শুভ জন্মদিন প্রাণের বিদ্যাপীঠ, পবিপ্রবি

গতকাল ছিল ৮ জুলাই। আজ থেকে দুই দশক আগে এ দিন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়। উচ্চশিক্ষার এক নবদুয়ার উন্মোচিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি ঘটে। দেশের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর উচ্চশিক্ষার ব্রত নিয়ে যাত্রা শুরু করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস

পটুয়াখালীর প্রবেশপথে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালীস্থ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্কয়ার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পুবে দুমকি উপজেলা সদরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি। জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় পটুয়াখালী কৃষি কলেজ; যা ১৯৭৯-৮০ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের অধিভুক্ত হয়ে বেসরকারি কৃষি কলেজ হিসেবে স্নাতক পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০০ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কৃষি কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ বিলুপ্ত করে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইন পাস হয় এবং ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বাস্তব রূপ লাভ করে।

২০০৮ সালে ডিসেম্বর মাসে সাবেক বরিশাল ভেটেরিনারি কলেজকে অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ হিসেবে আত্তীকরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন; যা বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরাতে অবস্থিত।

কৃষি অনুষদ, অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ (বরিশাল ক্যাম্পাস), ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ, নিউট্রিশন ও ফুড ম্যানেজমেন্ট অনুষদ এবং ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ। এই আট অনুষদে মোট শিক্ষার্থী ৩ হাজার ৩৩২। মোট শিক্ষক ২৬০ জন (অধ্যাপক ৮৪, সহযোগী অধ্যাপক ৬০, সহকারী অধ্যাপক ৬৫ এবং প্রভাষক ৫১ জন।) ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল আছে ১টি ও কৃষি গবেষণা খামার আছে ৩ টি।

দেশের সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি। সেশনজট মুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ ভান্ডার পবিপ্রবি। সারি সারি গাছ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে এক অন্যন্য মাত্রা। যেন পুরো বিশ্ববিদ্যালয় সবুজের কার্পেটে মোড়ানো। দুচোখ যেদিকে যায় শুধুই সবুজ আর সবুজ। নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্যজুড়ে রয়েছে ক্যাম্পাসকে।

একদিন দেশের একজন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের উদ্দেশ্যে ভর্তি হয়েছিলাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে আজ দেশের প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। আজ আমি একজন প্রাণী চিকিৎসক একজন ভেটেরিনারিয়ান। আমার নতুন পরিচয় হয়েছে। সারা দেশ আমাকে একজন ভেটেরিনারি ডাক্তার হিসেবে জানে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে শিক্ষার সুযোগ না পেলে হয়তো বা এভাবে নিজেকে পরিচিত করার সুযোগ পেতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, কর্মচারী—সবার কাছেই ঋণী। এই ঋণ শোধ করার সুযোগ কোনো দিন হয়তো পাব না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি পেশার উন্নয়নে ছাত্ররাজনীতি, সাংবাদিকতা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শিক্ষকদের অভিভাবকসুলভ ব্যবহার, শাসন, ভালোবাসা, ভালো লাগা সবই পেয়েছি। ক্যাম্পাসে যেদিন প্রথম পা রেখেছিলাম, সেদিন থেকেই নিজেকে একজন প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলার ব্রত নিয়েছিলাম। জানি না কতটুকু নিয়ে বেড়াব। খুব মিস করি ক্যাম্পাস জীবনকে। সারা দিন ক্লাসের পর, বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড়, আড্ডাবাজি, একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া। বড্ড খারাপ লাগে। মনে হয় যদি ফিরে পেতাম ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলো।

দূর থেকে একটাই প্রত্যাশা, দেশ–বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম দিন দিন আরও ছড়িয়ে পড়বে। আজ আমি ধন্য আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, ৮ম ব্যাচ, ডিভিএম। [email protected]