বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং ভাবনা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের দিকে অবস্থান নিয়ে নানা জায়গায় কম-বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ সমালোচনার ডামাডোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতাটা বরাবরের মতোই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশের দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথমটি যখন বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে অবস্থান করে সমালোচিত হচ্ছে, সে সময় দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) যে কোনো র‍্যাঙ্কিংয়েই স্থান করে নিতে পারছে না, বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট লেখালেখি বা আলোচনা-সমালোচনা কোনোটাই সেভাবে হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং’ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বজনীন কর্মক্ষমতা নির্ধারণের একটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান। এরা গবেষণার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করে এগুলোর শিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞানের আদানপ্রদান ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার বিষয়গুলো বিচার বিশ্লেষণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং নির্ধারণে এদের নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড রয়েছে। এসব মানদণ্ড নির্ধারণে যেসব উপাদান জড়িত, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম
২. শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত
৩. ডক্টরেট ও ব্যাচেলরের অনুপাত
৪. বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা
৫. আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যা
৬. সাইটেশন বা গবেষণার সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রভাব
৭. শিল্পকারখানার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক, প্রভৃতি

আমরা যখন এসব মানদণ্ড ইন্টারনেট ঘেঁটে এত সহজেই বের করতে পারছি, তখন কর্তাব্যক্তিরা যে এগুলো জানেন না সেটা বিশ্বাস করা একটু শক্ত। হতে পারে এটি কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতা অথবা পদ্ধতি জানলেও তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। এসব দিক বিবেচনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে স্থান পেতে ব্যর্থ হওয়ায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে আমরা শিক্ষার উৎকর্ষের চেয়ে প্রশাসনিক দিকেই বেশি মনোযোগী হয়েছি।

অথচ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনশীল বিশ্বে তাল মিলিয়ে চলতে এবং গ্র্যাজুয়েটদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাহিদা তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে স্থান পাওয়া অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের ইতিবাচক ভাবনা ও মানসিকতার পরিবর্তনই পারে শিক্ষার মানের উন্নতি করে এবং মানদণ্ডগুলো পূরণের মাধ্যমে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় স্থান নিতে। আশা করি নিকট ভবিষ্যতে অন্তত তলানিতে হলেও প্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে স্থান করে নেবে।

*শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]