৯ মাসে ২০ লাখ টাকার জামদানি বেচলেন উই গ্রুপের কাকলী রাসেল

ঢাকাই জামদানিতে কাকলী রাসেল তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই জামদানিতে কাকলী রাসেল তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই জামদানি শাড়ির প্রতি ভালো লাগা এবং আগ্রহ তৈরি হয় কাকলী রাসেল তালুকদারের। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে তাই প্রয়োজন ছাড়াই ঘুরতে যেতেন বিভিন্ন তাঁতিপল্লিতে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই জামদানির ব্যাপারে জানার চেষ্টা করেন সাত বছর।

উইমেন ভয়েজ বিডি ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নরসিংদীর মেয়ে কাকলী ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করে ই-কমার্স এবং ফিন্যান্স বিষয়ে পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেন। পারিবারিক দায়িত্বের কারণে এমবিএ অসমাপ্ত থেকে যায় এবং চাকরিটাও ছেড়ে দেন। পরবর্তী দুই বছর খুব হতাশায় কাটলেও বাবা-মা, ভাইদের উৎসাহে ২০১৯ সালের জুন মাসে ভাইয়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে কাকলী'স অ্যাটায়ার নামে অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোগের শুরু করেন।

ফেসবুকে পেজ থাকলেও ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর উই গ্রুপে প্রথম বিক্রি শুরু হয়ে ২০২০ এপ্রিল পর্যন্ত গ্রুপেই জামদানি বিক্রি হয় ছয় লাখ টাকা। মাত্র আড়াই মাসে এসে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ লাখ টাকায়!

প্রায় পাঁচ লাখ সদস্যের ই-কমার্স গ্রুপ উইম্যান অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম উইয়ের (কার্যকরি কমিটি) সাবেক পরিচালক কাকলী রাসেল তালুকদারকে এখন অনেকেই চেনেন ‘জামদানি রানি’ হিসেবে। জামদানি শাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ফেসবুকে ডিজিটাল স্কিল বিষয়েও লেখালেখি করেন।

শুরুতে কাকলী রাসেল তালুকদারকে কেউ চিনতেন না। তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্য পেয়েছিলেন উইয়ের মতো প্ল্যাটফর্ম এবং ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা, উইয়ের উপদেষ্টা রাজিব আহমেদের পরামর্শ।

৯ মাসেই শুধু অনলাইনেই ২০ লাখ টাকার জামদানি বিক্রির বিষয়ে কাকলী রাসেল তালুকদার বলেন, উইয়ের রাজিব স্যারের কাছে শিখেছি কীভাবে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করতে হয়। উই থেকে ই-কমার্স বিজনেসে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব জেনেছি। অনলাইন ব্যবসায়ে ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচিতর বিষয়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে জরুরি হলো একটি কাজের দক্ষতা এবং সে–বিষয়ক সম্যক জ্ঞান। প্রতিদিন পড়তে হয় জানতে হয়। হঠাৎ ধারণা ছাড়া কোনো ব্যবসা নিয়ে নেমে গেলে সেখানে সফল হওয়া কঠিন, হতাশ হতে হয়। আমি আমার কাজ নিয়ে প্রচুর পড়েছি এবং নিজের দক্ষতা উন্নয়নের চেষ্টা করেছি।

ঢাকাই জামদানিতে কাকলী রাসেল তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই জামদানিতে কাকলী রাসেল তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত

কাকলী রাসেল তালুকদার বলেন, অনলাইনে ব্যবসা বিষয়টি বিশ্বাসের। এখানে সুনামটাই হলো প্রথম ব্র্যান্ডিং। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের বিষটিও গুরুত্বপূর্ণ। যাঁকে মানুষ চিনবে, যে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে, তার কাছ থেকে পণ্য কিনবে। এখন অনলাইন মার্কেটের যুগ। দিনে দিনে অনলাইন মার্কেট বড় হচ্ছে। অফলাইন মার্কেটে গিয়ে সময় নষ্ট করার চেয়ে বিনা ঝামেলায় ভালো মানের পণ্য এবং সার্ভিস ঘরে বসে পাচ্ছে, তাই অনলাইনে মানুষের আস্থাটাও বাড়ছে।

আসল জামদানি চেনার বিষয়ে কাকলী রাসেল তালুকদার বলেন, আসল ঢাকাই জামদানির সুতা টান দিলে জড়াবে না এবং পোড়ালে ছাই হয়ে যাবে। হাতে বোনা শাড়িটি যে আরাম দিতে পারে, মেশিনে বোনা শাড়ি তা পারে না।

দেশি জামদানি কার্পাস জাতীয় তুলাকে সুতো বানিয়ে তাও বিশেষ প্রক্রিয়ায় রং করে রোদে শুকিয়ে তবেই তাঁতে ফেলা হয়। ঢাকাই জামদানি কটন, হাফসিল্ক ও রেশম সুতোয় বোনা। হাতে বোনা আসল জামদানির রং চাকচিক্যহীন, তবে চোখ জুড়িয়ে যায়।

তাই মাত্র ৯ মাসে ২০ লাখ টাকার জামদানি অনলাইনে বিক্রি করতে পেরেছেন তাঁতির হাতের বানানো আসল জামদানিকে মধ্যবৃত্তের কাছে সহজলভ্য করার মাধ্যমে।

কাকলী রাসেল তালুকদার জানান, জামদানি দিয়ে পোশাকে ফিউশন আনারও চেষ্টা থাকবে ভবিষ্যতে। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে চাই তাঁতির হাতে তৈরি আসল জামদানি। তাঁর মতে, দেশীয় পোশাক নিয়ে শুধু আবেগ থাকলেই চলে না। এটিকে ফ্যাশনে নতুনত্ব এনে যুগোপযোগী করে তুলতে হয়।