শ্যামনগরে অসচ্ছল মানুষ বাড়িতে বসেই পেলেন কোরবানির মাংস

শ্যামনগর অনলাইন ব্লাড ব্যাংক পশু কোরবানির পর প্রায় ১৫০ কেজি গোশত ১২টি এতিমখানা ও উপকূলীয় এলাকার ১৩০টি অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ছবি: আবদুল আলিম
শ্যামনগর অনলাইন ব্লাড ব্যাংক পশু কোরবানির পর প্রায় ১৫০ কেজি গোশত ১২টি এতিমখানা ও উপকূলীয় এলাকার ১৩০টি অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ছবি: আবদুল আলিম

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং উপকূলীয় উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর। এই উপজেলার তরুণ যুবকদের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম ইতিমধ্যে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বলা চলে এখানে যুবকদের মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হয়। এসব ভালো কাজের জন্য বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রে তাঁদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কোরবানির ঈদেও থেমে নেই তাঁদের কার্যক্রম। গরিব মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কেউ সংস্থার মাধ্যমে আবার কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করেছেন। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ-উল-আজহা। এই ঈদে যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তাঁরা কোরবানি দেন এবং কোরবানি করা পশুর গোশতের তিন ভাগের একভাগ গরিব মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। কিন্তু দেখা যায় অনেক লোক কোরবানি দিতে পারেন না; ঈদের খুশি তাঁদের কাছে অনেকটা আনন্দহীন হয়ে যায়। কারণ এই খুশির দিনে তাঁরা পরিবারে সন্তান ও সদস্যদের মাঝে একটু গোশত এনে দিতে পারেন না। একদিকে ঘূর্ণিঝড় আমফানের ক্ষয়ক্ষতি অন্যদিকে করোনার কারণে অনেক লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যারা গত বছরও নিজেরা কোরবানি দিয়েছেন কিন্তু এ বছর আর্থিক সমস্যার কারণে তাঁদের অনেকেই কোরবানি দিতে পারেনি। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে তাঁদের মুখে হাসি ফোঁটাতে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ গরু ও ছাগল জবাই করে গোশত অসহায় গরিব মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন আবার কেউ কেউ রান্না করে গোশত বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে মানবতার কল্যাণে কাজ করে আসছেন স্বেচ্ছাসেবী অনলাইন সংগঠন শ্যামনগর অনলাইন ব্লাড ব্যাংক। অনলাইন ব্লাড ব্যাংকের অ্যাডমিন আবদুল আলিম ও শেখ মফিজুর রহমানের উদ্যোগে অনলাইনে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি প্রায় ৭০ হাজার টাকা অনুদান সংগ্রহ করা হয়। সেই টাকায় কেনা কোরবানি দেওয়া হয়। প্রায় ১৫০ কেজি গোশত ১২টি এতিমখানা ও উপকূলীয় এলাকার ১৩০টি অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে বিতরণ করেন শ্যামনগর অনলাইন ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবকেরা। তারা বাড়ি বাড়ি মাংস পৌঁছে দিয়েছেন।

উপজেলায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে ইতিমধ্যে সবার নজর কেড়েছেন যুব সংগঠন সিডিও। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক গাজী ইমরানের নেতৃত্বে সিডিও পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় একটি গরু কোরবানি করে ৬০৩টি পরিবারের মাঝে কোরবানির মাংস বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন সিডিওর স্বেচ্ছাসেবকেরা।

কাশিমাড়ি ইউনিয়নের উৎসর্গ সোসাইটি এবার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁরা আইনজীবী লোটাস ও আইনজীবী আফসানা মিতুর সহযোগিতায় ঈদের রাতে ১৯০টি এতিম অসহায় পরিবারের মাঝে রান্না করা মাংস বিতরণ করেছেন।

এ ছাড়া একই ইউনিয়নে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত তিন শত পরিবারের মাঝে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ও গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট ইউকের আর্থিক সহযোগিতায় এবং সাতক্ষীরার বীকন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কাশিমাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তিন শতাধিক পরিবারে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৩ টি গরু ও ৭ টি ছাগল কোরবানি করা হয়েছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের উপকূল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাতক্ষীরা ওয়ার্ল্ড ব্রাদার্স সার্কেলের আর্থিক সহযোগিতায় বুড়িগোয়ালিনী ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে প্রায় ৩০০ পরিবারের মাঝে একটি গরুর মাংস বিতরণ করো হয়েছে।

বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির অনুদান এবং শ্যামনগরের যুবকদের আন্তরিকতা ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমের ফলে প্রায় ১ হাজার ৫০০ অসচ্ছল পরিবার ও ১২টি এতিমখানার এতিম ছাত্রদের মুখে হাসি ফুটেছে। শ্যামনগরের যুবকেরা বিপথগামী না হয়ে স্বেচ্ছাসেবামূলক ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকুক এটাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা। বিজ্ঞপ্তি