ঈদ শপিং হোক অনলাইনে, সুরক্ষিত থাকুক শিশু

শিশুদের কাপড় অনলাইনে কিনুন। ছবি: সংগৃহীত
শিশুদের কাপড় অনলাইনে কিনুন। ছবি: সংগৃহীত

আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। দুই ঈদের মধ্যে মানুষ দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করে। নতুন নতুন বাহারি পোশাকের রঙে ঈদের দিনটি ছন্দিত হয়ে ওঠে ঈদগাহ। সব বয়সীদের মধ্যে এই পোশাকের খেলা লক্ষ করা গেলেও শিশু, কিশোর ও কিশোরীদের মধ্যে এর ছোঁয়াটা বেশি দেখা যায়; যা ঈদকে আরও বর্ণিল করে তোলে।

বর্তমানে আমাদের দেশে চলছে করোনার মতো ভয়াবহ একটা মহামারি। গ্রাস করে ফেলেছে পুরো পৃথিবীকে। তরুণ, যুবক, বৃদ্ধদের সঙ্গে শিশুরাও এর কবলে পড়ছে নিয়মিত। চিকিৎসকদের মতে, হাত ধোয়া, বাইরে গেলে মাস্ক পরার পাশাপাশি অন্যদের সংস্পর্শে না আসা—এর জন্য ঘরে থাকা জরুরি। ঘরে থাকলে বাইরের লোকের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা পেতে পারি। আর এর জন্য সারা দেশের স্কুল–কলেজ ও বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের সব শপিং মল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ দীর্ঘদিন থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ঈদ উপলক্ষে সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হয়েছে লকডাউনে বন্ধ থাকা শপিং মলগুলো। ইতিমধ্যেই রাজধানীর বড় দুটি শপিং মল না খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। সংবাদ এবং পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ শপিং মল বন্ধ থাকবে এবারের ঈদে। আবার কোনো দোকানমালিক এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন।

ঈদের আগে দোকান ও শপিং মল পুনরায় চালু করা অর্থনীতির স্থবিরতাকে কাটিয়ে উঠতে সহায্য করলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এর কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। বাজারে সেনাবাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তীক্ষ্ণ নজর না থাকলে হয়তো এই পরিস্থিতি অন্যদিকে যেতে পারে।

লকডাউন শিথিল হলেও বিপাকের আশঙ্কা কাটেনি এখনো। প্রবীণ, শিশু—এরা বরাবরই ঝুঁকিতে। সঙ্গে দুর্বল স্বাস্থ্য যাদের, তারা এখনো করোনার ঝুঁকিমুক্ত নয়। ঈদে শিশু–কিশোরদের মধ্যে ঈদের শপিং করার ব্যাপারটা অনেক বেশি। এমন অবস্থায় শপিং মলে ঈদের শপিং করতে যাওয়া একটি শিশুর পক্ষে হুমকিস্বরূপ। বর্তমান দেশে দৈনিক আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা আগের থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, ফলে নির্বিঘ্নে তাঁরা সর্বত্র চলাফেরা করবেন এবং ভাইরাসটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেন, সংক্রমিত লোকেরা যদি বাজারগুলোতে ভিড় করেন এবং বিক্রয়কর্মী হিসেবে দোকানগুলেতে কাজ করেন, তবে তাঁরা ভাইরাস সংক্রমণে ‘সুপার স্প্রেডার’ হয়ে উঠবে। একটি শিশু এই পরিস্থিতিতে শপিং মলে গেলে করোনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। তাই ঈদে শপিং মলে না যাওয়াই একটি শিশুর জন্য মঙ্গল। আজকের শিশু–কিশোরেরা আগামী দিনে দেশের কর্ণধার হয়ে কাজ করবে। তাই এই অবস্থায় অন্তত শিশু–কিশোরদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ঈদের শপিং নিশ্চিত করা জরুরি। এতে করোনার ঝুঁকি কিছুটা কম থাকতে পারে। আসুন সবাই নিজ দায়িত্বে পরিবারের শিশু–কিশোরদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক ‘ছুটিরপাতা’ (কিশোরদের ছোটকাগজ), উলিপুর, কুড়িগ্রাম। [email protected]