৫০ একরের সিকৃবি, মনে পড়ে তোমায়

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: লেখক
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: লেখক

৫০ একরের সিকৃবি এক ভালোবাসার নাম। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রথম পদাচারণ, এর পর কেটে গেছে চারটি বছর। এই চার বছরে ভালো লাগা, খারাপ লাগার সঙ্গী ছিল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। হেঁটেছি হাফ কিলোর সেই রাস্তা শতবার, ঘুম চোখে দৌড়ে গিয়েছি ক্লাসে, কখনো বা যাওয়ার ফাঁকে জালাল মামার টংঘরের চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছি। ক্লাস শেষে ক্লান্ত দেহে ফিরেছি হলে, কখনো বা ক্লাসে ঢুকতে না পেরে আড্ডা দিয়েছি ভাই-বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে।

মনে পড়ে বৃষ্টিতে কতই না ভিজেছি, হাঁটুপানি সাঁতরে গিয়েছি ক্লাসে। বিকেলের আড্ডা কখন যে রাত ভোর করে দিয়েছে, টের পাইনি।

মনে পড়ে ভাইভার সেই সময়গুলো, কখনো গিয়েছে সারা বেলা। অ্যাসাইনমেন্ট শুনেই ভয় পেয়েছি, আবার স্যারদের পেয়েছি বন্ধুর মতো।

মনে পড়ে তোমাকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বৃষ্টিতে জড়োসড়ো হয়ে এক ছাতায় চারজন হেঁটেছি, মুরাদ ভাই বা রঞ্জনদার দোকানে শিট নেওয়ার সময় কত যে দুষ্টুমি করেছি, সেকেন্ড গেটে মেতেছি আড্ডায় স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।

করোনাভাইরাসের কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ রয়েছে। ছবি: লেখক
করোনাভাইরাসের কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ রয়েছে। ছবি: লেখক

পড়াশোনা, সাংগঠনিক কাজ বা ঘুরতে যাওয়ার ফাঁকে কখন যে চারটি বছর কেটেছে বুঝতে পারিনি। ক্লাস শেষে কতবার সাংগঠিনক আড্ডায় বসেছি, আয়োজনে–উৎসবে ছোট-বড়তে হয়েছি একাকার। আমার হয়তো চার, কারও এক, কারও দুই–তিন, কারও বা বেশি।

অসুস্থতায় দৌড়ে গিয়েছি হেলথ সেন্টারে, ডা. অসীম স্যারের শুধু হাসিমাখা কথায় সুস্থ হয়েছি অনেকবার। কখনো দৌড়ে গিয়েছি মদন টিলায়, পাখির চোখে দেখেছি প্রিয় ৫০ একর, সূর্যাস্ত। পয়লা বৈশাখের মুখরিত সেই ক্যাম্পাস, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বরে ফুল হাতে শ্রদ্ধাবনত হয়েছি সূর্যালোকে বর্ণমালার সামনে।

ক্যাফেটেরিয়ার সেই স্মৃতি, লাইনে দাঁড়িয়ে রূপালী ব্যাংকে সেমিস্টার ফি দেওয়া আর বের হয়ে ডিন অফিসে আগেভাগে যাওয়া এখন সবই অতীত।

স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে উচ্চস্বরে জয় বাংলা স্লোগান সবই মনে পড়ে। মনে পড়ে, রেজাল্ট দেখে মন খারাপের দিনগুলো, একসঙ্গে রাতবিরাতে ইকোপার্কের দিনগুলো। হলের ছাদে আড্ডা গল্প গান, বারবিকিউ, আবার হলের সেই নামী-বেনামী খাবারের কথাও মনে আছে।

করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ছবি: লেখক
করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ছবি: লেখক

একা কি ভালো আছে আমার সিকৃবি? মুখরিত সেই রাস্তা, ক্লাসরুম, ক্যাফেটেরিয়া, জালাল মামার টং বা পানির ট্যাংকের নিচের জমজমাট জনসমাগম ছাড়া আসলেই কি ভালো আছে প্রাণের সিকৃবি?
প্রাণোচ্ছল সেই আঙিনা আজ শূন্য, ঘরবন্দী আমরা সবাই। বন্দী প্রাণের ক্যাম্পাস।
আবারও মুখরিত হোক, প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসুক সিকৃবিতে।
সুস্থ হোক ছন্নছাড়া মানবজাতি, সুস্থ হোক পৃথিবী। মনে পড়ে তোমায় প্রিয় সিকৃবি।

* শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]