ক্যাম্পাসের মুখরিত আড্ডাগুলো থমকে আছে

করোনাকালে ক্যাম্পাস আড্ডা এখন বন্ধ। ফাইল ছবি
করোনাকালে ক্যাম্পাস আড্ডা এখন বন্ধ। ফাইল ছবি

মামা কই তুই?

আমরা বসে আছি। তুই চলে আয় সেন্টাল ফিল্ডে। আসার সময় ঝালমুরি নিয়ে আসিছ।

হ্যাঁ, এটাই ক্যাম্পাসজীবনের প্রাণ, ক্যাম্পাস আড্ডা।

আড্ডা ছাত্রজীবনের একটা অংশ। মানুষ তার সমগ্র জীবনে সবচেয়ে আনন্দঘন কিছুসময় পার করে ক্যাম্পাসে আড্ডার মুহূর্তে। ক্যাম্পাস একটি শিক্ষার্থীর কাছে আবেগ-অনুভূতির জায়গা। ক্যাম্পাস জীবনে আড্ডা ছাড়া জীবন যেন রংহীন।

ক্যাম্পাসজীবন যেন বন্ধুত্ব আড্ডা, শিল্প-সাহিত্য ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় ঘেরা, যা একজন মানুষের জন্য অনেক বেশি দরকার। কখনো গানে গানে, কখনো ছোটখাটো খেলায় মেতে ওঠে এসব আড্ডা। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে কিংবা পড়ন্ত বিকেলে ক্যাম্পাসে ফুটে ওঠে এক দারুণ প্রতিচ্ছবি। মামার টংঘরের বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, আধোঘুম চোখে দৌড়ে এসে, ক্লাস শেষে ক্লান্ত দেহে নিয়ে বসে সবাই মিলে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়ার মধ্য একটা প্রশান্তি পাওয়া যায়। কখনো বা ক্লাসে ঢুকতে না পেরে আড্ডা দেওয়া। রাতগুলো আড্ডাতে পার করা। কোনো কথাই নেই, আড্ডা চলবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ক্যাম্পাস-জীবনে আড্ডা ছাড়া অলস ও অসাড় মনে হয়।

ক্যাম্পাসে বন্ধুত্ব থেকেই আড্ডা। এখান থেকে শুরু হয় স্বপ্ন দেখা। স্মৃতিময় হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস-জীবন। দিনের সব কর্মব্যস্ততা আর ক্লান্তিকে ছুটি দিয়ে ক্যাম্পাসে অবসরের দেখা মেলে তরুণদের আড্ডায় নানা রকম উদ্দীপনা। এই আড্ডাবাজি আর দুষ্টুমির ভিড়ে তারা যেন ভুলে যায় আগের ক্লান্তিময় দিনটির কথা। খোলা মাঠে বসে ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কী রে হায়। ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়’। এ রকম অসংখ্য পুরোনো দিনের গান হৃদয় ছুঁয়ে যায় আড্ডারত শিক্ষার্থীদের মাঝে। আড্ডা দেওয়ার সময় কখন যে সময় চলে যায় মনেই থাকে না।

জীবন চলছিল সুন্দরভাবেই। প্রিয় ক্যাম্পাসে আড্ডা, ক্লাস এভাবেই কাঠছিল দিনগুলো। হঠাৎ উদ্ভব হলো করোনা নামক প্রাণনাশক ভাইরাস। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস যে ভয়াল আকার নিয়েছে, তার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে মানবজীবনের ওপর।

করোনা আতঙ্ক স্বাভাবিক জীবন যাপনে ছন্দপতন ঘটেছে সবার। শিক্ষার্থীদের প্রিয় ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ আছে অনেক দিন থেকেই। ঘরবন্দী হয়ে পড়ে আছে তারা। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনসহ নানা ব্যস্ততা বা এসবের ফাঁকেও আড্ডার দিনগুলো যেন নেই তাদের কাছে। সেন্টালফিল্ড, মামার চায়ের দোকানে বসে আড্ডাগুলো যেন থমকে আছে। নেই কারও মাঝে প্রাণবন্ত জীবন। চঞ্চলপ্রিয় ক্যাম্পাস আজ শূন্য, মুখর আড্ডাগুলো আজ ঘরবন্দী। ক্যানটিনে বন্ধুরাসহ এক প্লেটে খাওয়া, সারা দিন বসে গিটার হাতে আড্ডা দেওয়া যেন নেই এখন। প্রিয় ক্যাম্পাসে প্রিয় আড্ডাগুলো যেন থেমে আছে।

হাজারো গল্পে সাজিয়ে প্রতিটা দিনের গল্পটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক। সুস্থ হয়ে উঠুক সবকিছু। ফিরে আসুক ক্যাম্পাসে প্রিয় আড্ডাগুলো।

*লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।