খাগড়াছড়ির গঞ্জনা 'উত্তর গঞ্জপাড়া'

খাগড়াছড়ি শহরে যাতায়াতের জন্য ‘উত্তর গঞ্জপাড়া’ মানুষের একমাত্র বাহন এ নৌকা। ছবি: লেখক
খাগড়াছড়ি শহরে যাতায়াতের জন্য ‘উত্তর গঞ্জপাড়া’ মানুষের একমাত্র বাহন এ নৌকা। ছবি: লেখক

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ি। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থান তৈরি করেছে এই জেলা।

সাজেকের নাম কে না জানে! সেই সাজেক যাওয়ার একমাত্র স্থলপথ খাগড়াছড়িকে ছাড়া কল্পনাও করা যায় না।

সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির উন্নয়নের চিত্রও পরিবর্তন হয়েছে অতিদ্রুত। সে ক্ষেত্রে মডেল স্থাপন করে আছে খাগড়াছড়ি পৌরসভা। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজব্যবস্থা, বিদ্যুৎব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, শহরের চারদিকে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘উত্তর গঞ্জপাড়া’ এলাকাটি যেন নির্মম অবহেলার শিকার।

খাগড়াছড়ি পৌরসভা থেকে মাত্র ১৫০ (প্রায়) মিটার দূরত্বে অবস্থান করেও এলাকাটি পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশের অন্যান্য পৌরসভায় এই রকম দৃষ্টান্ত আছে কি না, আমার জানা নেই। এই উন্নত প্রযুক্তির যুগেও ১০ মিটারের একটি খাল (চেঙ্গি খাল) এলাকাটিকে পৌরসভার বাইরে ফেলে রেখেছে, যা খুবই লজ্জাজনক! এই এলাকায় প্রায় এক হাজার পরিবার বসবাস করে। প্রতিটি পরিবারে ৪ জন করে ধরলেও (যদিও আরও বেশি হবে) প্রায় চার হাজার মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি কাঠের তৈরি নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়। স্কুল-মাদ্রাসার ছোট ছোট বাচ্চা প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ নিয়ে নৌকায় পারাপার হয়।

এই ছড়ায় ব্রিজ বা সেতু হলে শহরের সঙ্গে ‘উত্তর গঞ্জপাড়া’র সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হতো। ছবি: সংগৃহীত
এই ছড়ায় ব্রিজ বা সেতু হলে শহরের সঙ্গে ‘উত্তর গঞ্জপাড়া’র সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হতো। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছরই কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটা এই এলাকার জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৌকা ডুবে স্বজন হারানোর কান্না দেখা যেন রুটিনে পরিণত হয়েছে।

একটি ব্রিজ এই এলাকার প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। সেই আবেগ-অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি নির্বাচনেই প্রার্থীরা তাঁদের স্বার্থ উদ্ধার করে নেন। কিন্তু কত নির্বাচন চলে গেল! কত সরকার এল-গেল! এলাকার মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।


আমাদের এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা বাদই দিলাম। কারণ, দুর্ভোগের কথা বলে লাভ হবে না জানি। লাভ যদি হতোই তাহলে আরও আগে থেকেই এলাকার মানুষ ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করত।

নৌকায় পারাপারের সময় মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। ছবি: লেখক
নৌকায় পারাপারের সময় মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। ছবি: লেখক

অন্তত খাগড়াছড়ির সৌন্দর্য রক্ষার্থে এই এলাকার উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই এলাকাটির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে চারদিকে যতই উন্নত করা হোক শহরের সৌন্দর্য ফুটে উঠবে না। তাই সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যত দ্রুত সম্ভব এই এলাকায় একটি ব্রিজের ব্যবস্থা করলে এলাকার মানুষগুলো স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারবে এবং আমাদের পর্যটন নগরী খাগড়াছড়ির সৌন্দর্য আরও সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে।


এলাকার প্রতিটি মানুষ আশা রাখে অতি দ্রুত তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।

* শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়