কেন ডাস্টবিন নেই রাজশাহীর 'ভদ্রা-পারিজাত লেকে'

পড়ে আছে ময়লা। ছবি: লেখক
পড়ে আছে ময়লা। ছবি: লেখক

ডাস্টবিনের অভাব এবং দর্শনার্থীদের উদাসীনতায় দিন দিন ঝুঁকির মুখে পড়ছে কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য পাড় বাঁধাই করা রাজশাহী মহানগরীর ‘ভদ্রা-পারিজাত লেক’-এর পরিবেশ ও সৌন্দর্য।

লেকের পাড় বাঁধাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার পরপরই প্রায় প্রতিদিনই এখানে বেড়াতে আসেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। লেকে বেড়াতে আসা প্রায় সবার হাতেই থাকে চিপস, পানি ও কোমল পানীয়ের বোতল, ওয়ানটাইম চায়ের কাপসহ নানা খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট। ব্যবহার শেষে স্থান পরিত্যাগের সময় এসব খালি প্যাকেট এবং বোতল ডাস্টবিনের অভাবে যত্রতত্র ফেলে যান সবাই।

সম্প্রতি ঘুরে দেখা যায়, লেকের পানি, পাড় এবং লেকের চারপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী ও তামাক জাতীয় দ্রব্যের মোড়ক, পানি ও কোমল পানীয়ের বোতল, ওয়ানটাইম চায়ের কাপসহ নানা আবর্জনা। এ ছাড়া লেকের বাঁধাই করা পাড়ে পানের পিক ও পানিতে সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

লেকের পানি, সদ্যনির্মিত পাড় এবং এর আশপাশের রাস্তাগুলোতে সব সময়ই ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। ময়লা ফেলার জন্য কোনো নির্ধারিত স্থান বা ডাস্টবিন না থাকাকে এর জন্য দায়ী করেন তাঁরা। তবে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দাবি, দর্শনার্থীদের সচেতনতার অভাবে লেক ও পাড়ের এ হাল।

লেকে ঘুরতে আসা হিমেল জানান, মূলত ডাস্টবিনের অভাবেই এমনটা ঘটছে। ডাস্টবিন না থাকার কারণে দর্শনার্থীরা তাঁদের উচ্ছিষ্টগুলো কোথায় ফেলবেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। তখন যত্রতত্র ফেলার একটা মানসিকতা গড়ে ওঠে তাঁদের মাঝে।

আরেক দর্শনার্থী রাশিদুল ইসলাম মাহিন জানান, এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি স্থান রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও আরেকটু সচেতন হওয়া উচিত। এটি বিনোদন কেন্দ্রে রূপ লাভ করবে তা সবাই জানতেন, তার পরও এটির পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ না নেওয়াটা কর্তৃপক্ষের এক ধরনের উদাসীনতাই! আবার এমন সুন্দর একটা জায়গায় পানের পিক ফেলা বা পানিতে কোনো কিছু ফেলাও নাগরিকদের চরম দায়িত্বহীনতা।

রাজশাহীর ‘ভদ্রা-পারিজাত লেক’। ছবি: লেখক
রাজশাহীর ‘ভদ্রা-পারিজাত লেক’। ছবি: লেখক

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর পরিচ্ছন্নতাকর্মী এ ক্ষেত্রে পুরো দায় দেখেন ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে আমরা এটি পরিষ্কার করি। সকালে এলে এখানে কোনো আবর্জনা দেখা যায় না। কিন্তু কেউ যদি পানিতে আবর্জনা ফেলে, তবে আমরা কীভাবে তা পরিষ্কার করতে পারি? পনিতে কোনো কিছু না ফেললে এটি সব সময় পরিষ্কার থাকবে।’

তবে, ডাস্টবিনের প্রয়োজন আছে কি না, জানতে চাইলে ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘অবশ্যই আছে, তবে ডাস্টবিন দিলেও ওরা (দর্শনার্থীরা) দেখবেন একই কাজ করবে।’

তবে লেকে প্রাতর্ভ্রমণে আসা পদ্মা আবাসিক এবং পারিজাত আবাসিকে বসবাসরত কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, সকালের দিকে এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে চিত্র বদলে যায়। বিশেষ করে বিকেলের দিকে এখানে অনেক দর্শনার্থী আসেন, তাঁরাই মূলত যাওয়ার সময় ডাস্টবিনের অভাবে তাঁদের ব্যবহৃত খাবারের প্যাকেট ও বোতল ফেলে যান। রাতে কিছু পরিচ্ছন্নতাকর্মী তা পরিষ্কার করলেও তা যথেষ্ট নয়।

তবে কোনো কোনো বাসিন্দা একটু ক্ষোভের সুরেই জানান, কেবল পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা দর্শনার্থীদের দোষ দিলেই হবে না, এখানে কর্তৃপক্ষেরও গাফিলতি আছে। নির্মাণকাজের সময় কয়েকটি স্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কী ক্ষতি হতো বা এখন করলেই বা কী ক্ষতি হয়? তারা কি জানে না, এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করে!

লেকের পানিতে পড়ে আছে চিপসের প্যাকেট, ওয়ান টাইম গ্লাস। ছবি: লেখক
লেকের পানিতে পড়ে আছে চিপসের প্যাকেট, ওয়ান টাইম গ্লাস। ছবি: লেখক

তবে নামো ভদ্রার বাসিন্দা জাকির হোসেন জনি বলেন, ‘শুনেছি নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত লেকটির সৌন্দর্যবর্ধনের সব কাজ শেষ হয়নি। হয়তো সব কাজ শেষেই সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কিছু অস্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থা এখন করা যেতেই পারে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এটি একটি উন্মুক্ত স্থান। সারা দিন এখানে মানুষের আসা-যাওয়া থাকে। তা ছাড়া আশপাশের বহু মানুষ এখানে গোসল করে!’

পরিবেশবিদেরা বলছেন, এই ধরনের স্থানে ডাস্টবিনের কোনো বিকল্প নেই। যত দ্রুত সম্ভব এখানে স্থায়ীভাবে তা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল বা কাপ, সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ—এ সবই অপচনশীল দ্রব্য। এগুলো পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই যেখানে-সেখানে যাতে এসব ফেলা না হয়, সে জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই এ মুহূর্তে।

রাজশাহী মহানগরীর দুই অভিজাত এলাকা—পদ্মা আবাসিক ও পরিজাত আবাসিকের সূচনালগ্ন থেকেই লেকটিতে মূলত ২০১৮ সাল থেকে পাড় বাঁধাইয়ের কাজ শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। নির্মাণকাজ শেষের পরপরই স্থানটি পরিণত হয় নগরী ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন বয়সের ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আগ্রহ, আড্ডা এবং বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে।