করোনায় মানুষের পাশে ট্রান্সজেন্ডার অভিনেত্রী তাসনুভা

হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার, সেক্স ওয়ার্কারদের ঘরে বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে কাজ শুরু করেন মঞ্চ অভিনেত্রী তাসনুভা শিশির। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার, সেক্স ওয়ার্কারদের ঘরে বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে কাজ শুরু করেন মঞ্চ অভিনেত্রী তাসনুভা শিশির। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

দেশে দিনে দিনে বাড়ছে করোনার প্রকোপ। করোনা মোকাবিলায় যখন সবাই সাধারণ দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, কাজের বুয়াসহ খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাবছেন। ঠিক তখন মনে হয় বাদ পড়ে যায় সমাজে সবচেয়ে অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার, সেক্স ওয়ার্কারদের ঘরে, বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে কাজ শুরু করেন মঞ্চ অভিনেত্রী তাসনুভা শিশির।

প্রথমে ব্যক্তি হিসেবে কাজ শুরু করেন সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে ২০ মার্চ। কিন্তু নিজ কমিউনিটির মানুষের জন্য সহায়তাটা বিশেষ দরকার। সেই প্রয়োজন মেটাতেই পাশে দাঁড়ান অন্য ট্রান্সজেন্ডার বন্ধু হোচিমিন ইসলাম ও একটি বন্ধু সংগঠন আলোকিত শিশু। দুই বন্ধুসহ মোট চারজন মিলে কাজ শুরু করেন।

পরবর্তী সময়ে তাদের সঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উন্নয়নকর্মী, নাট্যকর্মী ও অনেক ছোট–বড় সংস্থা। তাদের বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন খুশি কবীর, শরনিলা এন, কবীর, ফারহানা হাফিজ, সামিনা লুতফা নিত্রা, সেলিনা আহমেদ এনা, নাহিদা ডলি, তাপসি রাবেয়া স্মৃতি, সাদিয়া নাসরিন, ফাতেমা রিজভীসহ আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি। এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশিষ্ট অভিনেত্রী। তাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন আলোকিত শিশু, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, ফুটস্টেপস, আলোকিত প্রজন্ম।

এ সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, কুষ্টিয়া, খুলনা, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামে প্রায় ৫৫০ জন ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া ও ১০টি সাধারণ নিম্নবিত্ত ও ৬টি মধ্যবিত্ত পরিবারকে ৭ থেকে ১০ দিনের প্রয়োজনীয় খাবার ও কিছু নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে।

খাবার পৌঁছানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
খাবার পৌঁছানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

তাসনুভা শিশির বলেছেন, 'আমি ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করি দীর্ঘদিন। এখানে আসলে প্রজেক্ট আসে প্রজেক্ট যায়, মেইনস্ট্রিমের মানুষ প্রজেক্টের টাকায় বিদেশ যায়, ক্যারিয়ার গড়ে, কিন্তু শিশিরদের নিজেদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। এখন এই সময় এই প্রান্তিক মানুষের কথা ভাবতে হবে, খাবার পৌঁছাতে হবে। সে জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ শুরু করেছি আমরা। করোনা মোকাবিলায় তাগিদ অনুভব করছিলাম পরিস্থিতি মোকাবিলায় অসহায় প্রান্তিক ট্রান্স বোনদের বা ভাইদের কাছে খাবার পৌঁছাতে হবে যেকোনো মূল্যে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এই সমন্বয় করা।'

তাসনুভা শিশির বলেন, 'যারা আমাদের সাপোর্ট করে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা আর অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। বিশেষ ধন্যবাদ হোচিমিন, শোয়েব, মমিনুল, মৌরি, কাব্যসহ টিমে যারা সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। আসলে মহামারি–সংক্রান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাষ্ট্র, সরকার ও প্রাইভেট সবার একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা দরকার। আমাদের সরকারি সহায়তারও প্রয়োজন। দেশে করোনা মোকাবিলায় যে যেখান থেকে কাজ করছেন, সবাই সবাইকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। যাঁরা যাঁরা করোনা মোকাবিলায় কাজ করছেন, তাঁদের এসব জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখেই কাজ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উন্নয়নকর্মী, নাট্যকর্মী ও অনেক ছোট বড় সংস্থা। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উন্নয়নকর্মী, নাট্যকর্মী ও অনেক ছোট বড় সংস্থা। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

আলোকিত শিশুসমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে কাজ করছে। মূলত আলোকিত শিশু বিশেষ জনগোষ্ঠীর মাঝে কাজ করছে। যেসব জনগোষ্ঠী সমাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। ২০১৫ সাল থেকে সংগঠনটি কার্যক্রম শুরু করে। ইতিমধ্যে দুইটা স্কুল আছে। একটি নাটোরের সুইপার কলোনিতে আরেকটি মুন্সিগঞ্জে বেদেপল্লিতে। বেদেরা মূলত নৌকায় বসবাস করে। স্কুল দুটিতে প্রায় ১০০ জন বাচ্চা পড়াশোনা করে। এবং তারা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে শিক্ষা পেয়ে থাকে। এ দুটি স্কুলের বাচ্চারাই তাদের প্রথম কোনো জেনারেশন যারা স্কুলে যাচ্ছে। আলোকিত শিশু শুধু তথাকথিত শিক্ষা নিয়ে, সমাজের আদর্শ মানুষ তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই বাচ্চাদের মাঝে নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধি, সচেতনা সৃষ্টি, সামাজিক দায়বদ্ধটা পালনের উৎসাহী করে থাকে। ইতিমধ্যে, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় আলোকিত শিশু 'আনলিশেনিং ইয়ুথ' নামে ঢাকাসহ একটা কার্যক্রম চালিয়েছে, যার মাধ্যমে তরুণদের মাঝে দক্ষতা, নৈতিকতা, উগ্র চিন্তাধারণা নিরাসন, সামাজিক অবক্ষয় রোধে ভূমিকা রেখেছে। এই কার্যক্রমে পাঁচ শতাধিক তরুণ অংশগ্রহণ করে।

ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির জন্য আলোকিত শিশুর ফান্ডিং কোরডিনেটিংয়ের দায়িত্ব কোভিড–১৯–এর সময় তাসনুভাকেই মূলত দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে মোংলা, খুলনা, সিরাজগঞ্জে ট্রান্সজেন্ডার বোনদের জন্য ত্রাণ (উপহারসমাগ্রী) ও বানিয়াশান্তার যৌনপল্লিতে প্রায় ১০০ পরিবারের ত্রাণ (উপহারসামগ্রী) ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের জন্য কাজ করছেন তাঁরা।