বন্দী দিনে বাবার রান্না

আমার বাবা সত্তরোর্ধ্ব। কারোনাকালে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না শুরু থেকেই। যদিও আগে কখনোই এমন হয়নি। বাইরের কাজ, বাজার সবই করতেন বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু এখন ঘরের সব প্রয়োজনেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে অন্যভাবে। তবে যে কাজটি অন্য কোনো ব্যবস্থাতেই সমাধান করা যাচ্ছে না, তা হলো ঘরের যাবতীয় কাজ।

এমন কঠিন সময়ে মায়ের সাহায্যে এগিয়ে এলেন বাবা। রান্নার সব দায়িত্ব নিলেন নিজের হাতে। বাবার রান্নার হাত বরাবরই ভালো। তবে তিনি আগে রান্না করতেন শখের বসে। আর এখন তিনি পুরোই রাঁধুনি বলতে গেলে মাস্টার শেফ। প্রতিদিনের সাধারণ খাবারের পাশাপাশি ভূরিভোজ খাবার রান্নাতেও বাবা এখন বেশ এগিয়ে।

এরই মধ্যে তিনি দুই দিন রান্না করেছেন কাচ্চি। আর তার রেসিপি পেয়েছেন পত্রিকা থেকে। যদিও প্রথম দিনের রান্নায় খুব একটা খুশি ছিলেন না তিনি। তাই দ্বিতীয়বার কাচ্চি রান্নার পরীক্ষায় নেমে পড়েন। আর এবারের পরীক্ষায় ফলাফল আশানুরূপ। রান্নার স্বাদের জন্য মা ও আমার কাছ থেকে পেলেন ১০০–তে ৯০ নম্বর। আর তাতেই তাঁর উৎসাহ বেড়ে যায় বহুগুণ।

ঈদের দিনের জন্য নতুন কিছু রান্না করবেন বলে ঠিক করলেন বাবা। আর ঈদের ঠিক আগের দিনেই টেলিভিশনে একটি রান্নার অনুষ্ঠানে পেয়েও গেলেন পছন্দের রেসিপি।

ঈদের দিনের জন্য বাবা রান্না করেন চটজলদি চিকেন পোলাও। সকাল থেকেই তার জন্য বিরাট আয়োজন। যদিও সেখানে মায়ের সহযোগিতা ছিল অনেক। বিশেষ এই রান্নাটির জন্য যা যা প্রয়োজন, সবই বাবাকে ঘরে রেখেই বিশেষ ব্যবস্থায় আনা হলো। আর আমাদের বাসার নিচের মুদির একটা দোকান থাকায় বাইরে যাওয়ারও কোনো দরকার পড়ে না।

এই প্রথমবার ঈদে মায়ের হাতের পোলাও ছিল না। কিন্তু বাবার রান্না কোনো অংশে কম ছিল না।

পয়লা বৈশাখেও ছিল বাবার বিশেষ রান্না। তাঁর খুব পছন্দের একটি রান্না কলাপাতায় দেওয়া ইলিশ মাছ। যদিও এখন এর প্রধান উপকরণ কলাপাতা পাওয়াই মুশকিল। তাই এর অভাব পূরণের জন্য শর্ষে দিয়েই রান্না করেছিলেন এটি। আর সঙ্গে ছিল আলু–টমেটোর বিশেষ ভর্তা।

এ ছাড়া প্রতিদিনই খাবার টেবিলে থাকে বাবার ছোটখাটো চমক। এই তো কিছুদিন আগে আমার পছন্দের ভাজা কাঁকরোল আর মিষ্টিকুমড়া হাজির করে বেশ চমকে দিলেন আমাকে। বাবার এখন একটাই চাওয়া, যে করেই হোক একটা শেফের পোশাক চাই তাঁর।

ছোট ছোট এই গল্পগুলোই করোনার এই কঠিন সময়ে চার দেয়ালে বন্দী বাবার মানসিক শক্তিকে ধরে রেখেছে। মনে প্রশান্তি দেয়—এমন কাজগুলোই ভালো রাখতে পারে বাবা–মায়েদের।