বড়বেলার ঈদ

মহামারির দুঃসময়ের মধ্যে আরও একটি ঈদ। সবকিছু থেমে থাকার মধ্যেও সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি আর ত্যাগের মহিমায় মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করছেন।

আগে একেকটা ঈদ আসত বহু প্রতীক্ষার প্রহর নিয়ে। বড়বেলায় এসে ঈদের নিয়ম বাঁধা একঘেয়েমিতায় ঠিক ঈদের মতো আনন্দটা কেন জানি এখন আর পাওয়া যায় না। হয়তো বাস্তবতা বুঝতে শিখে যাওয়া কিংবা দায়িত্বের চোখরাঙানির কারণে ঈদের খুশি অনেকেরই চার দেয়ালে বন্দী। তবু আমরা ভালো থাকা কিংবা রাখার আয়োজনে কখনো জিতে গেলে অনুভূতিগুলো ছোটবেলায় ফিরে যায় যেন।

প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে বাড়িতে ছুটে যায় কমবেশি অনেকেই। বছরের অন্যান্য সময় নানা কারণে সব আত্মীয়ের সঙ্গে হয়তো যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয় না। স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ না থাকলে পারস্পরিক দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। ঈদের এই সময়ে সেই দূরত্ব দূর করে সব আত্মীয়ের খোঁজ নেওয়া, ইগোটা অন্তত এই এক দিনের জন্য দূরে সরিয়ে রাখাতেই আনন্দ আর মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে চান আপামর বাঙালি। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের স্বয়ং আল্লাহও ক্ষমা করেন না।

এখন ঈদ মানে চাঁদরাত জাগা, নামাজ থেকে এসে ঘুমানো, ভার্চ্যুয়াল উইশ আর টিভির বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ঈদ নাটক। শহুরে যান্ত্রিকতায় মানুষগুলো খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে নিজেদের বন্ধুত্বটাও হয়ে যায় যান্ত্রিকতার সঙ্গে। স্বার্থ আমাদের মন গভীরে পৌঁছে গিয়ে হারিয়ে দেয় নিষ্পাপ হাসি আর পাশে থাকার মানসিকতাদের। আমরা তবু সুযোগ খুঁজি, এই পথ হারিয়ে চিরায়ত স্বস্তি আর ভালো লাগার পথে পা বাড়ানোর। হয়তো বাস্তবতার কাছে আটকে যাই, বিষণ্নতার চোখরাঙানিটাও উপেক্ষা করা দায় হয়ে যায়, তবু সীমাবদ্ধতার মধ্যে সবার হাসিমুখটা দেখতে পাওয়া পরম সৌভাগ্য নয় কি?

উৎসবের এই দিন সবার ভালো যায় না, আমি–আপনি, আমরা সবাই মিলে খারাপের মধ্যেই ভালো থাকা আর ভালো দিনের প্রার্থনায় দুহাত তুলি। পৃথিবীর সব অসুখ কেটে যাক, মুছে যাক মন থেকে মনে আমাদের যত বিরহের সাতকাহন।

ঈদের আগে-পরের রাতগুলোয় অনেকেই বাজি ফুটানো আর উচ্চ স্বরে গান বাজানোকে উৎসব পালনের মাধ্যম মনে করে। আমরা এই কাজগুলো করার আগে আশপাশের পরিবেশ আর মানুষের কথা ভাবার চেষ্টা করা উচিত। আপনার আশপাশের বাড়িতে যদি বয়স্ক বা অসুস্থ কেউ থেকে থাকেন, বাজি আর গানের বিকট শব্দ তাঁদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। মসজিদের মাইকে পর্যন্ত বাজি ফুটাতে নিষেধ করা হয়। আমরা সবাই সচেতন থাকার চেষ্টা করব এ ব্যাপারে।

অনুভূতিগুলো বাঁচিয়ে রাখার গল্পে ছড়িয়ে যাক ঈদের আনন্দ। ঈদ মোবারক।

লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়