বাবা-মাকে খুন, দোষী সাব্যস্ত বাংলাদেশি যুবক

মা-বাবাকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান হাসিব বিন গোলাম রাব্বি। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান্তা ক্লারা কাউন্টির হল অব জাস্টিসে দীর্ঘ এক মাস ধরে শুনানির পর গত ২৫ অক্টোবর তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন আদালত।

সান হোসে ডিস্ট্রিক্টে মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন হাসিব। ২০১৬ সালে নিজ বাড়িতে মা-বাবা দুজনকেই হত্যা করেন তিনি। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর হাসিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারপর তাঁকে সান্তা ক্লারা কাউন্টি জেলে পাঠানো হয়। ২৫ অক্টোবর দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণার সময় ২৪ বছর বয়সী হাসিবের মধ্যে কোনো ভাবাবেগ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদপত্র মারকারি নিউজ। ১৬ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করবেন আদালত। তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে, যেখানে কোনো প্যারোলের সুযোগ থাকবে না।
আদালতে হাসিব নিজেই নিজের পক্ষে আইনি লড়াই চালান। তিনি তাঁর ১৭ বছর বয়সী ছোট ভাই ওমরের ওপর মা-বাবাকে হত্যার দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। অবশ্য, ২০১৬ সালে গ্রেপ্তারের পরপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাসিব জানিয়েছিলেন, এক অপরিচিত লোক তাদের বাড়িতে এসে তাঁকে তাঁর মা-বাবাকে হত্যা করতে বাধ্য করে।

এক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়া ওয়েস্ট জানায়, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল হাসিব তাঁর মা-বাবাকে হত্যা করেন। হত্যার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। বেশ কিছু দিন পর কয়েকজন আত্মীয় তাঁদের বাড়ি এলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এর পর হাসিব ও তাঁর ছোট ভাই ওমরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওমর জানায়, মা-বাবার মৃতদেহ দুটি রাখা হয়েছিল গ্যারেজে। সেখান থেকে কোনো রক্তের ধারা যেন বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে তার ভাই তাকে বলেছিল।
পরে বয়স বিবেচনায় ওমরকে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে প্রমাণের অভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়। সবকিছু বিবেচনা করে ওমরকে কিশোর সুরক্ষা সংস্থায় পাঠানো হয়।
যদিও আদালতে দেওয়া বক্তব্যে হাসিব তাঁর ভাই সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলেছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ওমর মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি, যে কিনা তাদের মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী। হত্যাকাণ্ড ওমর ঘটালেও তাঁকে বাধ্য করেছে স্বীকারোক্তি দিতে।
তবে তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, মানসিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে বরং হাসিবের। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলার পাশাপাশি তার সঙ্গে বিভিন্ন সমাজবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। শিকার তার খুবই প্রিয় এবং তার একটি বন্দুকও রয়েছে।
সান্তা ক্লারা কাউন্টির ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলালেহ কিয়ানেরসি মারকারি নিউজকে বলেন, ‘একটি অপরাধের যথাযথ বিচার হওয়ায় আমরা সবাই সন্তুষ্ট। কিন্তু সত্য হচ্ছে, এক দম্পতি মারা গেছে, তাদের এক সন্তান এতিম হয়েছে এবং অন্যজন হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এখানে কেউই জিতল না।’