা থাকবে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্য। যেকোনো হতদরিদ্র মানুষ এখান থেকে পণ্য নিয়ে যেতে পারবেন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম শুরু করা হলেও পর্যায়ক্রমে সিলেটের সব ওয়ার্ডে এটি চালু করা হবে।

অনেকেই জানেন, ২০১৫ সালে ইরানের উত্তর-পূর্বের শহর মাশাদে প্রথম ‘মানবতার দেয়াল’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিতে অজ্ঞাত কোনো ব্যক্তি এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বরে মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷

এই মানবতার ঘরটিকেও আমরা সারা দেশে স্থাপন করতে পারি। আমাদের একটু পরিশ্রম আর অর্থের বদৌলতে বদলে যেতে পারে পরিবার, সমাজ, দেশ। সব বিত্তবান এবং উদ্যোগী যেন সারা দেশে এমন মানবতার ঘর স্থাপন করেন।

লেখক: তরুণ উদ্যোক্তা, স্বেচ্ছাসেবী, লেখক