ট্রাম্প-কোহেনের গোপন অডিও টেপ বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করছেন

মাইকেল কোহেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মাইকেল কোহেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের স্পর্শকাতর কথোপকথনের অডিও নিয়ে বিতর্ক যেন শেষ হচ্ছে না। গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে ওই অডিও টেপ ফাঁস করে সিএনএন। এরপর দুপক্ষই নিজেদের সাফাই গেয়ে ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এর মধ্যে ওই গোপন অডিও পরীক্ষা করছেন একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ।

গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানায়, একজন অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছে তারা। তিনি বিশ্লেষণ করে দেখবেন, এতে কী বলা হয়েছে আর কী বলা হয়নি। এ ছাড়া তিন মিনিটের ক্লিপ থেকে নতুন কোনো তথ্য থাকলে তাও খুঁজে বের করবেন তিনি।

২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে তৎকালীন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চাপা রাখতে এক মডেলকে অর্থ দিতে চেয়েছিলেন, যা ওই অডিওতে জানা যায়। সিএনএনের ‘ক্যুমো প্রাইম টাইম’ অনুষ্ঠানে কথোপকথনের টেপ প্রকাশ করা হয়।

ওই টেপে ট্রাম্প ও কোহেনকে বলতে শোনা যায়, কীভাবে অর্থ দিয়ে প্লেবয় ম্যাগাজিনের মডেলের মুখ বন্ধ রাখা যায়। ওই মডেল, ক্যারেন ম্যাকডুগালের সঙ্গে এক বছর আগে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সম্পর্কটি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন তিনি। ক্যারেন ম্যাকডুগালকে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার দিয়ে মুখ বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়। ক্যারেন ম্যাকডুগাল দাবি করেন, প্রায় ১০ মাস ধরে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। মেলানিয়া ট্রাম্প তাঁদের ছোট সন্তান জনকে জন্ম দেওয়ার তিন মাসের মধ্যেই ম্যাকডুগালের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ট্রাম্প।

ওই টেপ থেকে এটা নিশ্চিত, সে সময়ে ট্রাম্প ওই অর্থের বিনিময়ের বিষয়ে জানতেন। অথচ নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলেই জানান।

এদিকে ট্রাম্পের আইনি দল স্বীকার করেছেন, কথোপকথনে সম্ভাব্য কোনো অর্থ দেওয়ার বিষয়ে ছিল। তবে ওই লেনদেন অবৈধ নয়। আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি ওই টেপের বিষয়ে বলেন, ‘ওই অডিও টেপে কোনো অন্যায় নির্দেশ ছিল কি না, তার তথ্য নেই।’ এর আগে তিনি স্বীকার করেছিলেন, ওই অডিও ক্যারেনের তথ্যের অধিকার কিনে নেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হওয়া কথোপকথনের অডিওটি সিএনএনকে কোহেনের আইনজীবী ল্যানি ডেভিস সরবরাহ করেছেন। ২০১৮ সালের গোড়ার দিকে কোহেনের কার্যালয়ে তল্লাশির সময় ট্রাম্প-কোহেনের এই গোপন টেপ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের হাতে আসে। ওই টেপে কোহেন বলেন, ‘আমাদের বন্ধু ডেভিডের তথ্য ট্রান্সফার করার জন্য একটি কোম্পানি খুলতে হবে।’ পরে আরেক জায়গায় কোহেন বলেন, ‘আমাদের অর্থায়ন করতে হবে।’ তখন ট্রাম্প জানতে চান, ‘কিসের অর্থায়ন?’ এরপর ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘নগদে দিতে হবে।’ কিন্তু ট্রাম্প নগদে, না অন্য উপায়ে অর্থ দেওয়ার কথা বলছেন, বিষয়টি পরিষ্কার নয়। কারণ, কোহেনকে এ সময় বলতে শোনা যায়, ‘না, না।’

কথোপকথনে ‘নগদের’ বিষয়ে ট্রাম্প আসলে কী বলতে চেয়েছেন, তা-ই এখন আলোচনার মূল বিষয়। এই পর্যালোচনা করতে সিএনএনের নিয়োগ দেওয়া অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হলেন এড প্রিমিউ, যিনি ৩০ বছর ধরে এই বিষয়ে কাজ করছেন।

অডিওটি শোনার আগে এ বিষয়ে প্রিমিউকে কোনো ধারণা দেয়নি সিএনএন। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং কোনো কিছু না জেনে এর মর্ম উদ্ধারে কাজ শুরু করেন প্রিমিউ।

প্রিমিউ বলেন, ‘আমি সারা দিন ঘরে বসে অডিওটি শুনেছি।’ গতকাল সিএনএনের ‘ক্যুমো প্রাইম টাইমে’ এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিটি শব্দ শুনেছি। যা শুনেছি তা আমি লিখে নিয়েছি। আমি এই ঘটনার আগের কাহিনি কিছুই জানি না। আমার কাজের ক্ষেত্রে পক্ষপাতহীন হয়ে থাকাটাই মূল চাবিকাঠি। আমি যা পেয়েছি, সেটা আমি বিশ্বাস করি এবং তাই নিয়ে আমি এই অনুষ্ঠানে এসেছি।’ প্রিমিউ বলেন, অডিও টেপটি ওই কথোপকথনের একদম শেষের দিকের অংশ।

প্রিমিউ বলেন, ট্রাম্পের এই বিতর্কের বিষয়ে আগে জানতেন না। মঙ্গলবারে ফাঁস হওয়া এই ঘটনার বিষয়ে পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনগুলোও পড়েননি তিনি। তিনি অডিও টেপটি শুনে যা বুঝতে পেরেছেন, নগদে অর্থ দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প ‘না’ বলেননি। ওখানে ‘না’ বলার মতো কোনো শব্দ ছিল না। তবে প্রিমিউয়ের বক্তব্যের বিষয়ে জুলিয়ানি বলেন, অন্য কোনো বিশেষজ্ঞের মত নিলে হয়তো ভিন্ন উপসংহারে পৌঁছাতেন। এখানে ‘নগদ’ শব্দটি কোনো মানে বহন করে না, কারণ দুটো করপোরেশনের সঙ্গে কথোপকথন চলছিল।