যৌন নির্যাতনের অভিযোগে কাঠগড়ায় কাভানা

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের জন্য বিচারপতি ব্রেট কাভানার মনোনয়ন নিশ্চিতের বিরুদ্ধে একজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। ক্যাপিটল হিল, ওয়াশিংটন ডিসি, ১৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের জন্য বিচারপতি ব্রেট কাভানার মনোনয়ন নিশ্চিতের বিরুদ্ধে একজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। ক্যাপিটল হিল, ওয়াশিংটন ডিসি, ১৭ সেপ্টেম্বর। ছবি: রয়টার্স

৩০ বছর আগে এক পার্টিতে অধ্যাপক ক্রিস্টিন লেসি ফোর্ডের ওপর ব্রেট কাভানা যৌন নিপীড়ন করেছিলেন—এই অভিযোগে মার্কিন সিনেটে শুনানি হবে আগামী সোমবার। সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান সিনেটর চাক গ্রাসলি এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কাভানা ও ফোর্ড উভয়েই আলাদাভাবে কমিটি সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেবেন।

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের নবম বিচারপতি হিসেবে মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্রেট কাভানার নিয়োগ নিশ্চিত করতে সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটিতে এই বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণের কথা ছিল। যৌন হামলার অভিযোগ ওঠায় সে ভোট গ্রহণ কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সিনেটের রিপাবলিকান সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, কাভানার নিয়োগ ঠেকাতে নোংরা রাজনীতিতে নেমেছেন ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু যৌন হামলার অভিযোগ উপেক্ষা করে সরাসরি ভোটে যাওয়ার বিপক্ষে শুধু ডেমোক্র্যাটরা নন, বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান নেতাও।

অধ্যাপক ফোর্ড গত জুলাই মাসে এক চিঠিতে ডেমোক্রেটিক সিনেটর ডায়ান ফাইনস্টাইনকে ৩০ বছর আগের সেই ঘটনার কথা সবিস্তারে জানিয়েছিলেন। তিনি গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ করেছিলেন, সে কারণে ফাইনস্টাইন সে অভিযোগ প্রকাশ করেননি। কিন্তু গত সপ্তাহে ফোর্ড নিজে ওয়াশিংটন পোস্টকে ঘটনাটি জানালে ফাইনস্টাইন বিষয়টি তদন্তের জন্য এফবিআইয়ের কাছে ফোর্ডের চিঠিটি হস্তান্তর করেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন পক্ষ থেকে ভোট গ্রহণ পেছানোর দাবি ওঠে।

হোয়াইট হাউস প্রথমে কাভানার মনোনয়ন ও ভোটের ব্যাপারে পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করলেও গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে উভয় পক্ষের কথা শোনার পক্ষে মত দেন। তাঁর এই বক্তব্যের পরেই কাভানা ও ফোর্ডকে কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে আহ্বান জানান গ্রাসলি। তাঁরা দুজনেই এই শুনানিতে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের জন্য বিচারপতি ব্রেট কাভানার নাম ঘোষণার পর তাঁর বক্তব্য শুনছেন। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের জন্য বিচারপতি ব্রেট কাভানার নাম ঘোষণার পর তাঁর বক্তব্য শুনছেন। ছবি: রয়টার্স

অধ্যাপক ফোর্ডের অভিযোগ ও সিনেট কমিটির এই শুনানির সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর আগে আরেক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে। ১৯৯১ সালে অনিতা হিল একটি কলেজের অধ্যাপনায় নিযুক্ত ছিলেন। ১০ বছর আগে ফেডারেল চাকরি কমিশনের প্রধান ক্লারেন্স টমাসের সহকারী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় যৌন হয়রানির শিকার হন, অনিতা হিল এই অভিযোগ উত্থাপন করলে সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটির এক উন্মুক্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতে ছিল। এই কমিটির প্রধান হিসেবে সিনেটর জো বাইডেন—পরবর্তী সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট—ও কমিটির পুরুষ সদস্যরা অনিতা হিলকে অত্যন্ত কঠোর ও পক্ষপাতমূলক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ সত্ত্বেও উভয় দলের সমর্থনে ক্লারেন্স টমাস সে সময় বিচারপতি হিসেবে আজীবন নিয়োগ লাভ করেন। জো বাইডেন পরে বলেছেন, অনিতার প্রতি তিনি সুবিচার করেননি।

সেই একই নাটকের পুনরাভিনয় হতে যাচ্ছে, কিন্তু এখন সময় সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে সময় মার্কিন সিনেটে মোট নারী সিনেটরের সংখ্যা ছিল মাত্র দুই, এখন সে সংখ্যা ৩২। তার চেয়েও বড় কথা, ক্ষমতাবান পুরুষদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধ এখন এক জোরালো আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ‘মি টু’ বা ‘আমিও যৌন হয়রানির শিকার’—এই নামে পরিচিত আন্দোলনের ফলে হলিউড থেকে রাজনীতি, নানা ক্ষেত্রের একাধিক রাঘববোয়াল চাকরি হারিয়েছেন, কেউ কেউ মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। একই অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ডেমোক্রেটিক সিনেটর আল ফ্রাঙ্কেন। যৌন হামলা অথবা হয়রানির অভিযোগ এখন হালকা ভাবে নেওয়া আর সম্ভব নয়।

দুই মাস পরে মার্কিন কংগ্রেসের জন্য যে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে কথাও দুই প্রধান দলকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। এই নির্বাচনে নারীদের ভোট একটি প্রধান নির্ধারক হিসেবে কাজ করবে, এ কথা সবাই মানেন। সম্ভবত সে কথা বিবেচনায় রেখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যিনি নিজে একাধিক যৌন আগ্রাসনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন, তিনিও অধ্যাপক ফোর্ডের অভিযোগ এ কথায় খারিজ করার বদলে উভয়ের কথা শোনার পক্ষে মত দিয়েছেন।