ইতালি-আমেরিকা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারকে সাহায্য করুন

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যস্ত নিউইয়র্ক এখন খালি। ছবি: সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের কারণে ব্যস্ত নিউইয়র্ক এখন খালি। ছবি: সংগৃহীত

ইতালিতে যখন একজনের করোনা ধরা পড়ে তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘করোনা নিয়ে আতঙ্কের কোনো কারণ নাই। সবকিছুই আমাদের কন্ট্রোলে আছে।’

ইতালিতে যখন ৫০ জন করোনায় আক্রান্ত তখন ইতালির রেস্তোরাঁগুলো ছিল জমজমাট, শপিং মলগুলোতে সবার আড্ডা ছিল। কলকারখানা খোলা ছিল। সাধারণ জনগণ বলেছিলেন, ‘ওই প্রদেশে করোনা হয়েছে, আমাদের এখানে নাই।’ কেউ কেউ বলেছিল, ‘আমি তো সুস্থ আছি, আমার তো করোনা হয় নাই। সুতরাং আমার ভয় নাই।’

কেউ কেউ বলেছিল, ‘যারা চীন সফর করেছে তাদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্যদের নাই।’ কেউ কেউ বলেছেন, ‘করোনা ওই প্রদেশ থেকে এই প্রদেশ আসবে না।’

ঠিক এই সময়েই ইতালির সিরি আ লিগের ফুটবল খেলা চলে। একটি ফুটবল ম্যাচ ইতালির করোনাভাইরাসের প্রসার করতে সাহায্য করে। সব পত্রপত্রিকা বলে, এই খেলা থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, যার কারণে আজকে ইতালিজুড়ে মৃত্যুর মিছিল চলে ও করোনার দখলে পুরো দেশ।

এবার আসি আমেরিকায়। যখন এখানে ৫০-এর অধিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, করোনা পুরোপুরি কন্ট্রোলে আছে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ অত্যন্ত কার্যকর। কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমেরিকার লোকজন নির্বিঘ্নে নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসসহ সব জায়গায় অবাধে চলাচল করেছে। যখন করোনা ভাইরাসে ২০০-এর অধিক আক্রান্ত, তখন আমেরিকার মানুষ বলেছে ১৪-১৫ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ২০০ জন আক্রান্ত। আর আজ প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার শুধু আমেরিকায় আক্রান্ত।

এবার আসি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। আমাদের দেশের মানুষ তিন ধরনের সব দিক দিয়ে। ধনীর দিক থেকে—উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত। সাহসের দিক থেকে—বেশি সাহসী, মাঝারি সাহসী, কম সাহসী। সমালোচনার দিক থেকে—সব সময় সমালোচনা করে, মাঝেমধ্যে সমালোচনা করে, সমালোচনার সুযোগ পেলেই করে।

জ্যামের ঢাকা এখন ফাঁকা। ছবি: সংগৃহীত
জ্যামের ঢাকা এখন ফাঁকা। ছবি: সংগৃহীত

যখন সরকার সাধারণ ছুটি দেয় না, তখন বলে, কেন সাধারণ ছুটি দেয় না? যখন সরকার ছুটি ঘোষণা করে, তখন বলে কেন লকডাউন করল না? পাবলিক যানবাহন বন্ধ কেন করে না?

সরকার সবই করল। ছুটি দিল। তখন বাংলাদেশের মানুষ ঈদ মনে করে সবাই দেশে গেল। সরকার সাধারণ ছুটি যখন দিল, তখন মনের আনন্দে ঘুরতে যায় বিভিন্ন জায়গায়। যখন পার্ক ও বিনোদন বন্ধ করল, তখন সবাই মিলে আড্ডা দিতে লাগল। পাবলিক যানবাহন বন্ধ করল। যখন ৭ দিন ছুটি শেষ হলো তখন সবাই যে যেভাবে পারে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিল।

সরকার সবকিছুই করল শুধু একটা আদেশ পালনের জন্য, সেটা হচ্ছে ঘরে থাকুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।

আর্থিক দিকের কথা চিন্তা করে সরকার ব্যাংক খোলা রাখল। কিন্তু আপনারা কী করলেন, ব্যাংকের একটা চেক হাতে নিয়ে বাইরে হাঁটাহাঁটি করেন। আর পুলিশ বা সেনাবাহিনী জিজ্ঞেস করলে বলেন, ব্যাংকে যাচ্ছেন টাকা তুলতে।

সরকার সবার কথা ভেবেই হোক, ভাইরাস থেকে এ দেশকে রক্ষা করার জন্য তাদের দায়িত্ব থেকেই হোক, যখন এসব করল, তখন আপনি কি সরকারকে সাহায্য করেছেন এই একটা আদেশ পালন করে? করেন নাই। সুতরাং যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমি-আপনি দায়ী, সরকার দায়ী নয়।

এখনো সময় আছে, সরকারকে সাহায্য করুন, ইতালি-আমেরিকা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। এতে আমার-আপনার সবার উপকার হবে। জাতি ভয়ানক করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে।

*লেখক: সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তা