দিনাজপুরে শত শত ক্ষত থাকা এক রাস্তার আর্তনাদ

দিনাজপুরের বিরামপুরের কাটলা-দাউদপুর গ্রামের এই মেঠোপথটিতে অনেক ক্ষত আছে। ছবি: লেখক
দিনাজপুরের বিরামপুরের কাটলা-দাউদপুর গ্রামের এই মেঠোপথটিতে অনেক ক্ষত আছে। ছবি: লেখক

রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৩ কিলোমিটারের মতো। প্রস্থ ৩ মিটার। রাস্তাটি কাঁচা। দক্ষিণ প্রান্তে ২২৬ মিটার ও উত্তর প্রান্তে ৩০০ মিটার সিসি ঢালাই আছে। প্রায় ৩ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা সড়কটি চলে গেছে সীমান্তের শূন্য রেখায়। আর এ আঁকাবাঁকা সড়কে শত ক্ষত। কোনো কোনো ক্ষত প্রায় দশমিক ৪-৫ মিটার বিস্তৃত হয়ে নিচের দিকে দশমিক ১ মিটার গভীরতায় চলে গেছে।

এটি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলা-দাউদপুর গ্রামের একটি মেঠোপথ। কাটলাবাজার থেকে সড়কপথে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় দিক দিয়ে দাউদপুরে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও বাইপাস রাস্তা হিসেবে মকছেদ আলী মণ্ডল সড়ক হয়ে মুক্তিযোদ্ধা দারাজ উদ্দিন সড়ক দিয়ে ওই গ্রামে যাওয়া অনেক সহজ। এ জন্য ওই বড় সড়কের তুলনায় এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারীর সংখ্যাও কয়েক গুণ বেশি।

যান্ত্রিক যানবাহনের ঘূর্ণমান রাবারের বিটযুক্ত চাকার চাপায় ক্ষতগুলো প্রতিদিন ক্ষয়ে ক্ষয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হচ্ছে রাস্তাটি। যানবাহনের চাকার কারণে সড়কের ধূলিকণা বাতাসের সঙ্গে হারিয়ে যায় অথবা পাশের জমিতে মিশে যায়।

২০ বছর আগের লাউডগা সাপের দেহের মতো চিকন রাস্তাটি সময়ের বিবর্তনে আজ দেখতে অনেকটা স্বাস্থ্যবান হলেও পুরো শরীর ক্ষতে ভরা।

দাউদপুর গ্রামটি সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় এখানে প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ চলাচল করে। আর তারা এ সময় মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান এমনকি প্রাইভেট কারে করেও যাতায়াত করে। এ সড়কে চলাচলকারী অধিকাংশই যুবক। আর তাঁদের মধ্য ৯৫ ভাগই আসেন মাদক সেবন করতে। আর মাদকসেবীদের বেপরোয়া চলাচলও রাস্তাটির জরাজীর্ণ অবস্থার জন্য দায়ী।

২ দশমিক ৩ কিলোমিটার রাস্তাটিতে প্রায় ছোট-বড় শতাধিক গর্তের কারণে মোটরসাইকেল বা ভ্যানে চলাচল এখন অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। এ রাস্তা দিয়ে রোগীকে নিয়ে বহন করাও কষ্টকর। রাতের বেলা ঘুটঘুটে অন্ধকারে এ রাস্তায় চলাচল এক ভয়ংকর ব্যাপার। একে তো রাস্তার মাঝে উঁচুনিচু গর্ত, তার ওপর মাদকসেবীদের মোটরসাইকেলের তীক্ষ্ণ আলো পথচারীদের প্রায়ই দুর্ঘটনায় ফেলে।

আসছে বর্ষাকালে রাস্তার এ উঁচুনিচু সব গর্ত পথচারীদের জন্য বিপদের কারণ হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ। এ পথে চলতে কেউ পিছলে পড়বে। কাদায় গর্তে ভ্যানের চাকায় সংসার চলা মানুষদের ভ্যান আটকে যাবে। ভ্যানচালকের কষ্টে কেনা ভ্যানের চাকার বিয়ারিং হয়তো ভেঙে যাবে। ভ্যানে বসে থাকা মানুষও আছড়ে পড়বে রাস্তায়। ঝাঁকুনিতে ছিটকে পড়তে পারে পাশের ধানখেতে।

এ রাস্তায় দিয়ে চলাচলকারী স্থানীয় মানুষদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন, রাস্তাটি পাকা করা হোক।

নষ্ট রাস্তায় পড়ে আহত পথচারীর হয়তো কোমরে বা পায়ের ব্যথা একসময় ওষুধে সেরে যাবে। কিন্তু যে রাস্তার শরীরে শত শত ক্ষত, ছোট–বড় গর্তের রাস্তাটি কি তার কথা কাউকে বলতে পারে না। হয়তো রাস্তাটি ব্যথায় আর্তনাদ করে বলতে যায়, ‘ওহে মানুষ, আমার শরীরে তীব্র যন্ত্রণা, আমার শরীরে ইট-পাথরের প্রলেপ দাও, কষ্ট থেকে আমাকে মুক্তি দিয়ে তোমরা পথ চলো নির্বিঘ্নে।’