করোনা মহামারিতে সময়ের সামাজিক চ্যালেঞ্জ কী

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর সবচেয়ে বহুল উচ্চারিত শব্দ জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর নিকটতম শব্দ দুর্যোগ। দুর্যোগের বৃহত্তর পরিসরকে মহামারি বলা হয়। যত সম্ভাবনা ও আশা নিয়ে ২০২০ সাল শুরু হয়েছিল, তা আমূল পাল্টে গিয়ে মহামারির মতো একটি দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এখন আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুসারে, এ ভাইরাস সংক্রমণে থেকে মৃতের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ পেরিয়েছে। সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৮৮ লাখ ছাড়িয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এ–জাতীয় সংকট দেখেনি। তিন-চার মাস আগে কেউ ভাবতেও পারেনি এটি ঘটতে পারে। বাংলাদেশে পরীক্ষার সুবিধাগুলো বাড়ার পরে নিশ্চিত করোনাভাইরাস সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আজ অবধি নিশ্চিত হওয়া সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার পেরিয়েছে। একইভাবে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী একবার বলেছিলেন যে কমিউনিটি পর্যায়ের ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক।

করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলেছে। মহামারিতে বিশ্বের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে ওঠার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এটি সামাজিক ভাঙন এবং রাজনৈতিক বিভাজনও ঘটবে। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কোনো অস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। এটি অভিবাসীবিরোধী মনোভাবের ফলস্বরূপ হতে পারে। ইতিমধ্যে চীনবিরোধী জাতিগত নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা জানা গেছে। ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এখন অভিবাসন বিরোধিতা করার আরও একটি কারণ খুঁজে পাবে। ভাইরাস সংকটের সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক পরিণতি সামাজিক অস্থিরতার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ নিরাময়ের জন্য কোনো ওষুধ এবং কোনো ভ্যাকসিনও নেই। সুতরাং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যত্নশীল, উদ্ভাবনী এবং চিন্তাশীল সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রয়োজন।

সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম বলেছিলেন যে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সময় অ্যানোমি ঘটে। ‘অ্যানোমি’ হলো আদর্শহীনতা ও লক্ষ্য-স্বল্পতার পরিস্থিতি। ডুর্খেইমের মতে, দ্রুত সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের সময় আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়। ডুর্খেইমের কাছে আত্মহত্যা সামাজিক অস্থিরতার উদাহরণ ছিল। করোনার এ সময়টিকে একটি অ্যানোমি পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ভয়, অনিশ্চয়তা, মানসিক চাপ একং আর্থিক কষ্ট সমাজকে গ্রাস করেছে এবং করতে থাকবে। জার্মানির এক মন্ত্রী এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মহত্যা করেছেন। বাংলাদেশে যশোরে এক দম্পতি করোনার দরিদ্র্যতার কারণে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পারিবারিক সহিংসতা বিশ্বের বহু জায়গায় করোনাভাইরাস সংকটের পর বেড়েছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউনে গিয়েছিল প্রায় প্রতিটি দেশ। ফলে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যস্ত শহরগুলো নির্জন দেখা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে সীমানা বন্ধ হয়ে গেছে। কোটি মানুষ তাঁদের ঘরবন্দী। কিন্তু গৃহহীনরা রাস্তাতেই আছে। তাদের জন্য বাড়িতে থাকার বার্তা তাদের জন্য একটা রসিকতা। এদিকে যাঁরা প্রতিদিনের ভিত্তিতে উপার্জন করেন, তাঁরা আয় হারিয়েছেন। কেউ কেউ প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন আবার অনেকেই সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো ভঙ্গ করছেন। কারণ হয় তারা খামখেয়ালি আচরণ করছেন, নয়তো ভয়াবহতাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। করোনাভাইরাস সংকটের অর্থনৈতিক পতনের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারগুলো ধসে পড়েছে। অনেক লোক কাজ ও জীবিকা নির্বাহের পথ হারিয়েছে। এটি সংকটের এমন সময়, যা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই দেখেনি। দেশগুলো অর্থনীতি রক্ষার জন্য অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেখানে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ বাস করে, বাংলাদেশিদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা, নিরবচ্ছিন্ন দুর্নীতি এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণে করোনাভাইরাসটি দরিদ্রদের সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে। বিগত বছরগুলোতে দেশে দেশে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা রোধ করবে এই ভাইরাস। পুরো বিশ্ব এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের (এসডিজি) অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

কিছুক্ষেত্রে দেশগুলো প্রথম থেকেই শুরু করতে বাধ্য হবে। বছরের পর বছর ধরে করা অগ্রগতি নস্যাৎ হতে পারে। এই মহামারি চলাকালীন আমরা সমাজে অস্থিরতার কিছু উপাদান দেখছি। উদাহরণস্বরূপ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের ভাড়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ থাকার অভিযোগে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা অস্বীকার করা হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত কলঙ্ক বা নেতিবাচক মনোভাবের কারণে সাধারণ রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। দুঃখের বিষয় কিছু্ক্ষেত্রে মৃতদেহগুলো এমনকি প্রিয়জনের দ্বারা অযত্নে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। লোকজন ত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রতিবাদ করছে। এগুলো অ্যানোমো পরিস্থিতির কিছু উদাহরণ। অন্যদিকে ‘বাড়িতে থাকুন’ নিয়ম ভেঙে লোকেরা ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ধারণা, আরও অনুরূপ উদাহরণ রয়েছে। হতে পারে বর্তমান পরিস্থিতির উত্তাপে অ্যানোমি লোকেরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অনেকে অদৃশ্য ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন না। এগুলো সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চিকিৎসক, নার্স, কয়েকটি কমিউনিটি সংগঠন, পুলিশ, ব্যাংকার, সাংবাদিকরা পেশাদার সেবা প্রদান করছেন। সামাজিক জীব হিসেবে আমরা অন্যদের সাহায্য আশা করি। একটি মানবিক আবেদন আছে। ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানীরা (Humanistic/Positive Psychologists) মানব প্রকৃতিকে (Sonodiatitvave) সন্দেহ ছাড়াই ‘ভালো’ বলেন। সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এটি একটি সমাজবান্ধব আচরণ (Prosocial) হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।

সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দুর্ভিক্ষ বা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি বিশেষ করে দরিদ্র (দেশগুলোতে যাদের সাধারণত দুর্বল প্রশাসন, দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং দুর্বল স্বাস্থ্য) ব্যবস্থা রয়েছে। সংকটের এমন এক নজিরবিহীন সময়ে, জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে যে তারা দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। যেহেতু ভ্যাকসিন এক বছরেরও কম সময় হওয়ার আশঙ্কা নেই। স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাগুলোও বিবেচনা করা উচিত।

বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এলোমেলোভাবে, সমন্বয়হীনভাবে ত্রাণ সরবরাহ দীর্ঘকালীন পর্যাপ্ত নয়। অনেক দরিদ্র মানুষ ত্রাণ পাননি। দেশের বিভিন্ন জেলায় ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ করছেন। প্রায় এক–দুই বছর ধরে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহের বিষয়ে বাংলাদেশের চিন্তা করা দরকার। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ নিয়ে অমর্ত্য সেনের গবেষণায় দেখা গেছে যে দুর্ভিক্ষ বছরে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পায়নি। প্রকৃতপক্ষে, লোকেরা খাবার ক্রয় বা অতিরিক্ত ক্রয়ের ক্ষমতাটি অভাব ছিল। দুর্ভিক্ষ বা দুর্ভিক্ষেরে মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে যে দরিদ্র লোকেরা খাদ্যের অধিকার হারাবেন না। এই কারণে বাজার এবং সরবরাহ চেইনের নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ বিবেচনা প্রয়োজন। সরকারদের তাদের নীতি ও কর্মসূচি পরিচালনার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

করোনাভাইরাস থেকে সংক্রমণ রোধ করার জন্য এই মুহূর্তে কোনো ভ্যাকসিন নেই। তবে ভ্যাকসিনের মানবিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে। কার্যকর ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত অদূর ভবিষ্যতে সামাজিক দূরত্বের মতো সামাজিক ব্যবস্থাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। লকডাউনটিকে বর্তমান প্রত্যাশার চেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য চালিয়ে যেতে হতে পারে। এই কারণে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও প্রয়োজন।

এই মহামারি মোকাবিলায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো প্রকার নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছুটি ঘোষণা করেছে। এ মহামারিটি সংস্থাগুলোর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দুর্বল গবেষণা কর্মক্ষমতাকে প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কোভিড-১৯–এর একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে দ্রুত প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে স্থানীয়ভাবে এটি আবিষ্কার করা দরকার ছিল। কারণ, ভাইরাসটি বিভিন্ন দেশে এর ফর্ম পরিবর্তন করতে পারে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের করার জন্য দেশে অর্থনৈতিক সুবিধাও রয়েছে কারণ তাদের পেটেন্টের অধিকার থাকে।

এই গ্রহের প্রত্যেকের জন্য সর্বজনীন এবং সমমানের স্বাস্থ্যসেবা এবং সর্বজনীন আয়ের গ্যারান্টি সম্পর্কে ভাবার এখনকার চেয়ে আর ভালো সময় আর নেই। কারণ, ভাইরাসটি বৈষম্যমূলক আচরণ করে না এবং সামাজিক জীব হওয়ায় নিম্ন শ্রেণির লোকদের অন্যের সঙ্গে বা আরও উচ্চতর শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, দারিদ্র্য একা দরিদ্রদের সমস্যা নয়। এটি ধনী ব্যক্তিদেরও সমস্যা। তাঁর কথা করোনাভাইরাসটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ, সামাজিক জীব হিসেবে প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্বায়নের যুগে সব দেশ, রাজ্যগুলো পরস্পর সংযুক্ত একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ভাইরাস কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করে না এবং যেকোনোটি অন্য ব্যক্তির কাছে পাঠাতে পারে। মহামারি–পরবর্তী সময় বিশ্ব এক হবে না। কাজ এবং শিক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন হবে।

প্রথমত, অনেক মানুষ বাড়ি থেকে কাজ করবে।

দ্বিতীয়ত, অনলাইন লার্নিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি মূল অঙ্গ হয়ে উঠবে।

এ ছাড়া জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ, সহিংসতা, রক্ষণশীল রাজনীতি, অভিবাসীবিরোধী মনোভাব ইত্যাদি আরও বাড়তে পারে।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে কাজ করা যেতে পারে। মহামারির মতো দুর্যোগের মধ্যেও গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করে চলছে। এতে আমরা দেশ ও পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে, তা জানতে পারছি। এই করোনাকালীন সাংবাদিকদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো ভুয়া ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এড়িয়ে যাওয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজকাল আগেই তথ্য পেয়ে যায়। তথ্যেও এই অধিক আনাগোনা একদিকে যেমন মানুষকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক পরিস্থিতি জানাতে সাহায্য করছে, তেমনি নানা ভুয়া ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যও সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গণমাধ্যম যাতে যাচাই-বাছাই ছাড়া এসব তথ্য তুলে না ধরে, সেটাই খেয়াল রাখতে হবে। এখন তথ্য যাচাইয়ের নানা রকম পদ্ধতি আছে, সেগুলো ব্যবহার করা প্রয়োজন। কাটতি বাড়ানোর প্রবণতা যত কম থাকবে, ততই ভালো।

পাশাপাশি প্রতিনিয়ত যাঁরা এই সংবাদের পেছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের মাথায় রাখা উচিত। এ দুর্যোগে কাজ করতে গিয়ে তাঁরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের চিকিৎসা ও পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও ভাবতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না গণমাধ্যম না থাকলে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠবে। দুর্নীতি, অপরাধ, অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানার কোনো সুযোগ থাকবে না। ফলে একধরনের অরাজক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। সারা পৃথিবীতেই বারবার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হয়েছে, হচ্ছে। নিয়ম-নীতির বেড়াজালে তাকে স্তব্ধ করার জন্য কাজ চলেছে। এ ধরনের নীতি কখনো পৃথিবীর জন্য সুফল বয়ে আনে না। তাই করোনার মতো মহামারিতে গণমাধ্যম স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্বশীল আচরণ করলে লাভ বৈ ক্ষতি হবে না।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে অবশ্যই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জোরদার করতে হলে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে, কমাতে হবে দুর্নীতি। সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন ও শক্তিশালী হওয়া দরকার। নিম্ন আয়ের সব লোককে আয়ের সহায়তা দেওয়া উচিত। করোনাভাইরাস নিয়ে সব স্টিগমার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কুলগুলো সচল রাখতে এবং বাসা থেকে কাজ করার জন্য আইটি সামর্থ্য এবং প্রাপ্যতার অনেক বেশি বাড়াতে হবে। মহামারি বা মহামারিকালীন একটি যুগোপযোগী ও বিস্তৃত আইনিকাঠামো বেশ প্রয়োজন।

বিশ্বনেতাদের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি এর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিণতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। সঙ্গে গণমাধ্যমকেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের কণ্ঠ দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা সবাই একসঙ্গে এই সংকটে আছি। দৃঢ়তার বন্ধনে আমরা এগিয়ে যাব একই সুরের বাঁধনে। মোকাবিলা করব মহামারি করোনা সময়ের সব সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো। একসঙ্গে আমরা জয়ী হব।

*কামরুল হাসান, গবেষক, শিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী; তুহিন রায়, গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক, সমাবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; সারা মনামী হোসেন গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়