সিলেটীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির আহ্বান

বিশ্বজুড়ে সিলেটীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের আহ্বান জানিয়ে ২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে কানাডার টরন্টোর গ্র্যান্ড প্যালেস কনভেনশন সেন্টারে শেষ হলো চতুর্থ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন।
দুই দিনব্যাপী এই বিশ্ব সম্মেলনে ভারত, বাংলাদেশ, জার্মানি, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজার প্রতিনিধি কানাডার টরন্টোতে উপস্থিত হয়েছিলেন।
সিলেটী ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মানুষ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও এই সম্মেলন ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় টরন্টোর ৩৮০ বার্চমাউন্ট রোডে অবস্থিত গ্র্যান্ড প্যালেসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী মঞ্চে গভীর রাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন টরন্টোপ্রবাসী।

এই মহাসম্মেলনের আহ্বায়ক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। এই সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য আয়োজক সংস্থা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলন এবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত সিলেটীদের কাছে একটি মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর সভাপতি দেবব্রত দে তমাল বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যারা সিলেটী ঐতিহ্য ও ভালোবাসাকে জাগিয়ে রেখেছেন তাদের জন্য চতুর্থ বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের আয়োজন সার্থক হয়েছে। অসংখ্য মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন এবং সহযোগিতায় একটি অসাধারণ আয়োজন আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি।’
বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এবারের চতুর্থ বিশ্ব সম্মেলন প্রমাণ করল, সিলেটীরা আন্তর্জাতিক কমিউনিটি হয়ে উঠেছে। আমরা আজ থেকেই আগামী বছর আরও বড় আকারে বিশ্ব সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু করে দিলাম।’
বিশ্ব সম্মেলনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হয় বরাক মঞ্চে। তথ্যচিত্রগুলোর মধ্যে ছিল ইকবাল বাহার চৌধুরীর ‘আ হিরো অব লিবারেশন ওয়ার: এমএজি ওসমানী’, চাবাগানের জীবন নিয়ে ইংল্যান্ড প্রবাসী নির্মাতা মকবুল চৌধুরী ‘ব্ল্যাক লিফ অ্যান্ড নট এ পেনি, নট এ গান’।
সম্মেলন স্থলে ট্রেজার ১৯৭১-এর উদ্যোগে ‘স্মৃতিচিত্রে সিলেট’ শিরোনামে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়। ব্রিটিশ আলোকচিত্রী রজার গোয়েনের ছবিগুলোতে সত্তর দশকের প্রথমদিকে শহর ও প্রত্যন্ত সিলেটকে তুলে ধরা হয়েছিল। অন্যদিকে, আনিস মাহমুদের আলোকচিত্রে সাম্প্রতিক সিলেট ধরা পড়েছে।
দু দিনব্যাপী আয়োজিত সেমিনারের আলোচ্য বিষয়গুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধে সিলেট, ভাষা আন্দোলনে সিলেট, সাংবাদিকতায় সিলেট, শিল্প-সংস্কৃতিতে সিলেট, শিল্প-বাণিজ্যে সিলেট, পর্যটনে সিলেট, সিলেটের নাগরিলিপি, সুফি-দরবেশদের পুণ্যভূমি সিলেট, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসী সিলেটবাসীর ভূমিকা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে আলোচনায় গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও পরিবেশবিদেরা অংশ নেন।
জেনারেল ওসমানী মঞ্চে পরিবেশিত হয় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী নৃত্য, মালজোরা গান, বাউল সংগীত, ধামাইল নাচ, বিয়ের গান ইত্যাদি। বিশ্ব সিলেট সম্মেলনে সংগীত পরিবেশন করেন লন্ডনের হিমাংশু গোস্বামী, বাংলাদেশের আশিক, কালা মিয়া ও আমেরিকার তাজুল ইসলাম। এ ছাড়াও কানাডার স্থানীয় শিল্পীরা দুই দিনব্যাপী উৎসবে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
বিশ্ব সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও অন্টারিওর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাগ ফোর্ড। সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে যান টরন্টো নগরের মেয়র জন টোরি।