মাকে নিয়ে ১৪ দেশে বিশ্বজয়ী নাজমুন নাহার

মায়ের সঙ্গে নাজমুন নাহার। ছবি: সংগৃহীত
মায়ের সঙ্গে নাজমুন নাহার। ছবি: সংগৃহীত

‘মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে

মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বীরপুরুষ’ কবিতার সেই বীরপুরুষকেও যেন হার মানিয়েছেন এক বাঙালি নারী। আর সেই নারী একজন সাধারণ নারী নন। তিনি বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী পরিব্রাজক নাজমুন নাহার। তিনি এরই মধ্যে লাল-সবুজ পতাকা হাতে ১৪০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন। লক্ষ্য ২০০টি দেশে বাংলাদেশের পতাকা পৌঁছে দেওয়ার। এই প্রত্যয়ী মানুষটি সর্বাধিক দেশ ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি নারী। এ জন্য বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের মধ্যে তিনি বিশ্বের ২০০টি দেশে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা পৌঁছে দিতে চান।
শুধু কি তাই? রবীন্দ্রনাথের ‘বীরপুরুষ’ কবিতার বীরপুরুষকে হার মানানো এই নারী তাঁর মাকে নিয়ে পৃথিবীর ১৪টি দেশের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কী অসাধারণ তাঁদের অভিযাত্রা। সেই যাত্রার পরতে পরতে রয়েছে কত অ্যাডভেঞ্চার। বিশ্বজয়ী এই পরিব্রাজকের মাকে নিয়ে পৃথিবীর ১৪ দেশের পথে-প্রান্তরের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার অজানা কাহিনি আজ জানব।

নাজমুন নাহার তাঁর মা তাহেরা আমিনকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর ১৪টি দেশ। মা-মেয়ে একসঙ্গে সেই সময়গুলোকে খুব উপভোগ করেছেন। সেসব স্মৃতি নাজমুন নাহারের কাছে এক অমূল্য স্মৃতি।

বিশ্বের ১৪ টি দেশে মা তাহেরা আমিনকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ১৩৫টির বেশি দেশ ঘোরা নাজমুন নাহার। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের ১৪ টি দেশে মা তাহেরা আমিনকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ১৩৫টির বেশি দেশ ঘোরা নাজমুন নাহার। ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ মাকে নিয়ে কেন পৃথিবী ঘোরার ইচ্ছা হলো? এমন প্রশ্নে নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমি পৃথিবীর অনেক জায়গা ঘুরেছি। দেখেছি পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর উপত্যকা, পাহাড়, মরু, নদী-সাগর আরও কত কী? কিন্তু যখনই কোনো সুন্দর জায়গায় যেতাম, মায়ের মুখটা মনে পড়ে যেত। ভ্রমণের সময় কোথাও কোনো বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখলে তাঁদের মাঝে মায়ের মুখের ছাপ খুঁজে পেতাম। তাঁর দিকে তাকিয়ে মায়ের প্রতিচ্ছবি খুঁজে বেড়াতাম। মনে মনে ভাবতাম, যে মা আমাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন, আর সেই পৃথিবী আমি ঘুরছি, কিন্তু সেই মাকে আমি পৃথিবীর কিছুই দেখাতে পারব না, তা হতে পারে না। তা ছাড়া, আমাদের দেশের মায়েরা সারা জীবন সংসারের শৃঙ্খলে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েন যে তাঁরা এ থেকে কোনো দিন নিজের জন্য কিছু বের করতে পারেন না। এমন ভাবনা থেকেই মাকে নিয়ে বিশ্ব দেখার পরিকল্পনা করে মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম পৃথিবী দেখানোর জন্য।’

নাজমুন নাহার বলেন, কিশোর বয়সের পর থেকে পড়াশোনার সুবাদে তাঁকে বেশির ভাগ সময়ই বাইরে কাটাতে হয়েছে। এই বিশাল সময়ের ব্যবধানে মায়ের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব না থাকলেও, দেখা না হওয়ার ফলে অনেক দূরত্ব বেড়ে যায়। ছোটবেলার মায়ের কাছে গল্প শোনার স্মৃতি ছাড়া তিনি ভুলে যান তাঁর মায়ের অভ্যাস, চলা-বলা অনেক কিছু। এমন অনেক সূক্ষ্ম বিষয় তিনি মনে করতে পারতেন না। এগুলো তাঁকে কষ্ট দিত। তারপর ২০১০ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি তাঁর মায়ের একাকিত্ব দূর করার জন্য মাকে নিজের কাছে নিয়ে যান।

সেই কষ্টের অবসান ঘটে ২০১১ সালে। সুইডিশ এম্বাসিকে একটা চিঠি লিখে মায়ের কাগজপত্র জমা দেন তিনি। ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যে এম্বাসি তাঁর মাকে ভিজিট ভিসা ইস্যু করে। নাজমুন নাহারের আনন্দ তখন আকাশ ছুঁই ছুঁই। সঙ্গে তিন মাসের টানা ট্যুরের সব প্রস্তুতি নিয়ে নেন তিনি। তাঁর মা সুইডেন পৌঁছে যেন এক দিনও তাঁদের ঘরে বসে থাকতে না হয়, সে ব্যবস্থা করে ফেলেন তিনি।

তারপর একদিন তাঁর মা এলেন। মা যেদিন কোপেনহেগেন কাস্ট্রুপ এয়ারপোর্টে এসে নামলেন, তখন সুইডেনের লুন্ড থেকে ডেনমার্কে তাঁকে রিসিভ করার গোলাপের তোড়া নিয়ে গেলেন তিনি। মাকে জড়িয়ে ধরে নাজমুন নাহার বললেন, ‘কোনো কষ্ট হয়নি তো?’ মা বললেন, ‘একদম কষ্ট হয়নি। তারপর হাসতে হাসতে আকাশ দেখতে দেখতে চলে এলাম।’

এরপর কোপেনহেগেন থেকে বাল্টিক সমুদ্রের ওরেসনড ব্রিজ পার হয়ে দুপাশের সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে দেখতে সুইডেনে ঢুকে পড়লেন তাঁরা।

ইতালি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানিসহ ১৪ দেশে মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ অ্যাডভেঞ্চার হলো নাজমুন নাহারের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, শ্রেষ্ঠ স্মৃতি। ছবি: সংগৃহীত
ইতালি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানিসহ ১৪ দেশে মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ অ্যাডভেঞ্চার হলো নাজমুন নাহারের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, শ্রেষ্ঠ স্মৃতি। ছবি: সংগৃহীত

সেই স্মৃতির কথা মনে করে নাজমুন বলেন, ‘আমি যখন মায়ের সঙ্গে কথা বলছি তখন মা দূরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তখন তাঁর চোখেমুখে নতুন এক পৃথিবী আবিষ্কারের আনন্দ দেখতে পেলাম।’
ঠিক এক সপ্তাহ পর তাঁরা প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। সে সময় টানা তিন মাস সফরের মধ্যে ১১টি ইউরোপের দেশ ভ্রমণ করলেন।

তাঁদের প্রথম বিস্ময়কর ভ্রমণের বিষয়ে নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমরা প্রথমে যাত্রা শুরু করলাম ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ দেশ মাল্টা ভ্রমণের মাধ্যমে। ভূমধ্যসাগরের অপূর্ব ফিরোজা রঙের পানি দেখেই মা অনেক মুগ্ধ হয়েছিলেন। সন্ধ্যার পর সমুদ্রের পাড় ধরে আমরা হেঁটে বেড়াতাম। ভূমধ্যসাগরের অপূর্ব শীতল বাতাস যেন আমাদের স্বর্গের ছোঁয়া দিয়ে যেত।’

তারপর তাঁরা গিয়েছিলেন গজো দ্বীপে। সেই দ্বীপে স্পিডবোটে ভূমধ্যসাগরের কিছু অংশ পর্যন্ত যাত্রার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পাড় থেকে যখন একটু দূরত্ব গিয়েছিলাম তখন মাকে বলছি, “মা ঠিক আছো তো? কোনো ভয় লাগছে না তো?” মা আমাকে হাসতে হাসতে বললেন, “তুমি ঠিক আছো তো, তুমি ভয় পাচ্ছ না তো?” এভাবে আমরা মাঝেমধ্যে মজা করতাম। সমুদ্রের প্রবাল থেকে শুরু করে সেই দ্বীপের জীবনচিত্র অনেক কিছুই দেখা হয়েছিল সে সময়।’

এরপর তাঁরা সুইজারল্যান্ড গেলেন। সেখানে ইন্টারলেকেনের একটা কটেজে উঠেছিলেন। সুইজারল্যান্ড স্মৃতির কথা জানিয়ে নাজমুন নাহার বলেন, ‘খুব ভোরে যখন জানালা খুলতাম, মেঘ এসে আমাদের চোখেমুখে ছুঁয়ে যেত। মা আর আমি ভাসমান মেঘগুলো ছুঁতে চাইতাম। কিন্তু ছুঁতে গেলেই সেগুলো আবার নাই হয়ে যেত। পাহাড় আর মেঘের ভেতর কটেজের বারান্দায় বসে মা আমাকে তাঁর ছোটবেলার গল্প বলতেন। তাঁর বন্ধুদের কথা বলতেন। তাঁর কিশোর বয়সে বেড়ে ওঠার গল্প করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা বলেছেন।’

মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে বিখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড সল্ট মিউজিয়ামে। ছবি: সংগৃহীত
মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে বিখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড সল্ট মিউজিয়ামে। ছবি: সংগৃহীত

সেই সময় তাঁরা প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতেন। আর প্রতিদিনই নতুন পৃথিবী আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে মাকে নতুন করে আবিষ্কার করতেন নাজমুন নাহার। মাকে নিয়ে পৃথিবী ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের জীবনও যেন রোজ ভ্রমণ করে চলেছেন নাজমুন।


সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার কথা মনে করে ১৪০ দেশ ঘুরে বেড়ানো নাজমুন নাহার বলেন, ‘একদিন আমরা ছোট্ট দুই বগির একটা নান্দনিক ট্রেনে করে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা ভ্যালির মধ্য দিয়ে সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার দিকে রওনা হচ্ছিলাম। মা কখনো কখনো মনের আনন্দে গান গেয়ে উঠছেন। আবার কখনো কখনো অবাক হয়ে ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখছেন সুইস আল্পসের পাহাড়ি ঝরনা থেকে বেয়ে আসা পানির স্রোত। যখনই কোনো সুন্দর গ্রাম দেখতাম আমরা নেমে পড়তাম সেখানে। পাহাড়ের এলোমেলো আঁকাবাঁকা পথ ধরে আমরা হেঁটে বেড়াতাম ছোট ছোট পাহাড়ের অপূর্ব গ্রামগুলোতে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে আমরা বসে পড়তাম কোনো পাথরের ওপর। সেখানে বসে একটু পানি বা শুকনো খাবার খেতাম। আবার হাঁটতে শুরু করতাম। নামাজের সময় হলেই মা পাহাড়ের কোলে কোনো একটা পাথরে বসে নামাজ পড়ে ফেলতেন। সেই দৃশ্যগুলো এখনো আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এভাবে আমরা যেতে যেতে একসময় সুইস আল্পসের ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু স্থান ইয়াংফ্রাওয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম।’

এরপর ইতালি ভ্রমণ। ইতালিতে দিনের বেলা প্রচণ্ড তাপ। গরমে দিনে বের হওয়া যেত না। তাই সূর্যের তেজ কিছুটা কমে গেলে তাঁরা ঘুরতে বের হতেন। মা আর নাজমুন নাহার ভোররাত চারটা পর্যন্ত রোমের বিভিন্ন স্থান দেখতেন। মাঝেমধ্যে অনেক দূর হাঁটাহাঁটি করে মা ক্লান্ত হয়ে গেলে মজা করে বলতেন, ‘বাংলাদেশের মতো রিকশা থাকলে খুব ভালো হতো।’

তবে তিনি ইচ্ছে করেই মাকে বেশি করে হাঁটাতেন যেন রাতে খুব ভালো ঘুম হয়। এবং হতোও তাই।

তারপর নাজমুন নাহার মাকে নিয়ে আটতলা জাহাজে করে সমুদ্র ভ্রমণ করেন। সে সময় ফিনল্যান্ড দিয়ে এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া, লাটভিয়া হয়ে রাশিয়ার পিটার্সবার্গ পর্যন্ত ঘোরেন তাঁরা।

মাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ জাদুঘরে। ছবি: সংগৃহীত
মাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ জাদুঘরে। ছবি: সংগৃহীত

সেই সমুদ্র অভিযান ছিল অনেক মজার। জাহাজের মধ্যে তাঁদের থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা ছিল। সারা রাত ধরে জাহাজ চলত, পরের দিন ভোরে কোনো একটা দেশে তাঁদের নামিয়ে দিত। সারা দিন ঘুরে আবার জাহাজে উঠে পড়তেন তাঁরা। এভাবে প্রায় ২০ দিন তাঁরা সমুদ্র অভিযানে ছিলেন।

সেই জাহাজের মধ্যে ছিল রেস্টুরেন্ট, সুইমিংপুল, কনসার্ট হল, ডান্স ফ্লোর, শপিংয়ের দোকান। আর তাঁদের থাকার রুম ছিল সমুদ্রমুখী জানালার পাশে।

কখনো কখনো গভীর সমুদ্র ছাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে চাঁদ দেখা যেত, আর সেই চাঁদের আলো জানালা দিয়ে তাঁদের ঘরে এসে পড়ত। নাজমুন নাহার বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো লাগত ভোরে যখন সূর্য উঠত আর যখনই কোনো একটা দেশের সীমানায় চলে আসত। তখন সমুদ্রের তীরবর্তী উপকূলীয় পাহাড় ঘরবাড়িগুলোর ওপর সূর্যের আলো ছড়িয়ে কী যে অপূর্ব স্বর্গরূপ ধারণ করত, যা দেখার জন্য আমি এবং মা দুজনেই বারান্দায় এসে চেয়ারে বসতাম আর সেই দৃশ্য দেখতাম।’

এ ছাড়া, ২০১৭ সালে মাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৮টি রাজ্যে ঘুরে বেড়ান নাজমুন নাহার। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে মাকে নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেছি। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভ্রমণ অভিযাত্রা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অ্যামট্রাক ট্রেনে করে শিকাগো থেকে কানসাস সিটি পর্যন্ত দুপাশের অসাধারণ দৃশ্য দেখতে দেখতে ভ্রমণ করা। যে ট্রেনের অনেক অংশ ছিল গ্লাস ফিট করা এবং ট্রেনের সিটে বসে তাকালে ওপরে, ডানে-বামে সবকিছু দেখা যেত। এ ছাড়া যখন আমরা ওয়াশিংটনের বিখ্যাত মহাকাশ মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম, তখন আমি এবং মা দুজনে একসঙ্গে চাঁদের মাটি ছুঁয়েছিলাম। মা চাঁদের মাটি ছুঁয়ে আমার জন্য দোয়া করে বলেছিলেন, আমি যেন পৃথিবী ভ্রমণ শেষ করে চাঁদেও যেন ভ্রমণ করতে পারি।’

এভাবেই কয়েক শ স্মৃতি ধারণ হয় মায়ের সঙ্গে ইউরোপ এবং আমেরিকায়। ইতালি, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানি অস্ট্রিয়া, স্পেন, সুইডেন, লিস্টেনস্টাইনসহ ১৪ দেশে মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ অ্যাডভেঞ্চার হলো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, শ্রেষ্ঠ স্মৃতি।

মাকে নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করা এই পরিব্রাজক বলেন, ‘মায়ের ঋণ কোনোভাবেই শোধ করা সম্ভব নয়। তবে পৃথিবীর কিছু অংশ মা দেখতে পেয়ে খুবই খুশি। আমিও খুশি তাঁর সঙ্গে পৃথিবীর কিছু অচেনা পথ হারিয়ে যেতে যেতে তাঁকে নতুন করে জেনে নিতে পেরে।'
নাজমুন নাহার তাঁর বিশ্ব ভ্রমণের জন্য একজন নারী হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে যাঁর পায়ের চিহ্ন পড়ছে এবং পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এমট্রাক ট্রেনে শিকাগো থেকে কানসাস যাওয়ার পথে নাজমুন নাহার। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এমট্রাক ট্রেনে শিকাগো থেকে কানসাস যাওয়ার পথে নাজমুন নাহার। ছবি: সংগৃহীত

তাঁর বিশ্বভ্রমণ অভিযাত্রায় বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি বহন করেছেন ‘এক পৃথিবী এক পরিবারের’ শান্তির বার্তা। তিনি পৃথিবীর মাঝে এক সেতুবন্ধ সৃষ্টি করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অর্জন করেছেন ‘পিস টর্চবিয়ারার’ আন্তর্জাতিক সম্মাননা। দেশে পেয়েছেন অনন্যা সম্মাননাসহ অনেক সম্মাননা।

বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য শিরোনাম সৃষ্টি করেছেন এই দুঃসাহসী নারী বিশ্ব পরিব্রাজক। যিনি আমাদের বাংলাদেশের এক গর্বিত সন্তান। পৃথিবীর বুকে আজীবন তাঁর পায়ের ছাপ বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের কথা বলে যাবে। ইতিহাসে এমন নক্ষত্র মানুষ বেঁচে থাকে অনন্তকাল।

সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালে নাজমুন নাহার পেয়েছেন মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড, অনন্যা সম্মাননা, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল সম্মাননা, জনটা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, তিন বাংলা সম্মাননা ও রেড ক্রিসেন্ট মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড।
[email protected]