প্রশ্নোত্তরে আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসার বিস্তারিত

প্রশ্ন: আই-২০ কী এবং আমি কিভাবে সেটি পাব?
উত্তর: ফর্ম আই-২০ হলো একটি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রকাশিত একটি সরকারি ফর্ম, এফ-১ বা এম-১ ভিসা পেতে হলে একজন সম্ভাব্য অন-অভিবাসী শিক্ষার্থীকে যা পেতে হবে। ফর্ম আই-২০ গ্রহণের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে এবং এতে সেভিস আই-৯০১ ফি প্রদানের বিষয়ে, ভিসার জন্য আবেদন করার বিষয়ে বা ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার বিষয়ে ও আমেরিকায় প্রবেশাধিকার পাওয়ার বিষয়ে সব তথ্য দেওয়া থাকে। ফর্ম আই-২০-এর ওপরের ডানদিকে বারকোডের ঠিক নিচে শিক্ষার্থীদের সেভিস শনাক্তকরণ নম্বর থাকে। নয় অঙ্কের এই নম্বরটি ইংরেজি ‘এন’ বর্ণ দ্বারা শুরু হয়।

প্রশ্ন: শিক্ষার্থী ভিসার জন্য কত দ্রুত আবেদন করতে হয়?
উত্তর: আপনাকে আপনার আই-২০ পাওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার অন-অভিবাসী শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদন করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, আপনার আই-২০ ফর্মে উল্লেখিত ক্লাস শুরুর তারিখের সর্বাধিক ১২০ দিনের আগে শিক্ষার্থী ভিসা দেওয়া হবে না।

প্রশ্ন: আমি আমার ভিসা পেয়ে গেছি; আমার কবে ভ্রমণ করা উচিত?
উত্তর: আই-২০ ফর্মে উল্লেখিত কোর্স শুরুর নির্ধারিত দিনের ৩০ দিন আগেই কেবল আমেরিকায় প্রবেশ করা যায়। এটি কখন আপনার ভিসা প্রদান করা হয়েছে, তার ওপর নির্ভরশীল নয়।

প্রশ্ন: আমি যদি একটি ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আই-২০ পাই তাহলে কি হবে?
উত্তর: যদি আপনি আপনার সাক্ষাৎকার নির্ধারণের পর আই-২০ পান, তাহলে আপনি আপনার সাক্ষাৎকারের সময় নতুন আই-২০-এর বিষয়ে কনস্যুলার অফিসারকে অবশ্যই অবগত করবেন।

প্রশ্ন: আমি একজন এইচ-১বি হিসেবে কাজ করছিলাম এবং এখন এফ-১ হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আছি। শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন করতে আমাকে কি নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে?
উত্তর: না। আপনি একবার আমেরিকায় প্রবেশ করলে আপনাকে নতুন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে না। কারণ ভিসা শুধু আমেরিকায় প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হয়। আপনার স্ট্যাটাসের কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা জানার জন্য ইউএসসিআইএস ওয়েবসাইট দেখুন। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি দেশ ছেড়ে চলে যান, তাহলে আমেরিকায় ফিরে আসতে আপনাকে একটি শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন করতে হবে।

প্রশ্ন: একজন এফ-১ শিক্ষার্থী কি আমেরিকায় কাজ করতে পারে?
উত্তর: এফ ভিসার পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীরা অন-ক্যাম্পাস চাকরি করতে পারে। তবে তা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। শিক্ষার্থী স্ট্যাটাসে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর একজন আবেদনকারী ইউএসসিআইএস-এর অনুমোদনক্রমে অফ-ক্যাম্পাস চাকরির আবেদন করতে পারেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

প্রশ্ন: সেভিস ব্যবস্থা কাকে বলে? এটি কিভাবে আমাকে প্রভাবিত করবে?
উত্তর: স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (সেভিস)-এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে সব নতুন ও বিদ্যমান বিদেশি শিক্ষার্থী এবং বিনিময় পরিদর্শকদের এনরোলমেন্ট স্ট্যাটাস যাচাই করতে হয়। ভিসা অনুমোদন হওয়ার আগে শিক্ষার্থী ভিসার আবেদনকারীদের সেভিস মূল্য প্রদান করতে হবে। সেভিস ওয়েবসাইটে আপনি এই সংক্রান্ত আরও তথ্য জানতে পারবেন।

প্রশ্ন: যদি কোনো বিনিময় পরিদর্শক (এক্সচেঞ্জ) ভিসায় আমেরিকায় আসা ব্যক্তি আমেরিকায় থাকাকালে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পান বা ফর্ম আই-২০ পান, তাহলে তিনি কি তাঁর ভিসা স্ট্যাটাসকে শিক্ষার্থী ভিসায় পরিবর্তন করতে পারবেন?
উত্তর: যদি আপনি আমেরিকায় আইনতভাবে অন-অভিবাসী ভিসার সাহায্যে প্রবেশ করেন, যদি আপনার অন-অভিবাসী স্ট্যাটাস বৈধ থাকে, যদি আপনি আপনার স্ট্যাটাসের শর্তগুলো লঙ্ঘন না করেন এবং আপনি এমন কোনো কাজ না করেন, যাতে আপনি অযোগ্য বলে বিবেচিত হন, তাহলে আপনি আপনার অন-অভিবাসী ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার আবেদন করতে পারেন। এ বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য ইউএসসিআইএস ওয়েবসাইটটি দেখুন।

প্রশ্ন: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার বিকল্পগুলোর বিষয়ে আমি কোথায় বিস্তারিত জানতে পারব?
উত্তর: বিদেশে শিক্ষাগ্রহণের সিদ্ধান্ত অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত। এ জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ হতে পারে। আমেরিকায় পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট মার্কিন দূতাবাসে ‘এডুকেশন ইউএসএ কাউন্সেলিং’ বিভাগ। এই বিভাগটি আপনাকে সঠিক প্রোগ্রাম নির্বাচনে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে এডুকেশন ইউএসএ ওয়েবসাইট থেকে।

প্রশ্ন: সাক্ষাৎকারের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নেব?
উত্তর: শিক্ষার্থী ভিসার সাক্ষাৎকারটি মূলত একটি আলোচনা। এর মাধ্যমে কনস্যুলার অফিসার মূলত আপনি একজন প্রকৃত শিক্ষার্থী কিনা এবং এর ব্যয়ভার বহনের সামর্থ্য আপনার রয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চান। এ সাক্ষাৎকারের জন্য আপনার কোনো বক্তব্য প্রস্তুত করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই কোনো কিছু মুখস্থ করারও। আপনাকে শুধু ভাবতে হবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য ও এর ব্যয়ভার বহনের পরিকল্পনা নিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, শান্ত থাকুন, বিচলিত হবেন না। সঠিক ও সত্য তথ্য নিরূপণ করাই কনস্যুলার অফিসারের কাজ, আপনাকে হতাশ করা নয়।

প্রশ্ন: আমাকে সাক্ষাৎকারের সময় কী কী নিয়ে যেতে হবে?
উত্তর: শিক্ষাব্যয় বহনের সামর্থ্য রয়েছে মর্মে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র ইত্যাদি নিয়ে আসতে হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাস্তরে পাওয়া প্রশংসাপত্র, পরীক্ষার ফলাফল ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো আবেদনকারী ভিসা আবেদনের সঙ্গে জাল বা নকল কাগজপত্র দিলে তা তাদের আজীবনের জন্য আমেরিকার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা হারানোর কারণ হবে। তাদেরকে আমেরিকায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। শিক্ষাব্যয় বহনের সামর্থ্য না থাকলে এডুকেশন ইউএসএ ওয়েবসাইট থেকে আপনি বৃত্তি বা এ সম্পর্কিত বিভিন্ন উৎসের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধ কোনো রকম আইনি পরামর্শ নয়। এটি শুধু ইউএসসিআইএস ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত এ-সংক্রান্ত তথ্যের একটি সন্নিবেশ মাত্র।
লেখক: ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, নিউইয়র্ক প্রবাসী
সেল: (৯২৯)৩৯১-৬০৪৭;
ইমেইল: [email protected]

ভিসা সম্পর্কিত বার্তা

পরিবারভিত্তিক এবং চাকরিভিত্তিক ভিসা প্রদানের বার্ষিক সংখ্যা কংগ্রেস কর্তৃক সীমাবদ্ধ। এই ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নির্ধারিত হয় যদি তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখ হালনাগাদ থাকে ও ভিসার সংখ্যা বর্তমান থাকে। যদিও সম্ভাবনা আছে, অগ্রাধিকার তারিখের পরিবর্তন হতে পারে এবং সাক্ষাৎকারের সময় ভিসার সংখ্যা আর বর্তমান নাও থাকতে পারে। আপনার ক্যাটাগরির ভিসার সংখ্যা যদি বর্তমান না থাকে, তবুও আপনার সাক্ষাৎকার যথা সময়ে হবে, তবে আপনার ভিসা ততদিন পর্যন্ত ইস্যু হবে না, যতদিন পর্যন্ত অগ্রধিকার তারিখ হালনাগাদ হয় এবং নতুন ভিসার সংখ্যা বর্তমান হয়। সকল অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীগণ তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে (https://bit.ly/2EfaUuN) ভিসা বুলেটিন দেখতে পারেন।

মাস: আগস্ট ২০১৮

F1 : ০৮ মে ২০১১: (আমেরিকান নাগরিকদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F2A : ২২ জুলাই ২০১৬: (এলপিআর ব্যক্তিদের স্বামী বা স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
FX : ১ জুলাই ২০১৬: (F2A কেইসে যাদের অগ্রাধিকার তারিখ পুরোনো)
F2B : ২২ অক্টোবর ২০১১: (এলপিআর ব্যক্তিদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F3 : ১৫ জুন ২০০৬: (মার্কিন নাগরিকদের বিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F4 : ২২ ডিসেম্বর ২০০৪: (মার্কিন নাগরিকদের ভাই/বোন ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
E3 : চলতি: (দক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
EW : চলতি: (অদক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)