বয়ঃসন্ধিকালে শিশুর মানবিক বিকাশে মা-বাবা ও শিক্ষকের ভূমিকা

মানুষের জীবনচক্রের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সময় হলো বয়ঃসন্ধিকাল। সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ ঘিরে আজ থমকে গেলেও পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৬ শতাংশ (১.২ বিলিয়ন) শিশু বয়ঃসন্ধির বিভিন্ন ধাপে পর্যায়ক্রমিকভাবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। বদ্ধ ঘরে তারা আজ অনেকটা অসহায়। অথচ সমসাময়িক আলোচনায় এদের নিয়ে ভাবনার জায়গাটি নেহাত কম। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমরা বয়ঃসন্ধিকাল কী, এ সময় কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক বা নিরাপত্তাজনিত কী কী সমস্যা হয়, তা অনেকে জানি না। উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশ এই জেনারেশনের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা, বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ক্যারিয়ার অনুসন্ধানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেসকোর শিশু অধিকার কনভেনশনের আওতায় বয়ঃসন্ধিক্ষণকে বিশেষভাবে প্রোটেকটেড করা হলেও আমাদের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রকৃত জ্ঞান ও সচেতনতার অভাবে সব শিশুর চাহিদা, প্রয়োজন বা দুর্বলতাগুলো এখনো নানাভাবে উপেক্ষিত।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকেও কিশোর বিকাশ মনস্তাত্ত্বিকদের কাছে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল না মূলত অনুন্নত ও কৃষিনির্ভর সমাজব্যবস্থার কারণে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও আর্নেস্ট হেকেলের পুনরাবৃত্তি তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে আমেরিকান মনস্তত্ত্ববিদ গ্রানভিল স্টেনলি হল কিশোর-কিশোরীদের মন নিয়ে প্রথম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেন এবং মানবশিশুর এ বিকাশকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, ‘শিশুরা অতি শৈশবে চার পায়ে হাঁটে, কৈশোরে অসভ্য, বর্বর স্বভাবের চঞ্চলতা প্রদর্শন করে এবং সর্বশেষে একজন সুস্থ–স্বাভাবিক মানুষে পরিণত হয়।’ তিনিই প্রথম কৈশোরকে ‘ঝড়-ঝঞ্ঝার কাল’ বলে অভিহিত করেছেন। শিশুকাল পেরিয়ে শিশুটি যখন কৈশোরে পা দেয়, তখন তার জীবনচক্রে যে আমূল পরিবর্তন হয়, তা অত্যন্ত প্রাকৃতিক। মানবজীবনের এই স্পর্শকাতর সময়টিতে একটি শিশুর ভেতর পূর্ণ মানবিক ও জৈবিক পরিবর্তনের প্রারম্ভিক প্রক্রিয়াগুলো অবধারিতভাবে শুরু হয়। শরীরে তৈরি হয় নতুন নতুন হরমোন। প্রাকৃতিক এই রূপান্তরই তাকে সুস্থ, স্বাভাবিক ও পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত করার প্রাথমিক সোপান হিসেবে কাজ করে। এতেই অনুমিত হয়, শিশুর বৃদ্ধির এ সময়টা কতটা স্পর্শকাতর।

১০-১৯ বছর পর্যন্ত চলা বয়ঃসন্ধিকালীন চক্র তিনটি ধাপ (বয়ঃসন্ধি, প্রাথমিক ও শেষ কৈশোর) মানুষের জীবনচক্রে দ্রুত প্রবহমান একটি সময় এবং খুব অল্প সময়েই থেকে তা মিলিয়ে যায়। এ সময় শারীরিকভাবে ছেলে বা মেয়ে উভয় শিশুই তাদের মধ্যে একজন পূর্ণ ও সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষে অবস্থান্তরিত হওয়ার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন আকারে পরিবর্তন, ওজন পরিবর্তন, স্বরভঙ্গতা, প্রাথমিক যৌন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব অর্থাৎ কিশোরসুলভ বৈশিষ্ট্য সঞ্চারিত হয়। এ পর্বে মানবশিশুর মধ্যে বাল্য ও কৈশোর—দুই ধরনের বৈশিষ্ট্যই পরিলক্ষিত হয়। বিষয়টি এমন যে তারা না ছোট, না বড়। না সহ্য করা যায়, আবার বড় হয়েছে ভেবে একবারে ছেড়ে দেওয়া যায়। তা ছাড়া এ সময় শরীর বা মননে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় বলে এদের সঙ্গে খুব খোলামেলা বা রক্ষণশীল—উভয় ধরনের আচরণই বিপজ্জনক। তাই এই বয়সী কিশোর-কিশোরীর খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে শারীরিক ও মানসিক—সব ধরনের বিকাশকে ঘিরে অভিভাবকদের নিতে হয় বিজ্ঞানসম্মত বাস্তবিক পদক্ষেপ। পাশাপাশি এ বয়সীদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে।

বয়ঃসন্ধিকালে নানাবিধ শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক অবস্থার মধ্যেও তৈরি হয় ব্যাপক পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রে আচরণগত নানা অস্বাভাবিকতাই আমাদের বেশি দৃষ্টিগোচর হয়। স্বাধীন মতামত প্রকাশে প্রবল আগ্রহ, অভিভাবকের ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে চলা, নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ, বন্ধুমহলের প্রতি তীব্র আর্কষণ, মুড সুইং, ডিপ্রেশন, অতি নৈতিকতা, অতিধার্মিকতা বা অতি আধুনিকতার প্রভাব, বাউণ্ডুলেপনা, আত্মপ্রত্যয়ের অভাব, আদর্শ জীবনধারার প্রতি আগ্রহ, অসামাজিক কাজের প্রতি ঝুঁকে পড়া, ফ্রাস্টেশন বা ডিপ্রেশন থেকে ধূমপান বা মাদক গ্রহণ, স্বার্থ নিয়ে ঝগড়াবিবাদ, কিশোর অপরাধ, শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে উদ্বিগ্নতা, বহির্মুখিতা, দিবাস্বপ্ন দেখা, ক্যারিয়ারমুখিনতা, আবেগকেন্দ্রিক সম্পর্ক তৈরির প্রবণতা, ভালো লাগা বা পছন্দের জায়গায় উপেক্ষাকে কেন্দ্র করে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া ইত্যাদি। উল্লিখিত বিষয়গুলো কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে খুবই দৃশ্যমান ও সাধারণ কিছু পরিবর্তন, যার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা হলো এ সময় তাদের মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক ও স্নায়ুবিক সংযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, দ্বিগুণের বেশিসংখ্যক হারে স্নায়ুকোষের উৎপাদন, কৈশোরকালীন পুরো সময়ে মস্তিষ্কের সম্মুখ এলাকা, যাকে ফ্রন্টাল লবি বলে তার কোষ ও কোষ সংযোগের অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি। বয়স্ক ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের জ্ঞান ও যৌক্তিক বিষয়ে সম্মুখ মস্তিষ্ককে কাজে লাগান, কিন্তু কৈশোরে মস্তিষ্কের এ অংশ অপূর্ণ থাকে। তাই মস্তিষ্কের এমিগডালা নামক একধরনের নিউক্লিয়াস (যা মূলত মানুষের গন্ধ, অনুভূতি, প্রণোদনা এবং আবেগপ্রবণ আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে) দ্বারা তারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ফলে তাদের সিদ্ধান্তগুলো হয় আবেগতাড়িত ও উচ্ছ্বাসপ্রবণ।

যেহেতু কিশোর বা কিশোরীর কাছে সম্পর্কের জায়গা হলো তার পরিবার ও পরিবারের অন্য সদস্যরা, তবে মা–বাবার ভূমিকাই অন্যতম। কারণ, একটি কিশোর যদি তার মা–বাবার কাছ থেকে বিজ্ঞানসম্মত ভারসাম্যপূর্ণ গাইডলাইন পায়, তাহলে তার ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মা–বাবাকে কিশোরকালীন পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী আচরণ করতে হবে। এ বিষয়ক অভিভাবক ওরিয়েন্টেশনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরুন, একটি কিশোর বা কিশোরী খুব সংগত কারণে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে জড়াতে পারে। সে ক্ষেত্র কী করণীয়? রাগারাগি, বকাবাজি, ঘরে বন্দী করে রাখা, স্কুল-কলেজ, বন্ধুবান্ধব বা পরিবার থেকে বিছিন্ন করে দেওয়া অবশ্যই নয়। কারণ, আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে, দিন শেষে সন্তানটি আপনার। তার কোনো ক্ষতি আপনারই ক্ষতি। তাই একজন সহনশীল ও বাস্তবিক অভিভাবক হিসেবে সন্তানের সমস্যাটিকে আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং করে সমাধান পেতে হবে। এ বয়সটি যেহেতু আবেগ দিয়ে ভরপুর থাকে, তাই আবেগ, ভালোবাসা দিয়েই তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। পারিবারিক আদর্শ, মূল্যবোধ এবং যথাযথ মনিটরিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক স্বাস্থ্য ও প্রতিটি মানসিক চাহিদার সঙ্গে মা–বাবার আন্তঃসংযোগ থাকা জরুরি। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে পড়াশোনা, পছন্দ-অপছন্দ, বন্ধু নির্ধারণ—প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের থাকতে হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনিটরিং। কিশোর বয়স যে শুধু পরিবর্তনের বয়স, তা–ই নয়, তার ব্যক্তিত্ব সামনের পথচলা কেমন হবে, ক্যারিয়ার কোনো দিকে মোড় নেবে—সবই নির্ধারণ হয়ে যায় ১০-১৮ বয়সসীমার মধ্যে। তাই এ সময়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে এগিয়ে নেওয়ার প্রারম্ভিক নির্ধারক হিসেবে অভিভাবকের গুরুত্ব অপরিসীম।

কিশোর-কিশোরীরা সমাজের একটি বৃহত্তর অংশ। তাদের সঠিক বেড়ে ওঠায় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারত্ব। মূলত কিশোর-কিশোরীদের প্রধান মিথস্ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় স্কুল বা কলেজ। একটি স্কুল এবং সেখানকার শিক্ষকমণ্ডলী তাদের জীবনে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এ বয়সে মা–বাবার চেয়ে তারা শিক্ষকদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট থাকে। তথ্যভিত্তিক জ্ঞানভান্ডার দিয়ে একজন শিক্ষক তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ম্যাজিক্যাল ক্ষমতা রাখেন। তাই শিক্ষককে হতে হবে বন্ধু, দার্শনিক, একই সঙ্গে জীবন্ত গাইডলাইন। শিক্ষকের অ্যাপ্রিসিয়েশন, ইচিবাচক মনোভাব এ বয়সীদের মোটিভেশন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জ্ঞানীয় বিকাশে বিমূর্তবিষয়ক চিন্তার বিষয়বস্তু নির্ধারণ, মাইন্ড রিডার হিসেবে কিশোর শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাময় বুদ্ধিমত্তাকে সামনে এনে যথাযথ নির্দেশনা শিক্ষকের একটি পেশাগত মহান দায়িত্ব।

মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, এ বয়সী ছেলেমেয়েরা পারিবারিক অনুশাসন ও ধর্মীয় আদর্শকে কেন্দ্র করে নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের আদর্শ তৈরির প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রকৃত ধর্মীয় জ্ঞান, মূল্যবোধের বিকাশ ও চর্চায় বিশেষ করে জীবন-জীবনাচার, বন্ধু-পরিবার, ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের প্রতি দায়িত্ব–কর্তব্যবিষয়ক কুসংস্কারমুক্ত বিজ্ঞানসম্মত যৌক্তিক ধর্মীয় জ্ঞান কিশোর-কিশোরীদের জীবন গঠনে রাখতে পারে অসাধারণ ভূমিকা। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়।

জাতীয় স্বার্থে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে সরকারের সঠিক পরিকল্পনা, জীবনমুখী কারিকুলাম নির্ধারণ, অনুদান, প্রণোদনা, গঠনমূলক ব্যবস্থাপনা অতীব জরুরি। শিক্ষা, মিডিয়া, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এ জেনারেশনের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে। তাই এ বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ও কার্যকর দিকনির্দেশনা জরুরি। কিশোরকালীন সুবিধা-অসুবিধা, কিশোরভাতা, শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের চর্চা তথা জীবন অনুষঙ্গ সব বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণ একটি ফ্লো চার্টের মতো রাষ্ট্র থেকে সমাজ, সমাজ থেকে পরিবার, পরিবার থেকে শিশু-কিশোরের মধ্যে সঞ্চারিত করণে জাতিগঠনে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

কিশোর-কিশোরীরা আজকাল সাইবার বুলিং থেকে শুরু করে নিজের ঘরে ও বাইরে অপসংস্কৃতির কবলে যেভাবে অনিরাপদ হয়ে পড়ছে, তার থেকে রক্ষা করে দেশীয় মূলধারার সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের দিকে ফিরিয়ে আনার মূল দায়িত্বটি নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।

করোনাকালে এ বয়সীরা বদ্ধ ঘরে বন্দী জীবন পার করছে। বাইরে বেরোনোর উপায় নেই। এ সময় একাডেমিক পঠন-পাঠন ছাড়াও পছন্দ অনুযায়ী বই পড়া, ইন্টারনেট থেকে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অনুশীলনে আগ্রহ তৈরিতে পরিবারকে কৌশলী উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকমণ্ডলীর উদ্যোগে শিখন-শেখানো কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখা, তাদের পছন্দের জগৎ নিয়ে উদ্ভাবনী কার্যক্রম, লেখালেখি, সমমনা বন্ধুদের নিয়ে অনলাইন গ্রুপ তৈরি করে স্টাডিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে পারে। সরকার এ বয়সী ছেলেমেয়েদের ঘিরে অনলাইনে লাইফস্কিল অ্যান্ড সার্ভাইভাল বেজড ট্রেনিং প্রোগ্রাম, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন ও সংগীত প্রতিযোগিতা প্রভৃতির আয়োজন করতে পারে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে ১ মিলিয়নের বেশি এইচএসসি পরিক্ষার্থী। তাদের উচিত বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নিজের পড়াশোনাকে এগিয়ে রাখা। পৃথিবীতে কোনো সীমাবদ্ধতাই মানুষের অফুরান শক্তিকে থামাতে পারে না। লকডাউনের সময়েও নিজের ভালো অভ্যাস, জ্ঞান অনুশীলন, পরিবার-পরিজনের প্রতি দায়িত্ব পালনের সুযোগ মনে করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

যথাযথ পারিবারিক আচরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা, দেশীয় মিডিয়াগুলোর ইতিবাচক শিক্ষণীয় বিষয়গুলোকে অধিক হারে তুলে ধরা এবং নেট সার্ফিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলো একাডেমিকভাবে জানতে পারে তার জন্য পুরো সিস্টেমকে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবারিক, সমাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপদ কিশোর-কিশোরীরা হবে দায়িত্বশীল এবং ভবিষ্যৎ দেশ গড়ার প্রকৃত কারিগর। শিশু–কিশোরদের বাস্তুসংস্থানিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্রনফেন বার্নারের ইকোলজিক্যাল সিস্টেম থিওরির পাঁচটি ধাপ (মাইক্রো, মেসো, ম্যাক্রো, এক্সো ও ক্রনো) ভারসাম্যের নির্দেশনা প্রদান করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী পরিবার, পরিবারের সঙ্গে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক, পিতা-মাতার কর্মক্ষেত্র, সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ এবং সময়ের চাহিদার সঙ্গে খাপ-খাওয়ানোর মধ্যকার ভারসাম্য শিশু-কিশোরদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার চক্রাকার প্রক্রিয়ায় মূলত একটি চেইনের মতো। এই ধাপগুলোর একটিরও ছন্দপতনে ভেঙে পড়তে পারে শিশু–কিশোরদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার পুরো প্রক্রিয়াটি।

*শিক্ষক, মর্নিং গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভার ক্যান্টনমেন্ট এবং শিশু শিক্ষা মনস্তত্ত্ব ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষক। [email protected]