বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন ২১ অক্টোবর

আমেরিকায় বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনকের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২১ অক্টোবর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রার্থীরাও অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার রেকর্ডসংখ্যক ২৭ হাজার ৫১০ জন ভোটার হয়েছেন। এসব ভোটার এবার ২১ অক্টোবরের নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।

গত ৩১ জুলাই এলমহাস্টে বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ১৯ ও ২০ আগস্ট বিকেল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সংগঠনের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র কেনা যাবে। ২৬ আগস্ট মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে। প্রার্থীদের কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে চাইলে ৩০ আগস্টের মধ্যে করতে হবে। চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে ৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সার্বিকভাবে এবার নির্বাচন পরিচালনা করতে প্রায় দুই লাখ ডলার খরচ হতে পারে।
এদিন সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তৃতা করেন নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস এম জামাল ইউ আহমেদ। এ সময় সাত সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে এ হাকিম মিয়া, কাওসারুজ্জামান কয়েস, মোহাম্মদ আর সরকার ও খোকন মোশাররফ উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের অন্য সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দেওয়ান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। এ ছাড়া সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকীসহ কার্যকরী পরিষদের অন্য কর্মকর্তা ও সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জামাল ইউ আহমেদ বলেন, ‘সোসাইটির গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনের তারিখ ও তফসিল নির্ধারণ করেছি আমরা। সে মোতাবেক বাংলাদেশ সোসাইটি ইনকের কার্যকরী কমিটি ২০১৯-২০২০ মেয়াদের নির্বাচন আগামী ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হবে ১৯ ও ২০ আগস্ট বিকেল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে ২৬ আগস্ট বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ৩০ আগস্ট বিকেল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৭টা থেকে রাত ৯টায় চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

জামাল ইউ আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। প্রতিটি কেন্দ্রে জাল আইডি প্রতিরোধে দুই স্তরে আইডি পরীক্ষার যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। জাল আইডি ব্যবহারকারীকে নিউইয়র্কের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হবে। যদি সম্ভব হয় তবে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে ভেতরে ও বাইরে সার্ভিল্যান্স ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোসাইটির কার্যকরী কমিটির ১৯টি পদের জন্য মনোনয়নপত্রের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সরবরাহকৃত তফসিল ও বাইলজ-এ বিস্তারিত দেখতে পাওয়া যাবে।

জামাল ইউ আহমেদ বলেন, সোসাইটির নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। উপস্থিত সাংবাদিকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভোট হবে মেশিনে। এ জন্য সর্বাধুনিক নতুন মেশিন খোঁজা হচ্ছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্র পাঁচটিই থাকবে। তবে ভেন্যু পরিবর্তন হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে ইসির সদস্যরা বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভেন্যু খুঁজতে গিয়ে আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ, ভেন্যু খুঁজতে গিয়ে অতীতের নির্বাচনের সময় কিছু অনিয়মের কথাও উঠে আসছে। ফলে অনেক স্কুল ভেন্যু দিতে চাচ্ছে না। অতীতে নির্বাচন কেন্দ্রে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে যা এখন উঠে আসছে। তবে সমস্যা থাকবে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেই মনোনয়ন ফি ধার্য করা হয়েছে।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য কত বাজেট হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে জামাল ইউ আহমেদ বলেন, ‘ধারণা করছি, প্রায় ২ লাখ ডলারের কাছাকাছি খরচ হবে। ২/১ দিনের মধ্যে ইসি সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের কাছে নির্বাচন খরচের বাজেট পেশ করবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকেই ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।’

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, প্রায় ১৫০ জনের মতো ডাবল ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে এবং সেগুলো মার্ক করা হয়েছে। ভোট দেওয়ার সময় একটিই যাতে ভোট হয়, তার জন্য নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে।’

ভোটার তালিকা হস্তান্তর: নির্বাচনের কমিশনের সংবাদ সম্মেলনের আগে সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল ইউ আহমেদের কাছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হস্তান্তর করেন। এর আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন। তাঁরা সুন্দরভাবে নির্বাচন শেষ করতে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদ সার্বিক সহযোগিতা দেবে।

এ সময় সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল রহীম হাওলাদার, সহসভাপতি আবদুল খালেক খায়ের, সহসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এম কে জামান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায়, সাহিত্য সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ নওশেদ হোসেন, কার্যকরী সদস্য আজাদ বাকির, আবুল কাশেম চৌধুরী ও সারোয়ার খান বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।