সা ব ও য়ে র ছ য় টি ক বি তা

কবিতার চর্চা আমাদের দেশের তুলনায় আমেরিকায় কম কি বেশি সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে নিউইয়র্কে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে লোকজন যেভাবে চলতে চলতে বই পড়ে, তা থেকে এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে যে ,এখানে পাঠক সংখ্যা বেশ ভালো। সেই সঙ্গে অনেকেই মোবাইল ফোন কিংবা আইপ্যাডে পড়ছেন আমাজনের কিন্ডল অ্যাপ থেকে। আবার পাঠ করার মতো কবিতাও সেঁটে দেওয়া আছে ‘সাবওয়ে’ মানে নিউইয়র্কের পাতালরেলের দেয়ালে। সেখান থেকে নেওয়া আমেরিকার বিখ্যাত ছয় কবির ছয়টি কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করা হলো—

পাতালরেল
মূল কবিতা: সাবওয়ে
বিলি কলিন্স

দু’কানে গানের ছন্দে বিভোর অথবা
গল্পের মুগ্ধতায় হারিয়ে যাওয়া বই হাতে
যে তুমি দ্রুত পাতালে পাখা মেলে উড়ে উড়ে চল;
মনে রেখ একদিন এখানে নেমে এসেছিল কেউ,
গভীর আঁধারে দুর্ভেদী পাথরে ছোট্ট একটা গর্ত নির্মাণ করবে বলে।
অগভীর সেই গর্ত থেকে মেদে-ঘামে আর প্রহত শ্রমের তিতিক্ষায় গড়ে উঠেছে তোমার পথ।

এক সময় এখানে ছিল, শুধু দুর্মর পাথর আর সীমাহীন নিরেট আঁধারে বিলীন জীবন।
সুড়ঙ্গ পেরিয়ে আলোর নাগাল পেতেই স্মরণ করো, তাদের অমেয় সেই উৎসর্গের কথা।

উদগ্র বাসনার চিরকুট
মূল কবিতা: নোটস অন লংগিং
টিনা চ্যাঙ

বৃষ্টির পর আজকের এই রাত
সুস্বাদু এক গন্ধে আবিষ্ট।
হাঁসের উপাদেয় হাড়, ভাতের মধ্যে ডুবে থাকা
ডিমের আহত অংশ।
কোনায় একটি দোকান চাবি বানানোর,
যে চাবি দরজা খোলে মানুষের।
দরজার ওপারে নিষ্প্রভ কক্ষ। কক্ষটি ধারণ করে আছে
ডাইনিং টেবিলে বসা চার থেকে ছয়জনের
একটি পরিবার। সেই পরিবারে আছে একজন মা।
বিশাল পাত্রে পরিবেশন করছে সিজলিং ফ্লাউন্ডার সবার জন্য।
আর সাধারণ সেই মুখগুলো থেকে আচমকা
আলোর চঞ্চল দ্যুতি হয়ে, ধ্বনিত হচ্ছিল কী অসাধারণ গান!

ভূমি
মূল কবিতা: পোয়েম
চার্লস সিমিক

কেমন যে আছি, এই কথাটিই আমি
প্রতিদিন সকালবেলা ভুলে যাই।
দিগন্তে নির্মোহ দৃষ্টিতে যখন শহরের
ধূসর আকাশ দেখি।
একাকী অচেনা লাগে, যেন আমি কারও নই।

তারপর মনে পড়ে যায়, আমার জুতোর কথা
কীভাবে পরতে হতো
কতটুকু নতজানু হয়ে বাঁধতে হতো ফিতে, শুধু
অতি আপন ভূমিকে দেখব বলে!

সুন্দরীর স্বগতোক্তি
মূল কবিতা: এ স্ট্রেঞ্জ বিউটিফুল উইমেন
মার্লিন নেলসন

একরাতে আয়নায় অপরিচিত এক
সুন্দরীর সাথে দেখা।
তাকে বললাম— এই,
কী করছ তুমি এখানে?
উত্তর পেলাম আমি তার,
একই প্রশ্নে।


লুকোচুরি
মূল কবিতা: হাইড-অ্যান্ড- সিক ১৯৩৩
গ্যালওয়ে ক্যানয়েল

একদিন আমি ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ নামের
খেলা খেলছিলাম,
খেলতে খেলতে বাড়ি ফেরার সময় হলে
খেলা শেষ না করেই
ফিরে যায় বাকিরা যে যার মতো!
ভুলে যায়, আমি যে লুকিয়ে আছি তখনো ওদেরই জন্য।
খেলার নিয়ম সুবোধ শিশুর মতো আটকে রাখে আমাকে।

চারদিকে বিভ্রান্তিকর সন্ধ্যার হাত;
আমাকে বাড়ি ফেরার পথ দেখিয়েছিল
আকাশের চাঁদ!

তোমার প্রতি আমার কথামালা
মূল কবিতা: মাই ওয়ার্ডস টু ইউ
জিন ভ্যালেনটিন

স্কার্ফের প্রতিটি সেলাই, তোমার জন্য
আমার নীরব কথামালা।
আমি এর শেষ চাই না কখনো।
হয়তো বা অব্যক্ত কথাগুলো নকশি কাঁথার
নিপুণ বুননে তোমাকে জড়িয়ে রবে
আবারও আকুল উষ্ণতায় এখানে;
ভালোবাসা যায়নি কোনোখানে