সারা বিশ্বে ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে। ধর্মীয় আর সামাজিক ব্যঞ্জনায় দিনটি যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব। আমেরিকার সিংহভাগ অধিবাসী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন পালন করেন তাঁরা।
দিনটি সামনে রেখে খ্রিষ্টানরা তাদের গির্জা, বাসা, বাগান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্রিসমাস ট্রি, মোমবাতি ও আলোকসজ্জাসহ নানা সরঞ্জামাদি দিয়ে সাজান। এটা জীবন যেন আনন্দঘন ও আলোকিত হয়, তারই বাহ্যিক প্রকাশ। উপহার সামগ্রী নিয়ে সবাই নিজ পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবকে দেখতে যান।
দিনটির অন্যতম আকর্ষণ হলো জাঁকালো ভোজনের আয়োজন। এ ভোজে টার্কি মুরগি এবং অন্যান্য উপাদেয় খাদ্য-সামগ্রীর ব্যবস্থা থাকে। এ দিনের হাসির ও কৌতূহলের বিশেষ দিক হলো কিংবদন্তি সান্তাক্লস এর আগমন। অদৃশ্য সান্তা ক্লজ গোপনে উপহার সামগ্রী দিয়ে আসেন, এমন বিশ্বাস করে আনন্দ পায় শিশুরা।
অধিকাংশ খ্রিষ্টান পরিবার এ দিবস উপলক্ষে সর্বাধিক পরিমাণ অর্থ খাবার ও উপহারসামগ্রী কিনতে খরচ করে। দিন দিন এ দিবসের বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ছে।
আমেরিকায় ক্রিসমাস ডে শুধু খ্রিষ্টানদের উৎসবে দিন নয়। অন্য অভিবাসীদের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারেও ক্রিসমাসের উৎসব দেখা যায়। আমেরিকান সমাজে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রজন্ম অন্যদের সঙ্গে এই উৎসবে যোগ দেয়। মৌসুমে কেনাকাটার যজ্ঞ পড়ে যায়। বিপণিবিতানগুলোতে হিড়িক পড়ে যায় মূল্য ছাড়ের। ফলে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকেন প্রবাসীরাও।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে এ দিবস পালন করে থাকে। কেউ কেউ দিনের পর দিন এমনকি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে এ দিবস উদ্যাপন করে। এ দিবসে বিদ্যালয়, গির্জা কর্তৃপক্ষ এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এগুলোতে বিশেষ ধর্মীয় সংগীতের আয়োজন থাকে। নাটকের ব্যবস্থাও থাকে। দরিদ্র ও গৃহহীনদের মধ্যে খাবার ও উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ দিন সরকারি দপ্তর ও সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। সবাই পরস্পরের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ায় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
রোমানদের সময়ে মধ্যশীতে এ উৎসবের আয়োজন হতো। এটা ছিল আরাম-আয়েশের সময়, যখন নানা আনন্দঘন অনুষ্ঠান হতো। সাধারণ মানুষকে উপহার দেওয়া হতো, বাচ্চাদের পুতুল আর বড়দের মোমবাতি। নিরক্ষরেখা থেকে দূরবর্তী দক্ষিণায়নে ২২ ডিসেম্বরের কাছাকাছি দিবস ২৫ ডিসেম্বরকে রোমান বর্ষ পুঞ্জিতে উৎসব দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইউরোপের স্ক্যান্ডেনেভীয় দেশগুলোতে ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে জানুয়ারির প্রথম পর্যন্ত ১২ দিন ধরে এ উৎসব চলে। এ রীতি আমেরিকার ক্রিসমাস উৎসবকেও প্রভাবিত করেছে।
তবে বাইবেলে যিশু জন্মদিনের কোনো সুনির্দিষ্ট দিবসের উল্লেখ করা হয়নি। এটাও স্পষ্ট নয় যে ২৫ ডিসেম্বরের সঙ্গে যিশুর জন্মের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা। যদিও এ দিবসকেই যিশুর জন্মদিবস হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। মধ্যযুগে ইউরোপে এ দিবস উদ্যাপন একটি রেওয়াজে পরিণত হয়। ১৮৭০ সাল থেকে আমেরিকায় ২৫ ডিসেম্বর ফেডারেল ছুটি হিসেবে পালিত হচ্ছেন। এ কারণে দিনটির গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।