দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে সেজেছে প্রকৃতি

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের ষড়্‌ঋতুর বাংলাদেশ। ষড়্‌ঋতুর এই দেশে বারো মাসে মোট ছয়টি ঋতু। একেক ঋতু প্রকৃতিতে একেক রকমের বার্তা নিয়ে আসে এখানে। প্রতি দুই মাস অন্তর ঋতু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এখানকার প্রকৃতিতে চলতে থাকে রূপের পালাবদল।

ষড়্‌ঋতুর বাংলাদেশে ঋতু গণনার দিক থেকে প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। সাধারণত কাঠফাটা রোদ আর গরমের জন্য গ্রীষ্ম ঋতুর খ্যাতি থাকলেও দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজাতেও গ্রীষ্ম ঋতুর জুড়ি নেই।

প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্ম। কাঠফাটা রোদ্দুর আর অসহ্য গরম নিয়ে গ্রীষ্মের প্রকৃতি হাজির হয়েছে আমাদের সামনে। তবু চারদিকে দৃষ্টিনন্দন ফুলের জন্য গ্রীষ্মই যেন স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে। চলুন আজ জেনে নিই গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন ফুলের কথা।

সাত-আটটি পাপড়িযুক্ত দৃষ্টিনন্দন গাঢ় লাল ফুল কৃষ্ণচূড়া। ছবি: লেখক
সাত-আটটি পাপড়িযুক্ত দৃষ্টিনন্দন গাঢ় লাল ফুল কৃষ্ণচূড়া। ছবি: লেখক

কৃষ্ণচূড়া
কৃষ্ণচূড়া আমাদের দেশের অতিপরিচিত সাত-আটটি পাপড়িযুক্ত গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন গাঢ় লাল ফুল। কৃষ্ণচূড়া ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলসহ শহরাঞ্চলেও কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় লালে লাল হয়ে ফুটতে শুরু করেছে অগ্নিরাঙা কৃষ্ণচূড়া ফুল।

কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম delonix regia। কৃষ্ণচূড়াগাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ হলে (১১-১২) মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে এর শাখা-পল্লব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। কুঁড়ি আসার কিছুদিনের মধ্যে পুরো গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে। আমাদের দেশে উজ্জ্বল লাল ও লাল হলদেটে—এই দুই ধরনের কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটতে দেখা যায়। তবে লাল কৃষ্ণচূড়াই সচরাচর আমাদের চোখে বেশি পড়ে। আমাদের দেশে লাল হলদেটে কৃষ্ণচূড়া এখন প্রায় বিরল। লাল হলদেটে কৃষ্ণচূড়াকে অনেকে রাধাচূড়াও বলে।

দৃষ্টিনন্দন পাঁচ পাপড়ির থোকাযুক্ত হলুদ রঙের ফুল সোনালু। ছবি: লেখক
দৃষ্টিনন্দন পাঁচ পাপড়ির থোকাযুক্ত হলুদ রঙের ফুল সোনালু। ছবি: লেখক

সোনালু

সোনালু আমাদের দেশে অতপরিচিত গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন পাঁচ পাপড়ির থোকাযুক্ত হলুদ রঙের ফুল। সোনালু ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল ধরা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা যায়। সোনালু ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম cassia fistula এবং albizia inundata। ইংরেজি ভাষায় সোনালুগাছকে বলা হয় গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি বা সোনালি ঝরনার বৃক্ষ। সোনালুগাছ সাধারণত (১৫-২০) মিটার উঁচু হয়ে থাকে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু গাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী স্থান। এ গাছের বাকল এবং পাতার antibacterial, antioxidant, hepatoprotective, hypoglycemic, hepatoprotective ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এটি ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। সোনালুর ফুল–ফল সবই বানরের প্রিয় খাবার। তাই কোনো কোনো এলাকায় সোনালুর ফলকে বানরের লাঠিও বলা হয়।

ছয় পাপড়ির গোলাপি রঙের ফুল জারুল। ছবি: লেখক
ছয় পাপড়ির গোলাপি রঙের ফুল জারুল। ছবি: লেখক

জারুল
জারুল আমাদের দেশের অতিপরিচিত গ্রীষ্মর দৃষ্টিনন্দন ছয় পাপড়ির গোলাপি রঙের ফুল। পাতাঝরা জারুল বৃক্ষে শীতকালে পত্রশূন্য থাকলেও বসন্তে গাঢ় নতুন সবুজ পাতা গজায় এবং গ্রীষ্মে ফুল ফোটে।
জারুল ফুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলগাছের দেখা মেলে। জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম lagerstroemia speciosa এবং ইংরেজি নাম giant crape-myrtle। জারুলগাছ সাধারণত (১০-১৫) মিটার উঁচু হয়ে থাকে। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতেও জারুল ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং শুকনো এলাকাতেও এদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না।

গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরৎ পর্যন্ত দেখা যায়। ফুল শেষে গাছে বীজ হয়। বীজ দেখতে গোলাকার। জারুল বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। বাংলাদেশে সাধারণত নীলাভ ও গোলাপি এই দুই রঙের জারুল ফুল দেখা যায়। জারুলগাছের বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ছাড়া জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতার চিকিৎসায়ও জারুল যথার্থ উপকারী।