দক্ষতা উন্নয়নের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগান

করোনার এই সংকটময় মুহূর্তের কারণে সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের অবস্থান করতে হচ্ছে নিজ নিজ বাড়ির গণ্ডির ভেতরে। দীর্ঘদিন বাড়ির নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে অবস্থান করার কারণে অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর সময় কাটছে ঘুমিয়ে, গেম খেলে, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ইউটিউব ব্যবহার করে। করোনার এই সংকটময় মুহূর্ত আরও কত দিন বা কত মাস থাকবে, সে হিসাব আমাদের কাছে নেই। তবে পূর্বানুমান করে বলা যায়, আরও দীর্ঘ সময় আমাদের বাড়িতেই অবস্থান করতে হবে।

করোনাকালীন এই অবসর কীভাবে দক্ষতার উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে থাকছে কিছু পরামর্শ।

পরিকল্পনা
সফল হওয়ার জন্য দরকার একটা সুন্দর পরিকল্পনা। তবে সফল পরিকল্পনা পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন ছোট ছোট পরিকল্পনা হাতে নেওয়া। যেমন আপনি এক সপ্তাহের একটি পরিকল্পনা নিলেন যে এই সপ্তাহে আপনি দুটি উপন্যাস, একটি প্রবন্ধ পড়বেন এবং মাইক্রোসফট এক্সেলের বেসিক কাজগুলো শিখবেন।

বই পড়া
ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে, তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ ও আনন্দিত রাখতে পারি। একটি ভালো বই মানুষের মনশ্চক্ষু যেমন খুলে দেয়, তেমনি জ্ঞান ও বুদ্ধিকে প্রসারিত ও বিকশিত করে মনের ভেতরে আলো জ্বালাতে সাহায্য করে। এ জন্য এই অবসরে বই হতে পারে সব থেকে কাছের বন্ধু। যাঁদের কাছে বই নেই, তাঁরা অনলাইন থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়তে পারেন।

লেখালেখি করা
অনেকেই কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ফিচার লিখতে ভালোবাসেন, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সময় নিয়ে লেখালেখির সুযোগ হয়ে ওঠে না। তাই এই অবসরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, ব্লগে লেখালেখি করুন। পত্রিকাতে আপনার লেখাটি প্রকাশ করার জন্য প্রথম আলো, যায়যায়দিন, মানবকন্ঠ, ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকা নাগরিক সংবাদ নামে একটি পাতা চালু করেছে। সেখানে তাদের ই–মেইলে আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন।

প্রোগ্রামিং শেখা
বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে প্রতিটি জব সেক্টরে কম্পিউটারে দক্ষ জনবলের চাহিদা রয়েছে। তাই যাঁদের বাসায় ল্যাপটপ, কম্পিউটার আছে, তাঁরা ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল দেখে মাইক্রোসফট অফিস, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্টের কাজগুলো শিখে নিতে পারেন।

অনলাইন কোর্স
করোনাকালে গৃহবন্দী থাকার এই সময়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারেন অনলাইনে কোর্স করে। কোর্সেরা আর এডেক্সের (edx) মতো ওয়েবসাইটগুলো অনলাইন কোর্স করার জন্য দারুণ জনপ্রিয়। এই ওয়েবসাইটগুলোতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুগল, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন কারিগরি কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বহুব্রীহি.কম, Udemy থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ফ্রি কোর্স করতে পারেন।

ভাষা শেখা
বলা হয়ে থাকে, Communication is power. আগে একটা সময় ছিল, ইংরেজি জানা থাকলে ভালো চাকরি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজির পাশাপাশি আরও দুয়েকটি বিদেশি ভাষা জানা আবশ্যক হয়ে পড়ছে। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো একটি এলাকা বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে এবং বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভাষা শেখার কোনো বিকল্প নেই। তাই বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করে বা ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে জাপানিজ, ফ্রান্স, স্প্যানিশ ভাষা শেখার প্রচেষ্টা করতে পারেন।

যাঁরা ইংরেজি ভাষা শিখতে চান বা দক্ষ হতে চান, তাঁদের জন্য পরামর্শ থাকবে—ইউটিউব থেকে বিভিন্ন ইংরেজি শিক্ষকের ভিডিও দেখার পাশাপাশি চর্চার জন্য প্লে-স্টোর থেকে ওপেন টক, বাড্ডি অথবা স্পিক ইংলিশ অ্যাপ ডাউনলোড করে অডিও কলে কথা বলার অভ্যাস করতে পারেন। এই অ্যাপ ব্যবহারকারী প্রত্যেকেই লার্নার। তাই এখানে আপনি ভুল করলেও সমস্যা নেই।

ভিডিও বানানো
বর্তমানে বাংলাদেশের বহু তরুণ–তরুণী ইউটিউব থেকে লাখো টাকা উপার্জন করছেন। যাঁদের ভিডিও বানাতে ইচ্ছা করে, ঘরের মধ্যে বসেই স্মার্টফোন দিয়ে বিভিন্ন Blog বা বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করুন। এর মাধ্যমে আপনার উপস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি হবে এবং উপার্জনের পথ সুগম হবে।

রান্না শিখুন
ব্যাচেলর জীবনে বাইরের কেনা খাবার অথবা মেসের খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হয় বেশির ভাগ মানুষকে। তাই এই সময় বাসায় কিছু রান্না শিখুন এবং বানিয়ে ফেলুন নতুন ধরনের কিছু খাবার অথবা নিজের পছন্দের কিছু খাবার। এটি আপনাকে আত্মনির্ভর হতে সাহায্য করবে।

ফ্রিল্যান্সিং করা
নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে যে কেউ ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটিংয়ে পারদর্শী হন, তাহলে এই অবসরে আপনিও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপওয়ার্ক, ফাইভারে কাজ করে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন।

হোম টিউটরের ভূমিকা পালন
যাঁদের কাছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাঁরা এই সময়ে হোম টিউটরের ভূমিকা পালন করতে পারেন। বাড়িতে ছোট ভাইবোনকে পড়ানোর মাধ্যমে আপনার জ্ঞানের ঝালাই হয়ে যাবে এবং টিচিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

আসুন এই অবসরকে কাজে লাগিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।

*শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]