আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি অনুসরণীয়

অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে চতুর্থ বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়
অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে চতুর্থ বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়

কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ৪ অক্টোবর রাতে চতুর্থ বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। হাইকমিশনের সভাকক্ষে আয়োজিত মেলায় স্থানীয় সাংসদ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।

মিশনের কাউন্সেলর ফারহানা আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠান প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নৈশভোজ ইত্যাদি পর্বে সাজানো ছিল।

অনুষ্ঠানের আলোচকদের ফুল দিয়ে বরণ করেন হাইকমিশনের প্রথম সচিব অপর্ণা রাণী পাল। অনুষ্ঠানের শুরুতে সাম্প্রতিক সময়ে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যুগান্তকারী ও অনুসরণীয় অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তথ্যবহুল এসব প্রামাণ্যচিত্র উপস্থিত অতিথিদের মাঝে সমাদৃত হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য দেন। অন্টারিও প্রদেশের ন্যাপিয়ান থেকে নির্বাচিত সাংসদ চন্দ্রা আরিয়া তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয় তুলে ধরে বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন জানান। তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতিকে অন্যান্য দেশের জন্য অনুসরণীয় বলে উল্লেখ করেন। বিশেষত, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সফলতার কথা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্রগতিরও প্রশংসা করেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। তিনি কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা করে বাংলাদেশের চলমান অগ্রগতির ধারা বেগবান করতে তাদের অবদানের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক নিপা ব্যানার্জি তাঁর উপস্থাপনায় বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রযাত্রার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

স্থানীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক গিলিয়ান ফ্রস্ট তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ ও কানাডার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে ও টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের অগ্রগতির জন্য অভিনন্দন জানান। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক জ্যানেট ডারনো বাংলাদেশের সামাজিক সূচকের অগ্রগতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। কানাডার বাণিজ্য সহজীকরণ কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক স্টিভ টিফম্যান ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিকাশ এবং এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি এসব ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এরপর কানাডার সাক্সাচুয়ান প্রদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারি কনসাল রব নরিস বক্তৃতা করেন। তিনি সাক্সাচুয়ান প্রদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিশদ বিবরণ দেন এবং এ প্রদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রশংসা করেন।

কানাডা নিবাসী শিক্ষাবিদ মঞ্জুর চৌধুরী বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচির সাফল্যের বর্ণনা করে তৃণমূল পর্যায়ে তার প্রসারের ওপর আলোচনা করেন।

হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) মিয়া মো. মাইনুল কবির একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রজেকশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্ধারিত সময়ের আগেই সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতির ওপর আলোকপাত করেন। প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) মো. শাকিল মাহমুদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও বাংলাদেশ-কানাডা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিসংখ্যানসহ বাংলাদেশে ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উন্নয়নের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র পাওয়ার পয়েন্ট প্রজেকশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্য, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও বাংলাদেশ-কানাডার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক ছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকটে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের বিশদ বর্ণনা দেন। তিনি এ অনুষ্ঠানকে সার্বিকভাবে সফল করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং বর্তমান সরকারের গৃহীত ২০২১ ও ২০৪১ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে কানাডা সরকার ও কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

আলোচনা পর্বের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ পর্বে হাইকমিশনের কাউন্সেলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) মো. শাখাওয়াত হোসেন, কাউন্সেলর ফারহানা আহমেদ চৌধুরী ও কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি শিল্পী ডালিয়া ইসলাম অংশ নেন। সবশেষে অতিথিদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।