সোসাইটির অর্থের গচ্চা, মামলার দায়ভার কার?

বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্‌কের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের ওপর আদালত ১৮ অক্টোবর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। ফলে ২১ অক্টোবর নির্বাচন হয়নি। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ পড়েছে ৩০ অক্টোবর। সোসাইটির নির্বাচন কবে হতে পারে—এদিন বিষয়টি হয়তো জানা যেতে পারে। তবে নির্বাচনের ভাগ্য যে ঝুলে গেছে, সেটি বাংলাদেশি জনসমাজের কাছে অনেকটা পরিষ্কার। নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সোসাইটিকে এক লাখ ডলারের বেশি গচ্চা দিতে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে সোসাইটির ব্যয় হওয়া বিপুল অর্থের দায়ভার কার।

সোসাইটির নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী রব-রুহুল ও নয়ন-আলী প্যানেল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্যানেল দুটি একে অন্যকে দায়ী করে সভা-সমাবেশ করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরী পরিষদ ও নির্বাচন কমিশন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, সোসাইটির গঠনতন্ত্র ও বাই লজ অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ, স্বাধীন ও পক্ষপাতহীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।
বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনে নয়ন-আলী প্যানেলের দুজন সদস্য প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এই দুই সদস্যপ্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং বিপক্ষ প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবিতে ১৮ অক্টোবর নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কুইন্সের শরণাপন্ন হন। নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আদালত নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিলে পর দিন ১৯ অক্টোবর সোসাইটির পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। আদালত ৩০ অক্টোবর মামলার নতুন তারিখ ধার্য করেছেন।
আদালতে সোসাইটির নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন প্রবাসীরা সোসাইটি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না। তা ছাড়া মামলা নিয়ে সোসাইটি বড় অঙ্কের বাড়তি খরচের মুখে পড়ছে।
সোসাইটির নির্বাচন বিষয়ে প্রথম আদালতের শরণাপন্ন হন সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা ওসমান চৌধুরী। তিনি কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করেন (ইনডেক্স নম্বর ৭৮৫০/২০১৮। ওসমান চৌধুরীর মামলা নিষ্পত্তি হতে না হতেই বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক ও নির্বাচন কমিশনের প্রধান এস এম জামাল ইউ আহমেদ এবং সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদকে বিবাদী করে ১৮ অক্টোবর কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন (ইনডেক্স নম্বর ৭৮০৭/২০১৮) আলী আকবর, জি আর চৌধুরী ও শফিকুল ইসলাম নামের তিন সদস্য। এদের মধ্যে দুজন নয়ন-আলী প্যানেলের সদস্য প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়নপত্রে ত্রুটির কারণে তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল।
সোসাইটির নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় ইতিমধ্যেই সোসাইটির তহবিল থেকে ৬০ হাজার ডলারের মতো ব্যয় হয়ে গেছে। এই তথ্য জানিয়েছেন সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল ইউ আহমেদ জনি।
রব-রহুল প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আজিমুর রহমান বুরহান বলেন, ‘নির্বাচনের দুদিন আগে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বন্ধ করতেই আদালতের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। তারা রব-রহুল প্যানেলের বিজয় দেখেই মামলার আশ্রয় নিয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সব প্রস্তুতি ছিল এবং এ জন্য ইতিমধ্যেই বিপুল অর্থও ব্যয় হয়েছে।’
অন্যদিকে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্ন খাতে ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক ডলার ব্যয় হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ভোটারদের কাছে ফার্স্ট ক্লাস মেইলে চিঠি পাঠানো বাবদ প্রায় ৩০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নয়ন-আলী প্যানেল নির্বাচন করার সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মামলার তাঁদের প্যানেল জড়িত নয়।
সোসাইটির নির্বাচনে দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন এক প্রতিবাদ সভায় মামলাবাজ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার এবং সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ওই মহল আমার বিজয় ও তাদের ভরাডুবি ঠেকাতে মামলার আশ্রয় নিয়েছে।’
সোসাইটির নির্বাচনে ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে এমন অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, তাদের অনুমতি ও স্বাক্ষর ছাড়াই একটি প্যানেলের পক্ষ থেকে তাদের ভোটার করা হয়েছে। চিঠির মাধ্যমে তারা ভোটার হয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন। বিষয়টির সুষ্ঠু সুরাহা না হলে তারাও আদালতে প্রতারণার মামলা করতে পারেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
আবার একাধিক ভোটার নির্বাচন নিয়ে মামলার ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, সোসাইটি নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার নেতৃবৃন্দের নেই। সোসাইটির ইতিহাসে এত বিপুলসংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ কমিউনিটিতে উৎসবের আমেজ তৈরি করেছিল। কিন্তু একটি মামলার কারণে উৎসব মাটি হয়ে গেল। কমিউনিটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হল।
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এতে দুটি প্যানেলসহ কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদে মোট ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিউইয়র্কের পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতিও নিয়েছিল।