অনেক প্রবাসী নিউইয়র্ক ছেড়ে যাচ্ছেন

আমেরিকার নিউইয়র্কে এসে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে অনেক প্রবাসীর। অভিবাসীদের স্বর্গরাজ্য নিউইয়র্কে বসবাস দুরূহ হয়ে উঠছে। তাদের অনেকেই সরে যাচ্ছেন অন্য রাজ্যে। নতুন আসা অভিবাসীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেক পরিবার অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে চলে গেছেন। অনেকে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। 

প্রতিদিনই নিউইয়র্ক থেকে দূরের রাজ্য মিশিগান বা প্রান্তিক নগর বাফেলোতে স্থানান্তরিত হওয়ার খবর আসছে। কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এর মূল কারণ নিউইয়র্কে যে পরিমাণ আয় করা যায়, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। বাসা ভাড়াসহ সবকিছুর দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল। এ ছাড়া সন্তানদের লেখাপড়াসহ অন্যান্য ব্যয় সামাল দিতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের প্রবাসীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বপ্নের দেশে এসে স্বপ্ন ভঙ্গের কারণে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। সারা বিশ্ব থেকে অভিবাসীদের আগমন ব্যাপকভাবে হয় নিউইয়র্কে। ফলে এখানে কর্মসংস্থানে প্রতিযোগিতাও বেশি। 
অন্যদিকে, মিশিগানের মতো প্রান্তিক রাজ্যে থেকে শ্বেতাঙ্গদের স্থানান্তর ঘটেছে ব্যাপকভাবে। অদক্ষ এবং আধা দক্ষদের জন্য এসব প্রান্তিক রাজ্যে রয়েছে কাজের ভালো ব্যবস্থা। বিশেষত নারীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন কলকারখানায় কাজের সুযোগ। এখানে শিক্ষিত এবং অর্ধ-শিক্ষিত নারীরা দিনে বা রাতের শিফটে কাজ করতে পারেন। তা ছাড়া বাসভাড়াও নাগালের মধ্যে। স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য রয়েছে ফুড স্ট্যাম্পের সুব্যবস্থা, যা নিউইয়র্কে পাওয়া দুর্লভ। তাই মিশিগান অনেক প্রবাসীর প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। 

বহু বাংলাদেশি পরিবার নিউইয়র্কের বাফেলোতে ঠাঁই নিয়েছেন। সেখানেও নিজের জন্য স্বপ্নের ঠিকানা করে নিয়েছেন। বাড়ির দাম কম হওয়াতে বাংলাদেশিরা ছুটছেন বাফেলোতো। পাঁচ-দশ হাজার ডলার ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাড়ির মালিক হচ্ছেন তারা। এখানে বাসা ভাড়াও কম। ৩০০-৪০০ ডলারেও বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। কাজের সুযোগও আছে। এসব কারণে আরও বহু বাংলাদেশি পরিবার বাফেলো চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
শামসুর রহমান নামের এক বাংলাদেশির সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয়। তিনি জানান, তিনি বহু বছর ধরে নিউইয়র্ক নগরে বাস করা সত্ত্বেও গত বছর মিশিগানের হ্যামট্রিক শহরে চলে যান। সেখানে তিনি দুটি পরিবার থাকা যায় এমন একটি ইটের বাড়ি মাত্র ৪৮ হাজার ডলারে কিনেছেন। 
আলাপকালে তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো আছি। পরিবারের জন্য বাড়ি কিনেছি, যা নিউইয়র্কে চিন্তাও করতে পারিনি। রাতের শিফটে কাজ করি। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচশত ডলার আয় করি। সব মিলিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সুখেই আছি। সবকিছু ইচ্ছেমতো সাজিয়েছি। বাড়ির পাশেই ফলমূল চাষ করি। খেলার জায়গাও রয়েছে। আনন্দেই আছি।’ 
শামসুর রহমানের মতো বহু বাংলাদেশি এখন নিউইয়র্ক ছাড়ছেন।