অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা এখন সময়ের দাবি

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

বদলে যাওয়াই জীবনের ধর্ম। কিন্তু আমরা কি এভাবেই জীবনের, আমাদের চিরচেনা পৃথিবীর পরিবর্তন দেখতে চেয়েছি? উত্তরটা নির্দ্বিধায় “না”। আমরা আসলে সময়ের স্রোতে ভেসে চলেছি লাগামহীনভাবে। শত ব্যস্ততার মাঝে আমাদের সামান্য ফুরসৎ মেলে না অনাগত ভবিষ্যৎ, অনাগত বিপর্যয় নিয়ে ভাবার। 

করোনার হঠাৎ আগমন যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাদের ভুলটা ঠিক কোথায়। জীবনের সময়গুলো চিরদিন এক ভাবে কাটে না। তাতে বেলা-অবেলায় আসে পরিবর্তন। এই পরিবর্তন কার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলবে তা নির্ভর করবে নিতান্তই ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। সুতরাং দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচক রূপে প্রতিষ্ঠা করার এখনি উপযুক্ত সময়। অন্যথায় অস্ত্রবিহীন জীবনযুদ্ধে যে কাররই মাথা কাঁটা পড়তে পারে।
সরকার কর্তৃক লকডাউন ঘোষণার পর আমি নিজেও করোনাকে খুব যুতসইভাবে গ্রহণ করিনি। এখন বিষয়টা ভাবলেই মনে হয়- কি বোকার রাজ্যেই না বসবাস করে চলেছি। আমার মত অপরিণামদর্শী শিক্ষিত জাতি নিয়ে দেশ কতটাই বা এগিয়ে যাবে! এ কথা বলে একদিকে যেমন নিজেকে নিজের অসচেতনতার জন্য ধিক্কার দিচ্ছি, অন্যদিকে নিজেকে সময় সচেতন হতেও নির্দেশনা দিচ্ছি।
এবার আসি কিছু স্পরশকাতর বিষয় নিয়ে। কিডনি আর অনিরাময়যোগ্য রোগ এসএলই নিয়ে গত প্রায় ৮ মাস ধরেই বিড়াম্বনায় ভুগছি। অসুস্থতায় শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বস্তির মাত্রাটা মাত্রাহীন হয়ে ওঠে যখন এর সাথে আর্থিক দুর্দশাটাও জুটি বাঁধে। বলতে দ্বিধা নেই যে, স্রষ্টার অশেষ রহমত, মানুষের ভালোবাসা আর তাদের আর্থিক সহায়তায় আমি আজও টিকে আছি। রোগের সাথে লড়াই করে চলেছি প্রতিনিয়ত। লকডাউনে পরিবারের অভিভাবক বড় ভাইয়ের ব্যবসা গেল বন্ধ হয়ে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভাইয়া আর্থিকভাবে আমার পাশে দাড়াতে পারছে না। আমি যেন হতাশায় ডুবে যাচ্ছি একটু একটু করে। আর কিছু না হোক ঔষধ তো নিয়মিত খেতেই হবে আমাকে। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানালাম। করোনার প্রভাবে সবাই যখন আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন ঠিক সে সময়ও আমার সেই শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামর্থ্য অনুযায়ী আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
জানি না করোনা আর কতদিন তার রাজত্ব চালাবে এই পৃথিবীতে। জানি না সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমিও কতদিন টিকে থাকবে পারব। শুধু বলব- বর্তমানে আমি টিকে আছি। আর তা সম্ভব হয়েছে স্রষ্টার পরে মানুষের ভালবাসায়।

করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাস

করোনার দিনগুলোতে অসংখ্য মানুষ, সংগঠন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবিদার। বিপদে কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয় এই ঘটনাগুলো যেন ভবিষ্যতের রোল মডেল হয়ে থাকবে। বিশেষ করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কথা বলতেই হয়। ওদের মতো আমারও ইচ্ছা করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু আমার না আছে শারীরিক ক্ষমতা না আছে আর্থিক ক্ষমতা। খোদার দরবারে মোনাজাতে দুহাত তুলে দোয়া করা ছাড়া আমার যেন আর কিছু করার নেই। শুধু একটি ঘটনার কথা বলব। আমি যেখানে থাকি সেখানে একজন আপু আছেন। তিনি একজন এতিম মানুষ। কষ্টেই দিন চলে তার। করোনাতে তার আর্থিক সংকট আরও বেড়ে গেছে। আমার খুব খারাপ লাগে তার জন্য। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের টাকা থেকে আপুর এক মাসের খাবার কিনে দেব। কিনে দিলাম। উনি অনেক খুশি হলেন। আমিও খুশি হলাম। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালাম তিনি যেন এই ভাল কাজের সওয়াব আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে বিলি করে দেন। যে মানুষগুলো দিনের পর দিন একটু একটু করে আমার বুকে সাহস সঞ্চার করেন।
আমি যখন এই লেখাটা লিখছি তার কিছু সময় আগে কাওরান বাজারে আমার মোবাইল ও টাকার ব্যাগ ছিনতাই হয়ে যায়। আমার মনটা খারাপ যেহেতু বিপদের মাঝেও আরেক বিপদে পড়েছি। তবুও আমি লিখতে বসেছি। কারণ এই লেখার মধ্য দিয়েই আমার কথাগুলো সবাই জানবেন। আমার ব্যথার ভাগিদারও হবেন। যদি এভাবে মানুষ থেকে মানুষে দুঃখ চলে যায় তাহলে দিন শেষে মূল হৃদয়ে দুঃখ থাকে কতটুকু? আমি আশাবাদী মানুষ। তাই বিশ্বাস করি খুব শীঘ্রই করোনামুক্ত হবে আমার এই পৃথিবী। বন্দিজীবন শেষে এক সুস্থ পৃথিবীতে আমাদের দেখা হবে আবারও।

*লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]