শিশুদের সততার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

‘সততা সবচেয়ে বড় শক্তি। তাই সততা ও একাগ্রতা নিয়ে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। একদিন তোমরাও বড় কাজ করতে পারবে।’ গতকাল শুক্রবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে শিশুদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ১ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত ১ লাখবার পবিত্র কোরআন খতমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৫০ হাজার বার পবিত্র কোরআন খতম সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কোরআন খতমের কার্যক্রম মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত অন্যান্য কার্যক্রমের মতো সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্বতঃপ্রণোদিত একটি নিজস্ব কর্মসূচি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবার ও ক্যাপিটেশন গ্রান্টপ্রাপ্ত ৩ হাজার ৯২৮টি প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক এতিম শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি জেলার ২ হাজার ৮৭০টি প্রতিষ্ঠানের ৭০ হাজার ৮৫০ জন এতিম শিশু নির্ধারিত ৫০ হাজার বার পবিত্র কোরআন খতম সম্পন্ন করেছে।

শুক্রবার কোরআন খতম উপলক্ষে আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর মিলনায়তনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করে আশরাফিয়া এতিমখানা, ভাটারার হেফজ বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান। সরকারি শিশু পরিবার, তেজগাঁও, ঢাকার নিবাসী সোনিয়া আক্তার ও মিরপুরের নিবাসী বিজয় ইসলাম শিশুদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখে ও অনুভূতি প্রকাশ করে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ শিশু উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদারকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অনুভূতির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে বাঙালি জাতি আজীবন স্মরণ করবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সব সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ৫০ হাজার বার পবিত্র কোরআন খতম করায় শিশুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি শিশুদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৩ বছর বয়সে মা, পাঁচ বছর বয়সে বাবা ও ৭ বছর বয়সে দাদাকে হারান। মায়ের থেকে এতিম হওয়ার কষ্ট উপলব্ধি করতে পেরেছি এবং ৭৫-এর ১৫ আগস্ট মা-বাবা, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন হারিয়ে, বিদেশে শরণার্থী হিসেবে থেকে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বুঝতে পেয়েছি। যে যন্ত্রণা আজও আমাকে ও আমার বোনকে তাড়িয়ে বেড়ায়।’ তিনি শিশুদের কারিগরি দক্ষতা অর্জন করে সততা ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

*লেখক: উপপরিচালক গবেষণা, মূল্যায়ন, প্রকাশনা ও গণসংযোগ শাখা, সমাজসেবা অধিদপ্তর। [email protected]