হ্যারিকেন মারিয়া, পুয়ের্তোরিকো ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ

নিউইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ারে বৃহস্পতিবার বক্তৃতা করেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ। ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ারে বৃহস্পতিবার বক্তৃতা করেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ। ছবি: সংগৃহীত

এক বছর আগে পুয়ের্তোরিকোর ওপর দিয়ে যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়, তা নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ারে এক সংহতি জমায়েতে ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন ‘তারকা’ আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ মারিয়ার ছোবলে নিহত পুয়ের্তোরিকোবাসীর সংখ্যা কম করে দেখানোর জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এই দ্বীপাঞ্চলের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবি নতুন করে তুলেছেন। ‘আমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করব’, বিপুল হর্ষধ্বনির মাঝে ঘোষণা করেন ওকাসিও-কর্তেজ।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, পুয়ের্তোরিকোতে মার্কিন সরকারের চমৎকার ত্রাণ কাজের জন্য জীবন ও সম্পদের ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। এক টুইটে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের পরপর তিনি যখন সেই দ্বীপ সফর করেন, তখন মোট মৃতের সংখ্যা ৬ থেকে ১৮-র মধ্যে সীমিত ছিল। পরে এই সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। অথচ ডেমোক্র্যাটরা তাঁকে নিন্দা করার জন্য মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। ট্রাম্প দাবি করেন, পুয়ের্তোরিকোতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ত্রাণকাজের সাফল্য বিপুল অথচ তা স্বীকৃতি পায়নি।

পুয়ের্তোরিকোর প্রশাসন ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রাথমিক হিসাবে মোট মৃতের সংখ্যা ৬৪ বলে জানিয়েছিল। বিভিন্ন মহলে এই সংখ্যার প্রতিবাদ জানানো হলে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয় এক সমীক্ষা পরিচালনা করে। গত মাসে প্রকাশিত সমীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে, মারিয়ার ফলে মোট নিহত মানুষের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। পুয়ের্তোরিকোর গভর্নর জানিয়েছেন, এই সংখ্যাই তাঁরা সরকারি হিসাব বলে মেনে নিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, এক বছর অতিবাহিত হলেও মারিয়ার ছোবল কাটিয়ে ওঠা তাঁদের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি। এখনো সব জায়গায় বিদ্যুৎ আসেনি, স্কুলঘরের মেরামত শেষ হয়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য আগের পর্যায়ে ফিরে যায়নি। বাধ্য হয়ে এলাকাটির ১০ শতাংশের অধিক বাসিন্দা দেশ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছে।

আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করতেজ অভিযোগ করেন, পুয়ের্তোরিকোবাসীর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব ঔপনিবেশিক শাসকসুলভ। দীর্ঘ সোয়া শ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপটির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে, কিন্তু এর নাগরিকদের কল্যাণের প্রতি কোনো মনোযোগ দেয়নি। ওকাসিও-করতেজ বলেন, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই দ্বীপটির সমস্যা দূর হবে না। মার্কিন সরকার এখনো পুয়ের্তোরিকার মানুষদের ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।

মাত্র ২৮ বছর বয়স্ক ওকাসিও-করতেজ নিজে পুয়ের্তোরিকো পিতা-মাতার সন্তান। নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী এই নবাগত রাজনীতিক নিজেকে একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচিত করাতে ভালোবাসেন। ছয় মাস আগেও তিনি ব্রঙ্কসের একটি রেস্তোরাঁয় পরিচারিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জুনে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের বাছাইপর্বের প্রতিযোগিতায় ওকাসিও-কর্তেজ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রবল ক্ষমতাধর কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রলিকে পরাজিত করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। দলের প্রগতিবাদী সদস্য হিসেবে পরিচিত ওকাসিও-কর্তেজ ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ও বিনা মূল্যে শিক্ষার দাবি তুলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।