দুর্ভাগা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ

প্রতিকী ছবি
প্রতিকী ছবি

২০১৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শেষেই আগস্টে অ্যাশেজ দিয়ে শুরু হয়েছিল বহুল প্রতীক্ষিত আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। এর আগে দুবার যা আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছিল আইসিসি। এর আগের দুবারের নিয়মকানুনের সঙ্গে এবারকার নিয়ম ছিল পুরোই আলাদা।

টি-টোয়েন্টির জন্য আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ওয়ানডের জন্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আবার ওয়ানডের জন্য আরেকটা টুর্নামেন্টও ছিল, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। কিন্তু প্রত্যেক ফরম্যাটের জন্য একেকটা বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় আইসিসি। তাই তো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বদলে টেস্টের নতুন লিগ আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পরিকল্পনা। সবচেয়ে লম্বা টুর্নামেন্ট!


২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তাব রাখেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মার্টিন ক্র। এরপর ২০১০ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ করার, ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পরিবর্তে। চার বছর ধরে চলবে এ টুর্নামেন্ট। চার বছরে টেস্ট খেলুড়ে দশ দেশ খেলবে, আর শেষে র‍্যাঙ্কিংয়ের প্রথম চার দলের মধ্যে হবে আসল খেলা। সেই চার দল নিয়ে প্লেঅফ, এরপর ফাইনাল। ফাইনাল হবে লর্ডসে ২০১৩ সালে।
কিন্তু না, বোর্ডগুলোর সঙ্গে আর্থিক সমস্যা, স্পনসর, ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে সমস্যার কারণে হলো না। এ কারণে ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়ে গেলো ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। ২০১২ সালে সিদ্ধান্ত হলো ইংল্যান্ডেই হবে শেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।


২০১১ সালে সিদ্ধান্ত হলো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হবে ২০১৭ সালের জুন মাসে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ চার দল খেলবে তিন ম্যাচের ওই টুর্নামেন্ট। দুটি সেমিফাইনাল, একটা ফাইনাল। ফাইনাল হবে টাইমলেস টেস্ট ফরম্যাটে। মানে পাঁচ দিনের ধরাবাঁধা আর থাকবে না। যতক্ষণ না ম্যাচের ফলাফল আসছে, ততক্ষণ খেলা চলতে থাকবে। ম্যাচে হয় একদল জিতবে, নাহয় টাই হবে, কিন্তু ড্র হতে পারবে না।


টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরই কপাল খারাপ! ২০১৪ সালে আবার সিদ্ধান্তে এল পরিবর্তন। বাতিল হওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হবে, এবারও আয়োজন করবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। কারণ একই, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করার কথা ছিল তাদের। কিন্তু সেটা না হওয়াতে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে তাঁরা পেল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। শুধুই আয়োজনই করতে পারল তাঁরা, ট্রফি আর পাওয়া হলো না!

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

এরপর গত বছর শুরু হলো তৃতীয় প্রচেষ্টা। ৯ দল খেলবে এ টুর্নামেন্টে। প্রতিটি দল খেলবে ছয়টি ভিন্ন দলের সঙ্গে ছয়টি সিরিজ। তিনটি হোমে এবং তিনটি অ্যাওয়েতে। তবে প্রতি সিরিজে ম্যাচের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, ২ থেকে ৫ পর্যন্ত হতে পারে। প্রতি সিরিজে পয়েন্ট ১২০, মানে সিরিজের সব ম্যাচ জিতলে ১২০ পয়েন্ট পাবে বিজয়ী দল। আর প্রতি ম্যাচের জন্য পয়েন্ট হচ্ছে ১২০–কে ওই সিরিজের ম্যাচসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যত আসে তা। ড্র হলে জয়ের পয়েন্টের এক-তৃতীয়াংশ, টাই হলে জয়ের পয়েন্টের অর্ধেক। অর্থাৎ দুই ম্যাচের সিরিজে জিতলে ৬০ পয়েন্ট, টাই হলে দুই দল পাবে ৩০ পয়েন্ট করে আর ড্র হলে পাবে ২০ পয়েন্ট করে। জুন পর্যন্ত চলবে এভাবেই। এরপর সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী দুই দল খেলবে ফাইনাল। জুনে, হোম অব ক্রিকেট লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।


এবার চলছিলও ভালো মতোই। বাংলাদেশও তিন ম্যাচে খেলে ফেলছে, পয়েন্ট শূন্য। কিন্তু এবার বাধা হয়ে দাঁড়াল বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস। ক্রিকেটই যেখানে বন্ধ, সেখানে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হবে কী করে! জীবনই যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে ক্রিকেটরই-বা মূল্য কতখানি! আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ দুই বছরের দীর্ঘ একটা টুর্নামেন্ট। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত অনেকগুলো সিরিজ হতো এ টুর্নামেন্টের। কিন্তু করোনার কারণে আইসিসির সূচিতে লেগেছে মহা গন্ডগোল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত অনেকগুলো সিরিজই বাতিল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এরপর ২০২১ সাল থেকে আরেকটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ার কথা। তাই চলমান চ্যাম্পিয়নশিপের কী হবে, তা পুরোপুরিই অনিশ্চিত। হয়তো তৃতীয়বারের মতো ব্যর্থ হবে আইসিসি!


দুঃখ হয় ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বেচারার জন্য। তার শুরু হয়ে শেষ আর হয় না! কবে যে তার পূর্ণতা প্রাপ্তি হবে!

*লেখক: শিক্ষার্থী। [email protected]